ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতারকের ফাঁদে পা দিয়ে গণধর্ষণের শিকার সেই কিশোরী এখন হতাশ

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ৪ অক্টোবর ২০১৭

প্রতারকের ফাঁদে পা দিয়ে গণধর্ষণের শিকার সেই কিশোরী এখন হতাশ

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ২৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মিরপুরে ১৬ বছরের এক কিশোরী গণধর্ষণের শিকার হয়। মিরপুর প্রিন্স বেকারির সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় কিশোরীকে ফেলে রেখে যায় ধর্ষকরা। স্থানীয় এক নিরাপত্তাকর্মী তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করেন। বর্তমানে টাঙ্গাইলের সেই কিশোরী ঢামেক হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসাধীন আছে। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার শিকার এই কিশোরী এখন হতাশায় নিমজ্জিত। যাকে ভালবেসে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে সংসার গড়ার উদ্দেশ্যে ঢাকায় এসেছিল সে যে একজন প্রতারক। তা জানা ছিল না কিশোরীর। এখনও সে নৃশংস সেই ঘটনা ভুলতে পারছে না। হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে কিশোরী। এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের সমন্বয়কারী বিলকিস বেগম মঙ্গলবার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘মেয়েটির প্রচুর রক্তপাত হওয়ায় শরীর দুর্বল। এখনও সে হাঁটতে পারছে না। এছাড়া মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ায় সেদিনের ঘটনাটি সম্পূর্ণ বলতে পারছে না। তবে প্রেমের টানে প্রেমিকের সঙ্গে সে টাঙ্গাইল ছেড়ে ঢাকায় এসেছিল এ বিষয়টি পরিষ্কার। কিন্তু ধর্ষক তার প্রেমিক হলেও সে তার ঠিকানা কিংবা ঢাকায় কোন এলাকায় থাকে এসব জানে না মেয়েটি।’ এদিকে হাসপাতালে ভর্তির পর কিশোরীর জ্ঞান ফিরলে ওসিসি থেকে তার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে মেয়ের পাশে আছেন। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ‘আমি অনেক আগেই জেনেছিলাম ফেসবুকে শাকিল নামের এক ছেলের সঙ্গে সে সম্পর্কে জড়িয়েছে। কয়েকবার মেয়েকে ফোনে কথা বলতে দেখে সন্দেহ হতে থাকে আমার। এরপর কড়াভাবে মেয়েকে সাবধান করেছিলাম ছেলেটির সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার জন্য। কিন্তু ছেলেটি বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমার মেয়েকে ঢাকায় আসতে বলে। আমি মানুষের বাড়ি কাজ করে সংসার চালাই। সেজন্য আমি কাজেই ছিলাম। আমাকে না জানিয়ে শুক্রবার সে আমার জমানো ৩০ হাজার টাকা ও তিন আনা সোনার গয়না নিয়ে ঢাকায় চলে আসে। টাকা ও সোনার গয়না নিয়ে আমার মেয়ের সর্বনাশ করে পালিয়েছে প্রতারক। আমি তার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’ এ ঘটনার বিষয়ে দারুসসালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান জানান, ধর্ষণের শিকার কিশোরী রাজধানীর কোন এলাকাই ভালভাবে চেনে না। এমনকি ধর্ষক শাকিল তাকে কোন আবাসিক হোটেলে নিয়েছিল সে বিষয়েও স্পষ্টভাবে কিছু জানা যায়নি। সুস্থ হলেই মামলা নেয়া হবে। ধারণা করা হচ্ছে, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। শাকিলকে আটকে অভিযান শুরু হয়েছে।’ সেপ্টেম্বরে সারাদেশে ১২৪ নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে শিশু ৬১, ৪৫ নারী। ১৫ নারী গণধর্ষণের শিকার হন ও তিনজনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এছাড়া সারাদেশে আত্মহত্যা করেছে ৬৮ জন। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার মাসিক পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। ধর্ষণ ॥ সেপ্টেম্বর মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১২৪ নারী ও শিশু। এদের মধ্যে শিশু ৬১। ৪৫ নারী। ১৫ নারী গণধর্ষণের শিকার হন ও ৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। গাজীপুরে ১৩ বছরের এক কিশোরীকে বিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজধানীতে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধ ধর্ষণ করেছে ১০ বছরের এক শিশুকে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ধর্ষণের ঘটনা বেশি। আত্মহত্যা ॥ সেপ্টেম্বর মাসে সারাদেশে আত্মহত্যা করেছে ৬৮ জন। এদের মধ্যে ২৩ পুরুষ ও ৪৫ নারী। পারিবারিক দ্বন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা, অভিমান, রাগ ও যৌন হয়রানি, পরীক্ষায় খারাপ ফলের কারণে এসব আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে । ঢাকা বিভাগে আত্মহত্যার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ঢাকা, ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জে আত্মহত্যার হার বেশি। শিশু হত্যা ॥ সেপ্টেম্বর মাসে ২৩ শিশুকে হত্যা করা হয়। গাজীপুরে চুরির অভিযোগ এনে এক কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সিলেটে ৭ বছরের এক শিশুকে গলা টিপে হত্যা করে সৎ মা। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে শিশু হত্যার সংখ্যা বেশি। পারিবারিক কলহ ॥ পারিবারিক কলহে সেপ্টেম্বর মাসে নিহত হন ৫০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১২, নারী ৩৮। এদের মধ্যে স্বামীর হাতে নিহত হন ২৭ নারী। আর স্ত্রীর হাতে নিহত হন চার স্বামী। সামাজিক অসন্তোষ ॥ সামাজিক অসন্তোষের শিকার হয়ে এই মাসে নিহত হয়েছেন ৯ জন। সামাজিক সহিংসতায় আহত ও নিহতের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া সেপ্টেম্বর মাসে দেশে সন্ত্রাসীর হাতে ৭২ জন নিহত হয়েছেন বলে সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
×