ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাড়ছে এসএমই খাতে ঋণের আওতা

ফারমার্স ব্যাংকের আর্থিক ভিত শক্তিশালী হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৪ অক্টোবর ২০১৭

ফারমার্স ব্যাংকের আর্থিক ভিত শক্তিশালী হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ২০১৬ সালে সামগ্রিকভাবে ব্যবসায়িক সফলতার বছর পার করেছে দেশের বেসরকারী খাতের দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের তফসিলি এ ব্যাংক কৃষিঋণসহ সামগ্রিক ঋণ বিতরণ, আমানত গ্রহণ, রেমিটেন্স সংগ্রহ, রফতানি, খেলাপী ঋণ আদায় ও ব্যাংকের প্রসারসহ প্রায় সব সূচকেই গত বছর উন্নতি হয়েছে বলে ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফারমার্স ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা সন্তোষজক। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩ জুন চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক হিসাবে দি ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা ৫৬ এবং এটিএম বুথের সংখ্যা ১১। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটি মোট ঋণ বিতরণ করেছে ৪ হাজার ৪১৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এরমধ্যে গত বছর প্রায় ১ হাজার ৮৩৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকটি। এক্ষেত্রে ১ বছরের ব্যবধানে ফারমার্স ব্যাংকের ঋণ বিতরণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০১৬ সালে এসএমই খাতে ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে ফারমার্স ব্যাংক। এ খাতে ৪৮০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ফারমার্স ব্যাংক প্রায় ৫০৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। এ নিয়ে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট বিতরণ হওয়া ঋণের মধ্যে এসএমই খাতে ফারমার্স ব্যাংক প্রায় ১ হাজার ২৪৪ কোটি ৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। ভবিষ্যতে এসএমই খাতে ঋণের আওতা আরও বাড়াতে চায় ব্যাংকটি। একইভাবে কৃষিভিত্তির স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে এ খাতেও ফারমার্স ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ২০১৬ সালে কৃষি খাতে ৬০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ৬১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিতরণ করেছে ফার্মাস ব্যাংক। আমানত সংগ্রহে বিগত বছর অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে ফারমার্স ব্যাংক। বছরটিতে ব্যাংকের আমানত গ্রহণে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। টাকার অংকে ১ বছরে প্রায় ১ হাজার ৫৮০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করেছে। এ নিয়ে ফারমার্স ব্যাংকের মোট আমানত সংগ্রহের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৬৩ কোটি ৬১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। যা ২০১৫ সালে ছিল ৩ হাজার ৪৮২ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা স্থাপনের মধ্য দিয়ে রেমিটেন্স সংগ্রহে নতুন দিগন্ত সূচনা করেছে বেসরকারী এ ব্যাংকটি। ২০১৬ সালে রেমিটেন্স সংগ্রহে ফারমার্স ব্যাংকের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫০ শতাংশ। বছরটিতে প্রায় ৩৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা রেমিটেন্স সংগ্রহ করেছে ফারমার্স ব্যাংক। যা ২০১৫ সালে ছিল মাত্র ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া গত বছর মোট খেলাপী ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে আদায় হয়েছে। গত বছরের শুরুতে ২৭৭ কোটি টাকা খেলাপী ঋণ থাকলেও বছর শেষে তা কমে ১৭১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। মন্দ ঋণের বিপরীতে মামলা করায় ঋণ আদায় আগের তুলনায় বেড়েছে। চলতি বছর শেষে আদায়ের হার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিং শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ফারমার্স ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা, সম্পদের গুণগত মান ও বাজার ঝুঁকির প্রতি সংবেদনশীলতা সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া ব্যবস্থাপনা, উপার্জন ক্ষমতা ও তারল্য পরিস্থিতি মোটামুটি ভাল অবস্থানে রয়েছে ব্যাংকটির। ব্যাংকটি মোট ৫২ শাখার মধ্যে ৩১টি লোকসানী শাখা রয়েছে। মূলত ঋণ বিতরণ ও আমানতের সমন্বয়ের কারণেই লোকসানী শাখার সংখ্যা বেড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) বলেন, আমাদের আমানতকারীদের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে সব সময় ভাল গ্রাহক দেখে ঋণ দিতে প্রত্যেক শাখাকে নির্দেশনা দিয়েছে। কৃষি, তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ দিতে বলা হয়েছে। সুঋণ বিতরণ ও গ্রাহকের আমানত সুরক্ষার মাধ্যমে সামনের দিনগুলোতে ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি আরও ভাল হবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও সার্বিক অবস্থা নিয়ে বলেন ইদানিং কিছু পত্রিকায় আমাদের ব্যাংকের নামে ভুল তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণে ব্যাংকটি নিয়ে আমানতকারীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ রূপে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অনাকাক্ষিত।
×