ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিনহা ক্যান্সারসহ নানান রোগে আক্রান্ত- আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৪ অক্টোবর ২০১৭

সিনহা ক্যান্সারসহ নানান রোগে আক্রান্ত- আইনমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ছুটিতে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারসহ নানা রোগে আক্রান্ত তাই ছুটি নিয়েছেন। আমার মনে হয় ওনারা (বিএনপি) ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছিলেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ব্যাহত করার চেষ্টা করেছিলেন। এখন সেই চেষ্টা সফল হবে না। সে জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। অন্যদিকে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতিকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে মন্তব্য করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, প্রধান বিচারপতির এই আকস্মিক ছুটি সবাইকে মর্মাহত করেছে। এটা বিচারব্যবস্থার জন্য দুর্ভাগ্যজনক। এটা কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়, সরকারের জন্যও নয়। তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে তারা রাষ্ট্রপতির সাক্ষাত চাইবেন। মঙ্গলবার বিকেলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। বুধবার বিকেল চারটায় আবারও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে একটি বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, সভায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ ও জমির উদ্দিন সরকার, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং এম কে রহমান, মইনুল হোসেন প্রমুখ। এর আগে সকালে আইনজীবী সমিতির জরুরী সভা শেষে জয়নুল আবেদীন প্রধান বিচারপতিকে চাপ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির ১৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতি-সম্পাদকসহ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদেই রয়েছে বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারে আক্রান্ত ॥ আইনমন্ত্রী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। রাষ্ট্রপতির কাছে লেখা চিঠিতে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। মঙ্গলবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির এক মাসের ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি ‘নজিরবিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা বলে দিলেন, এটা নজিরবিহীন। মানুষ অসুস্থও হতে পারবে না? এর আগে যেহেতু কেউ হয়নি এখনও হতে পারবে না? এরকম কথা যদি ওনারা বলে থাকেন, ওনাদের অবাস্তব কথার জবাব দেয়ার জন্য আমি এখানে বসিনি।’ তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি তার পত্রে লিখেছেন তিনি ক্যান্সার ও নানাবিধ রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সেগুলো সম্পূর্ণ সারেনি। ওনার বিশ্রামের প্রয়োজন। সে জন্য উনি এক মাসের ছুটি নিয়েছেন। এখন নিয়মটা কী, বিচার বিভাগ স্বাধীন হওয়ার পর প্রধান বিচারপতি নিজের ছুটি নিজে নেন। এটা কারও কাছ থেকে এ্যাপ্রুভ করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যেহেতু তিনি ছুটিতে যাবেন, ছুটিতে থাকাকালে আরেকজন প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন। সে কারণে তিনি রাষ্ট্রপতিকে তার ছুটির ব্যাপারে অবগত করেন।’ তিনি বলেন, ওনারা (বিএনপি) এত স্পেকুলেশন (জল্পনা) কেন করছেন তা আমি একটু ভাবি। আমার মনে হয় ওনারা (বিএনপি) ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছিলেন, গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ব্যাহত করার চেষ্টা করেছিলেন। এখন সেই চেষ্টা সফল হবে না। সে জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন। কবে নাগাদ রিভিউ করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যবেক্ষণ চলছে। আমরা রিভিউ করব। কিন্তু আমরা জাজমেন্ট নিবিড়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর রিভিউ দাখিল করব। এর কারণ এটা ৭৯৯ পৃষ্ঠার একটা জাজমেন্ট। এটা রিভিউ করা একদিনের ব্যাপার নয়। সুপ্রীমকোর্ট বার রাজনৈতিক কার্যালয় সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতিকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে মন্তব্য করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেন, আপনারা জানেন। এর আগে কাদের মোল্লার পরিবারকে নিয়ে বার এ্যাসোসিয়েশন মিটিং করেছে। অনেকগুলো যুদ্ধাপরাধের মামলার ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য করা হয়েছে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে। এই সমস্ত প্রচেষ্টা হীন প্রচেষ্টা। মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এই উপমহাদেশে হাইকোর্ট প্রতিষ্ঠার পর থেকেই যখন অটাম ভেকেশন (শরৎকালীন অবকাশ) হতো অর্থাৎ সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের যে ছুটি সে ছুটির পরে আইনজীবীদের সঙ্গে বিশেষ করে এ্যাটর্নি জেনারেল, বার এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে বিচারপতিরা সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হতেন। তিনি বলেন, এরই আলোকে অনেকদিন বন্ধের পর নতুন করে কোর্ট শুরু হয়েছে। আমরা আইনজীবীদের নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলাম। সাড়ে ১০টা থেকে শুরু হয়ে এ মিলনমেলা চলে ১টা পর্যন্ত। চাপ প্রয়োগ করে প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে আইনজীবী সমিতির সভাপতির এমন বক্তব্যের বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আইনজীবী সমিতি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের কুক্ষিগত হয়ে পড়ার কারণে এ ধরনের কথা বলে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছে। একজন বা দুইজন বিচারপতির জন্য এ দেশে কোন দিনই বিচার বিভাগের কাজ বন্ধ থাকেনি।
×