ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগস্টে মোবাইলে লেনদেন হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৪ অক্টোবর ২০১৭

আগস্টে মোবাইলে লেনদেন হাজার কোটি টাকা

রহিম শেখ ॥ মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন ক্রমেই বাড়ছে। গত মাসে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এই সেবার মাধ্যমে। এক মাসের ব্যবধানে এই লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ৩৭ শতাংশেরও বেশি। এছাড়া গত মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের হার বেড়েছে প্রায় ১৯৮ শতাংশ। এদিকে সর্বশেষ হিসাব মতে, দেশে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটি ৬৯ লাখ। এক মাসের ব্যবধানে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা প্রায় ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৭ লাখ। জানা গেছে, দ্রুততম সময়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং। বর্তমানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন। গত আগস্ট মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। ওই মাসে গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে আর্থিক লেনদেন বেড়েছে কয়েকগুণ। গ্রামের বাড়িতে ঈদের কেনাকাটার জন্য টাকা পাঠানো, এমনকি ফিতরার টাকাও পাঠিয়েছেন অনেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। মার্কেটে কেনাকাটা করতে গিয়ে কিছু টাকার ঘাটতি পড়লে সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু বা পরিবারের অন্য কোন সদস্যকে ফোন করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা ধার নিয়ে প্রয়োজন মিটিয়েছেন অনেকে। তা ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে কেনাকাটা করে ক্যাশ ব্যাক বা টাকা ফেরতও পেয়েছেন অনেক ক্রেতা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফার্মগেট এলাকার বিকাশের এজেন্ট হাবিবুর রহমান জানান, আগস্ট মাসে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন বেড়েছে। বিদেশে থেকে আসা অর্থ দিয়ে অনেকেই কোরবানি দিয়েছেন। এছাড়া রাজধানী থেকে গ্রামে টাকা পাঠিয়েছেন অনেকেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ কোটি ৬৯ লাখ। এক মাসের ব্যবধানে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা প্রায় ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৭ লাখ। গত জুন মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় খোলা হিসাবের মধ্যে সক্রিয় হিসাব ছিল দুই কোটি ৮৩ লাখ। রূপালী ব্যাংক ও শিউর ক্যাশের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা মায়েদের মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে পাঠানোর কার্যক্রম গত মার্চ থেকে শুরু হওয়ার পরপরই মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় নতুন করে এক কোটি সক্রিয় হিসাব যোগ হয়। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী, কোন এ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোন ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন-এ্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় এ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেই তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোন অনিয়ম না পাওয়া গেলে এ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক। সম্প্রতি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনের বিধান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নির্দেশনা লঙ্ঘন করায় দুই হাজার ৮৮৭ এজেন্ট হিসাবের লেনদেন স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে আগস্ট মাস শেষে এজেন্টের সংখ্যা কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭৬৮। প্রতিবেদনে দেখা যায়, এক মাসের ব্যবধানে এজেন্টের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগস্ট মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে ১৩ হাজার ৬৮৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ সময়ে ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছে ১১ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্রানজেকশন হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় জুলাই মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ পাঠিয়েছেন ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ বা ৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন পরিশোধের হার বেড়েছে প্রায় ১৯৮ শতাংশ। আগস্ট মাসে এই মাধ্যমে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৫৯১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। গ্যাস-বিদ্যুতসহ মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় আগস্ট মাসে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৩১২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আগের মাসের তুলনায় আগস্ট মাসে অন্যান্য বিল বাবদ লেনদেন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের ১৯টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং করার অনুমোদন পেলেও ১৭টি ব্যাংক বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ এবং ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ মোবাইল ব্যাংকিং এ সেবায় এগিয়ে রয়েছে।
×