ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় মিয়ানমারের মন্ত্রী আশ্বাস দিলেও সর্বত্রই অবিশ্বাস;###;হত্যাযজ্ঞ কমেছে, দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে

রাখাইন থেকে বাকিরাও চলে আসছে ॥ ফের রোহিঙ্গা ঢল

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৪ অক্টোবর ২০১৭

রাখাইন থেকে বাকিরাও চলে আসছে ॥ ফের রোহিঙ্গা ঢল

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে ফের ঢল নেমেছে। ছোট-বড় তিন শতাধিক কাঠের নৌকা রোহিঙ্গাদের দিনে রাতে এ পারে নিয়ে আসছে। সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত দুই দিনে দুই সহস্রাধিক নতুন রোহিঙ্গা টেকনাফের নাফ নদী দিয়ে এ পারে চলে এসেছে। দলে দলে আবারও রোহিঙ্গা ঢল নামার কারণ হিসেবে জানা গেছে, একদিকে ওপারে অবস্থানগত দিক নিয়ে ভয়ানক ভীতি, অপরদিকে, বাংলাদেশে সহজে আশ্রয় ও ত্রাণ সহায়তা প্রাপ্তি এবং এর পাশাপাশি প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকার বিশ্বাস। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে সারা বিশ্বে যে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে এবং এতে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের সমর্থন মিলেছে সে ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা ব্যাপকভাবে আশাবাদী হয়েছে। এ আশাবাদ ওপারে অবস্থানরত অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে ভবিষ্যতে কিছু একটা হবেÑমূলত এ বিশ্বাসেই নতুন করে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে ঢল নেমেছে। এছাড়া মিয়ানমার মন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে রোহিঙ্গাদের কোন আস্থাই নেই। রোহিঙ্গাদের প্রাণে বাঁচাতে বাংলাদেশের পক্ষে অঘোষিতভাবে সীমান্ত খুলে দেয়ার পর যে হারে রোহিঙ্গারা আসতে শুরু করেছে তাতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সূত্রে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হচ্ছে। গত সোমবার ঢাকায় বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সে দেশের স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সুচির দফতরের মন্ত্রী কিয়া তিন্তর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারকে আর বিশ্বাসে আনতে পারছে না। আর মিয়ানমার যদি আদৌ রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে তা নিশ্চিত বিলম্বিত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। এ বিশ্বাস নিয়েই বাংলাদেশে ইতোমধ্যে চলে আসা রোহিঙ্গাদের পক্ষে রাখাইনে এখনও অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের চলে আসার জন্য উৎসাহিত করার পাশাপাশি নানান সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির তথ্য জানান দিচ্ছে। এতে করেই নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল নেমেছে বলে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের সূত্রে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে চলে আসার পর আশ্রিত রোহিঙ্গারা ত্রাণ সহায়তা প্রাপ্তির বিষয়টি ক্রমাগতভাবে নিশ্চিত হচ্ছে। তাদের মাঝে এখানে বেঁচে থাকার বিষয় নিয়ে যেমন সন্দেহ নেই, তেমনি কোন ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতন বা অনাকাক্সিক্ষত কোন পরিস্থিতি ধেয়ে আসবে সে শঙ্কাও নেই। উখিয়ার বালুখালী আশ্রয় কেন্দ্রের উত্তর মংডুর বড়গোচির বিলের আলী আকবর, মোঃ রফিক, বদরউল্লাহ, মোঃ সলিমউল্লাম, মোঃ হোসেন আহমদ, টেকনাফের পুটিবুনিয়ায় আশ্রিত মোস্তাক, ইসমাইল, আবুল কাশেম, দীন মোহাম্মদ নুরুল্লাহ, নুর মোহাম্মদ, ইদ্রিস, কুতুপালংয়ে আশ্রিত আবুল কালাম, রফিকউল্লাহ, মোস্তাক, মোঃ আবদুর রহমানসহ অনেকেই জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বসবাসের আর কোন উপায় নেই। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশুদের হত্যা করা হয়েছে। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। নিহতদের গণকবর দেয়া হয়েছে। সহায়-সম্পদ লুটে নেয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জমিজমা মগদের দখলে দেয়া হয়েছে। যারা এখনও রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছেন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গারা প্রাণ হারাচ্ছে। আর যাদের আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে মিয়ানমার সরকারের পক্ষে পরিবারপ্রতি ১ কেজি চাল ও ১টি আলু সরবরাহ করা হচ্ছে। যা নিয়ে বেঁচে থাকার কোন উপায় নেই। কারণ, রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, চলাফেরা রুদ্ধ। যারা ব্যবসা-বাণিজ্যে নিয়োজিত ছিল এবং যারা বিভিন্ন কাজকর্ম এবং সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করত সবই বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় সেখানে আর টিকে থাকার কোন উপায় না দেখে এবং বাংলাদেশে আশ্রয় ও ত্রাণ সহায়তা সুবিধাপ্রাপ্তি ও ভবিষ্যতে তাদের স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হবে এ ভরসায় এখন অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের মাঝেও রাখাইন রাজ্য ত্যাগ করার মনোবাসনা জাগ্রত হয়েছে। আর এতে করেই ফের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে রোহিঙ্গা ঢল নেমেছে। রাখাইন রাজ্যজুড়ে সে দেশের সেনাবাহিনী তাদের অনুগত রোহিঙ্গাদের দিয়ে মাইকিং অব্যাহত রেখেছে এই বলে যে, বাংলাদেশের হুকুমত রোহিঙ্গাদের ঘর দিচ্ছে, খাবার দিচ্ছে তোমরা চলে যাও। এমন তথ্য দিয়ে চলে আসা বহু রোহিঙ্গা জানিয়েছেন তারা এর বাস্তবতা এ দেশে এসে দেখতে পাচ্ছে। ফলে ওপারে রয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের চলে আসার জন্য তাগাদা দেয়া হচ্ছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন সিদ্দিক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এবং মিয়ানমারের কিছু দালাল প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের এ দেশে চলে আসার জন্য পীড়াপীড়ি করছে। আশ্বস্ত করছে এ দেশে আশ্রয় ও ত্রাণ সহায়তা মিলছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকার তাদের ফ্রি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করছে। এ সুযোগে দালালরা অনুপ্রবেশকালে রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকাকড়িও আদায় করছে। এ কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে ৩৫০ জন দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। গত ২৫ আগস্ট রাত থেকে রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর মঙ্গলবার পর্যন্ত ৪২ দিন অতিবাহিত হয়েছে। এরই মধ্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ৭ লাখে পৌঁছেছে বলে বেসরকারী পরিসংখ্যানে জানা গেছে। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এতে করে গত ১২ মাসে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখে উন্নীত হয়েছে। অনুপ্রবেশে সীমান্তের ওপারের পয়েন্ট বাংলাদেশে অনুপ্রবেশে সীমান্তের ওপারে ১২টি পয়েন্ট রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ নাপ্পুরা, ফকিরাবাজার, সাহাববাজার, বলিবাজার, ক্রারাবিবিল, গোজিবিল, গুলখালি, কুমিরখালি, নাইচাদং, জামতলা, নাইচাপ্রু, রাইমার বিল ইত্যাদি। এপারের যেসব পয়েন্টে ঢুকছে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা নাফ নদী ও সমুদ্র পথেই এখন মূলত আসার পথ বেছে নিয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ উখিয়া, লম্বাবিল, কাঞ্জরপাড়া, লেদা, শাহপরীর দ্বীপ, উলুবুনিয়া, উনচিপ্রাং, নাইটংপাড়া, বরইতলী, কেরুনতলী, মুচনি ইত্যাদি। সীমান্তের ওপার ও এপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে, নাফ নদী দিয়ে মাত্র আধঘণ্টায় নৌকাযোগে এপারে চলে আসা যায়। তবে উত্তাল সাগরপথে আসতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। টেকনাফ সদর থেকে উখিয়ার বালুখালী পর্যন্ত বিস্তৃত নাফ নদী। এপারে উলুবুনিয়া, জাদিমুরা ওপারে নাইচাপ্রাং ও কুমিরখালী। নাফ নদীর বুক চিরে এই দুই পারের প্রস্ত মাত্র ৫০ থেকে ৬০ ফুট। এ প্রশস্ততা ঘুমধুমে গিয়ে আরও ছোট হয়ে হয়েছে ২০ ফুট। এ ২০ ফুট নদীপথ অতিক্রম করা দুঃসাধ্য কোন ব্যাপার নয়। ভাটার সময় যখন হাঁটুপানি হয় তখন অনেকেই হেঁটেও চলে আসে। তবে বর্তমানে ওপারে জিরো পয়েন্টে দেড় সহস্রাধিক স্থলমাইন স্থাপনের কারণে নাফ নদীর মোহনার আগে এবং সাগর পথকেই অনুপ্রবেশের জন্য বেছে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। তিন লক্ষাধিক জিম্মি রোহিঙ্গারাও আসতে শুরু করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী এখন রোহিঙ্গাদের নিপীড়ন-নির্যাতনের চেয়ে বাংলাদেশে চলে আসার জন্য এ দেশে উৎসাহিত করছে। এর ফলে দক্ষিণ রাখাইনে বুচিদং, রাচিদং, আকিয়াব, হাচ্চুরাতা, মেরুংলা ইত্যাদি এলাকা থেকে জিম্মি হয়ে থাকা রোহিঙ্গারাও চলে আসতে শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকলে রাখাইনে অবশিষ্ট সকল রোহিঙ্গাই বাংলাদেশে চলে আসার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। মাইন বিস্ফোরণে হত ১ মঙ্গলবার দুপুরে নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তের ওপারে চাকডালায় মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক বাংলাদেশী প্রাণ হারিয়েছে। ওই বাংলাদেশীর নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও তিনি ইতোপূর্বের মতো সীমান্ত পেরিয়ে কাঠ আহরণে গিয়েছিল বলে জানা গেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, এসব সীমান্ত দিয়ে উভয় পারের বাসিন্দারা বহু আগে থেকেই অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে তাদের স্বাভাবিক কর্মকা- চালিয়ে আসছে। ১৫ পয়েন্টে তল্লাশি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সড়কে পনেরটি তল্লাশি পয়েন্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসব পয়েন্টে চলাচলরত যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করছে এবং তাদের বালুখালী ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ দিনের পর দিন গোসল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে রোহিঙ্গাদের মাঝে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগও ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া ডায়রিয়া, আমাশয়, পুষ্টিহীনতাসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিও রয়েছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হচ্ছে নারীদের মধ্যে এইচআইভি রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি। এ রোগ নিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীরা সহজে প্রকাশ করে না। চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেকের মধ্যে এইচআইভি ধরা পড়ছে। পশ্চিম রাখাইনে ১০ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় এদিকে, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য পশ্চিম রাখাইনের দুই গ্রামের মধ্যবর্তী সীমান্ত এলাকায় দশ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এরা প্রাণভয়ে ফিরেও যেতে পারছে না আবার সেনা ও বিজিবি টহল জোরদার থাকায় সীমান্ত পেরুনোর সাহসও পাচ্ছে না। তাদের অবস্থা মানবেতর পর্যায়ে পৌঁছেছে। রাখাইন জাতীয়তাবাদীরা তাদের ক্রমাগতভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। দেড় শ’ সন্দেহভাজন আটক কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুলিশ অভিযান চালিয়ে দেড় শ’ সন্দেহভাজনকে আটক করেছে। সোমবার রাত থেকে সকাল পর্যন্ত পুলিশী অভিযানে এদের আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটককৃতদের উখিয়া ডিগ্রী কলেজে রাখা হয়েছে। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরোজুল হক টুটুল জানিয়েছেন, প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। এসব ক্যাম্পে বহু এ দেশীয় লোক সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করে। এরা উস্কানিমূলকসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা কক্সবাজার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো থেকে যেনতেনভাবে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যারা ত্রাণ দিতে যাবে তাদের বিকেল ৫টার মধ্যে ক্যাম্প ত্যাগের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। আবারও মালয়েশিয়ায় পাচারের অপতৎপরতা রোহিঙ্গাদের আবারও সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের অপতৎপরতা শুরু হয়েছে। ইতোপূর্বের মতো মাঝিদের সহায়তায় একটি দালাল চক্র এ কাজে তৎপরতা চালাচ্ছে। এ ধরনের ঘটনায় ইতোমধ্যে কয়েকজন গ্রেফতারও হয়েছে। এছাড়া সোমবার ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ায় পাচারকালে এক রোহিঙ্গা নারীসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আবদুর রহিম ও আমির হোসেন নামের দুই দালাল ওই নারীকে একজনের স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পাচারের চেষ্টা করছিল। জানা গেছে, যশোরের ভুয়া ঠিকানা দিয়ে ওই রোহিঙ্গা নারীর পাসপোর্ট করা হয়েছে। দালালদের কাছ থেকে মিয়ানমারের একটি পাসপোর্টও পাওয়া গেছে। ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা নিবন্ধিত সেনা সহায়তায় রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর মঙ্গলবার পর্যন্ত নিবন্ধিতদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩ হাজার। এ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক উল্লেখ করা হচ্ছে বলে তারা এতে উৎসাহী হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। নিবন্ধন কাজে জড়িতরা বলেছেন, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী, নিবন্ধনপত্রে তাদের মিয়ানমারের নাগরিক উল্লেখ করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা নামটি কেন লেখা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের উত্তরে নিবন্ধন কাজে জড়িত একটি সূত্র জানায়, সরকারী নির্দেশনার বাইরে তাদের যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। সেনা তৎপরতা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রমে এখন ব্যাপক শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। প্রায় সকল রোহিঙ্গা কোন না কোনভাবে ত্রাণ পাচ্ছে তা সরকারী বা বেসরকারী বা সাহায্য সংস্থার বা ব্যক্তিগত পর্যায়ের যেভাবে হোক না কেন। আর ইতোমধ্যে যারা নিবন্ধিত হয়েছে তারা নিয়মিত নির্ধারিত হারে ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে। তবে নতুন নতুন যেসব রোহিঙ্গা দলে দলে বাংলাদেশে আসছে এরা বিক্ষিপ্তভাবে ত্রাণ পাচ্ছে। আশ্রয় ব্যবস্থা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ব্যবস্থার কাজটি সবচেয়ে কঠিন। সরকার এদের জন্য যে ২ হাজার একর খাস জমি বরাদ্দ দিয়েছে তাতে দ্রুত বসতি গড়ে উঠছে। ইতোমধ্যে বলা হয়েছে, বালুখালীতে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার অবস্থান হবে। কিন্তু যেখানে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৭ লাখে পৌঁছেছে তাদের পরিপূর্ণভাবে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় সময় নেবে। এর ফলে নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন স্থান থেকে রোহিঙ্গাদের বালুখালীতে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া কিছুটা থমকে গেছে। আর জিরো পয়েন্টে যারা অবস্থান করছে তাদের সেখানে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ঢলে প্রশাসনের হিমশিম অবস্থা ক্রমাগতহারে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ঘটনায় প্রশাসনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। ত্রাণ সহায়তা কার্যক্রম সেনাবাহিনীর হাতে থাকায় তা নিয়ে প্রশাসনের সুবিধাই হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ এদের অবাধ চলাচল রোধ, চিকিৎসাসেবা ইত্যাদি কার্যক্রম চালাতে গিয়ে প্রশাসনের অবস্থা রীতিমতো গলদঘর্ম হয়ে আছে।
×