ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্রুত ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৪ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে দ্রুত ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন চায় বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে খুব দ্রুত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় বাংলাদেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোন ধরনের সময়ক্ষেপণ করতে রাজি নয়। কোন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে তা নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানায়। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচির দফতরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ের ঢাকা সফরের মধ্যে দিয়ে সোমবার ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনে সম্মত হয়েছে উভয় দেশ। তবে এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ কিভাবে গঠন করা হবে, কি কাজ করবে সে বিষয়ে উভয় দেশের পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। এই গ্রুপে কোন লেভেলের কর্মকর্তা থাকবেন, এর কমিটির সদস্য কত হবে, সেটা নিয়ে উভয় পক্ষ দ্রুত আলোচনায় বসবে। সূত্র জানায়, মিয়ানমার যেহেতু ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে রাজি হয়েছে, সে কারণে বাংলাদেশ এই গ্রুপ গঠনে সময়ক্ষেপণ করতে চায় না। কেননা সময়ক্ষেপণ করলে বিষয়টি ঝুলে যেতে পারে। বাংলাদেশ চাইছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করতে। আর ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের মধ্যে দিয়েই রোহিঙ্গা ফেরত প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হবে। এর আগে ২০১৪ সালের ৩১ আগস্ট ঢাকায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের অষ্টম বৈঠকে বাংলাদেশ থেকে দুই হাজার ৪১৫ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় মিয়ানমার। সে সময় রোহিঙ্গা ফেরাতে উভয় পক্ষ জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছিল। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে গঠিত ওই কমিটির সদস্য ছিলেন ২০ জন। বাংলাদেশের ছিলেন ১০ সদস্যের একটি কমিটি। আর মিয়ানমারের পক্ষের ছিলেন ১০ সদস্যের একটি কমিটি। সেবার কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু করতেই অনেক সময় ব্যয় হয়েছিল। বিশেষ করে মিয়ানমার পক্ষ তাদের কমিটি গঠনে বিলম্ব করে। সেই অভিজ্ঞতা সামনে রেখেই বাংলাদেশ এবার আর সময়ক্ষেপণ করতে রাজি নয়। সূত্র জানায়, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচির দফতরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ের ঢাকা সফর শেষ হওয়ার পরেই ওয়ার্কিং কমিটি দ্রুত গঠনে মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ। উভয় পক্ষ মিলে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা ১০-১৫ জন হতে পারে বলে একটি সূত্র জানায়। ২০১৪ সালে উভয় দেশ যে ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করেছিল, সেটা ছিল ছোট পর্যায়ে। কেননা তিন বছর আগের সেই পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি এক নয়। বাংলাদেশে এখন যে হারে রোহিঙ্গা নাগরিক অনুপ্রবেশ করেছেন, অতীতে কোন সময়েই এত বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেননি। এছাড়া রোহিঙ্গা ফেরত নিয়ে ওয়ার্কিং কমিটি গঠনের অভিজ্ঞতাও রয়েছে উভয় দেশের। তাই অতীত অভিজ্ঞতা সামনে রেখেই দ্রুত ওয়ার্কিং কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় যেতে চায় বাংলাদেশ। রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে গত ২৫ আগস্ট থেকে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে। রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। মিয়ানমারের নেত্রী সুচি সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই হিসেবে বর্ণনা করলেও জাতিসংঘ একে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি দেখতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে সেখানে যেতে দিচ্ছে না দেশটির সরকার। এমনকি সেখানে আইসিআরসি ছাড়া অন্য কোন সংস্থাকে ত্রাণ দিতেও বাধা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের ওপর যে সহিংসতা হয়েছে তা মধ্যাঞ্চলেও বিস্তৃত হতে পারে এবং সেখানে আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে সোমবার রাখাইন এলাকায় মিয়ানমারে বিভিন্ন মিশনের ২০ জন কূটনীতিক ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে বিদেশী কূটনীতিকরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে সেখানে মানবিক বিপর্যয় দেখতে পেয়েছেন।
×