ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে পুলিশের প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি

বিশ্বদেবের মৃত্যু নির্যাতনে নয় ॥ বিক্ষোভ করেছে বিশেষ মহল

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৪ অক্টোবর ২০১৭

বিশ্বদেবের মৃত্যু নির্যাতনে  নয় ॥ বিক্ষোভ করেছে বিশেষ মহল

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ৩ অক্টোবর ॥ পুলিশী নির্যাতনে বিশ্বজিৎ চন্দ্র দে ওরফে বিশ্বদেব (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগে শেরপুরের নালিতাবাড়ী শহর উত্তাল হওয়ার একদিন পরই পাল্টে গেছে সার্বিক দৃশ্যপট। ঘটনার পর বিশ্বদেবের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী ওই অভিযোগ তুলে লাশ নিয়ে নালিতাবাড়ী শহরে বিক্ষোভ মিছিল, সড়ক অবরোধ ও স্থানীয় এএসপির (সার্কেল) কার্যালয় ভাংচুরের মতো ঘটনায় জড়ালেও একদিনের মাথায় তাদের প্রায় সবাই চুপসে গেছেন। যে কারণে এখন থানায় কোন অভিযোগ দায়েরের কথাও ভাবছেন না তারা। অন্যদিকে ওই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেছেন পুলিশ সুপার রফিকুল হাসান গণি। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের হলরুমে আয়োজিত ওই প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি পুলিশী নির্যাতনে বিশ্বদেবের মৃত্যুর কথিত অভিযোগ অস্বীকার করেন। ওইসময় নালিতাবাড়ী থানায় ব্যবহৃত সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজে দেখানো হয় রবিবার রাতে বিশ্বদেবকে স্বাভাবিক অবস্থায় থানা হাজতে ঢোকানো হয়, ওই জায়গায় অবস্থান করা ও ছেড়ে দেয়ার দৃশ্য। এছাড়া নালিতাবাড়ীর সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও’র উপস্থিতিতে করা সুরতহাল রিপোর্টেও বিশ্বদেবের শরীরে কোন জখম না পাওয়ার কাগজপত্র প্রদর্শন করা হয়। সেই সঙ্গে ময়নাতদন্ত সম্পন্নকারী চিকিৎসকদের উদ্বৃতি দিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে দাবি করা হয়, তার শরীরে আঘাতের কোন নমুনা না পাওয়ায় মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ধারণ করা যায়নি। আলোচিত ঘটনা হওয়ার পরও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের প্রতিনিধি বা কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কেন বিশ্বদেবের ময়নাতদন্ত করা হয়নি- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের সুপারিশেই সিভিল সার্জন মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে বিশ্বদেবের ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করেছেন। তবে ওইসময় কোন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে তা সম্পন্ন করার দায়িত্বটা আমাদের ছিল না। তিনি দাবি করেন, কিছু লোক অসৎ উদ্দেশে মৃতের আত্মীয়-স্বজনকে ভুল বুঝিয়ে একটি ভ্যানগাড়িতে করে তার মৃতদেহ নিয়ে মিছিল, মাইকে অপপ্রচার ও গুজব রটিয়ে মানুষকে উত্তেজিত করে এবং স্থানীয় হাবিব প্লাজার মার্কেট ও এএসপির অফিসে ঢিল ছুড়ে ভাংচুর করে। তদুপরি সার্বিক বিষয়ে তদন্তপূর্বক আগামী ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রেস ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম, ডিআইও-১ মিজানুর রহমান, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম ফসিহুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, রবিবার সন্ধ্যায় মাদকবিরোধী অভিযানকালে স্থানীয় তারাগঞ্জ উত্তর বাজার এলাকা থেকে নালিতাবাড়ী থানার এএসআই সুমনের হাতে আটক হয় কাচারিপাড়া মহল্লার মৃত বিধান দে’র ছেলে বিশ্বদেব। পরে রাত ১০টার দিকে স্থানীয়দের সুপারিশে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। রাত ১টার দিকে বিশ্বদেব অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
×