ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আন্দোলনের বীরসেনানী জসিম মস্ডলকে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ৪ অক্টোবর ২০১৭

আন্দোলনের বীরসেনানী জসিম মস্ডলকে সর্বস্তরের শ্রদ্ধা

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে চিরবিদায় জানানো হয়েছে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানী, শ্রমিক আন্দোলনের নেতা ও বিশিষ্ট প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ জসিম উদ্দিন ম-লকে। সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধায় সিক্ত হয়েছেন সদ্যপ্রয়াত এ প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় মরহুমের মরদেহ রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশের সম্রাজ্যবাদী দল (মার্কসবাদী, লেলিনবাদী), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আইনজীবী শাখা, প্রগতিশীল ছাত্রজোট, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (নারী সেল), বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন, ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় শ্রমিক জোট, যুব মৈত্রী, উদীচী, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, অনির্বাণ একাত্তর, গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), সাম্যবাদী দল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে কমরেড জসিম উদ্দিন ম-লের মরদেহে শ্রদ্ধা জানায়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের এই কর্মীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শেষে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, তিনি সহজ ভাষায় মানুষকে তার কথা বোঝাতেন। শ্রমজীবী মানুষের জন্য আজীবন লড়াই করে গেছেন। সমাজের মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেছেন। যে সংগ্রাম তিনি করে গেছেন- এতদিনে তা কিছুটা হলেও পূর্ণতা পেয়েছে। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা। বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ। মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, জসিম উদ্দিন মূলত জনদরদি মানুষ হিসেবে বাংলাদেশের সমাজ প্রগতির অব্যাহত কর্মকা-ে বিশেষ ভূমিকা রেখে গেছেন। শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য কাজ করে গেছেন। তার প্রগতিশীল চেতনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবে। প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী বলেন, প্রগতিশীল মানুষদের মধ্যে তিনি দৃষ্টান্ত ছিলেন। তিনি তার রাজনৈতিক দর্শন থেকে বিন্দুমাত্র সরেননি। তার অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে অনেক বেশি প্রভাবিত করছে। তিনি আমাদের মাঝে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, তিনি যে আদর্শ লালন করতেন তা থেকে কখনও বিচ্যুত হননি। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মুক্তির লড়াই করে গেছেন, তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা। এর আগে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা জসিম ম-লের মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রাখা হয়। তার কফিন দলের কাস্তে-হাতুড়ি খঁচিত লাল পতাকা দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়। সেখানে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মঞ্জুরুল আহসান খানসহ দলের বিভিন্ন শাখা ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ফুল দিয়ে তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, জসিম উদ্দিন মন্ডল প্রগতিশীল আন্দোলনের একজন কিংবদন্তি নেতা ছিলেন। তিনি শ্রমিকের মুক্তি, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলন ও দেশের স্বাধীনতা, মানুষের মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। ষোলো বছর তিনি জেল খেটেছেন, কিন্তু লড়াই থেকে পিছ পা হননি। তার এই আদর্শের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র ও সাম্যবাদের দিকে আমরা অবশ্যই যাব। জসিম ম-ল আজ নেই, কিন্তু তার এই প্রয়াণে তার এই রেলগাড়ি থেমে থাকবে না। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, ছাত্র সংগঠন, শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজার জন্য মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ ঈশ্বরদীতে নিয়ে যাওয়া হবে। বুধবার সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন ও জানাজার শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
×