ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্থাপন ও পরিচালনা আইন দ্রুত মন্ত্রিসভায় পেশ করুন ॥ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ৪ অক্টোবর ২০১৭

স্থাপন ও পরিচালনা আইন দ্রুত মন্ত্রিসভায় পেশ করুন ॥ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা আইন দ্রুত মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ নীতিমালা অনুসরণে প্রায়ই বিচ্যুতি দেখা যাচ্ছে। শুধু নীতিমালা প্রয়োগ করে কলেজ পরিচালনায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই এ জন্য আইন প্রণয়ন প্রয়োজন। এই আইন সংক্রান্ত খসড়া চূড়ান্ত করে দ্রুত তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন ও সংসদে উপস্থাপনের উদ্যোগ নিতে হবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময় সভায় সভাপতিত্বকালে তিনি এই নির্দেশ দেন। সভায় অন্যদের মাঝে বিএমডিসির সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ সহিদুল্লাসহ মন্ত্রণালয় ও বিএমডিসির উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। বিএমডিসির যথাযথ অনুমোদন না নিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন অবস্থান করে বিদেশী চিকিৎসকরা চিকিৎসা পেশায় নিয়োজিত থাকেন, এই তথ্য তুলে ধরে বিদেশী চিকিৎসকদের কাজ করার অনুমতি প্রদানের নীতিমালা কঠোরভাবে অনুসরণ করার জন্য মন্ত্রী বিএমডিসিকে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্থা প্রায়ই বিদেশী চিকিৎসক দেশে এনে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। অনেক সময় তারা যথাযথ অনুমোদন না নিয়ে দীর্ঘদিন দেশে থাকছেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নীতিমালা কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া সরকারী ও বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্য এ সংক্রান্ত নীতিমালা কঠোরভাবে পর্যালোচনা করতে বিএমডিসিকে নির্দেশ দেন মোহাম্মদ নাসিম। এদিকে, বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা আইনের খসড়া তুলে ধরে বলা হয়েছে, খসড়া আইন অনুযায়ী কোন ভাড়া বাড়িতে কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন করা যাবে না। কলেজ একাডেমিক ভবন ও হাসপাতাল ভবন আলাদা থাকতে হবে। কোন অবস্থাতেই দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ধারণা গ্রহণযোগ্য হবে না। হাসপাতালে দরিদ্র জনগণের জন্য বিনা ভাড়ায় কমপক্ষে শতকরা ১০ ভাগ বেড সংরক্ষণসহ ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কলেজে ১ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে হাসপাতালে থাকতে হবে ৫টি শয্যা। সর্বনিম্ন ৫০ জন ছাত্রছাত্রীর আসনবিশিষ্ট বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ স্থাপনের জন্য মহানগর এলাকায় কমপক্ষে কলেজের নামে দেড় একর জমিতে অথবা নিজস্ব জমিতে কলেজের একাডেমিক ভবনের জন্য ১ লাখ বর্গফুট এবং হাসপাতাল ভবনের জন্য ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। আর মহানগরীর বাইরে ৩ একর নির্মাণযোগ্য জমিতে অথবা নিজস্ব জমিতে ১ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে। তবে প্রারম্ভে একাডেমিক ও হাসপাতাল মিলে সর্বনিম্ন মোট ১ লাখ ২৫ হাজার বর্গফুট প্রয়োজনীয় অবকাঠামোসহ ফ্লোর স্পেস থাকলে মেডিক্যাল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি দেয়া যাবে। তবে পরবর্তী ২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ২ লাখ বর্গফুট ফ্লোর স্পেসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে হবে। আর বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল শুধু নির্ধারিত প্লট / জমিতেই স্থাপন করতে হবে। কলেজের নামে কোন তফসিলি ব্যাংকে ১ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত রাখতে হবে। কলেজ অনুমোদিত হলে স্থায়ী আমানতটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া এই অর্থ উত্তোলন বা ব্যয় করা যাবে না। তবে গবর্নিং বডির সিদ্ধান্ত মোতাবেক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে কলেজ কর্তৃপক্ষ শুধু বছরান্তে প্রাপ্ত সুদ উত্তোলন করে কলেজের হিসাবে স্থানান্তর করতে পারবে। ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কমপক্ষে ২ বছর পূর্ব হতে প্রস্তাবিত ক্যাম্পাসে প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামোসমূহ ন্যূনতম ২৫০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল চালু থাকতে হবে। পরবর্তীতে চিকিৎসা শিক্ষার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণ হাসপাতালে রূপান্তর করা যাবে। পরিদর্শনকালে কোন কলেজ যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে প্রতীয়মান হলে সংশ্লিষ্ট কলেজে আসন সংখ্যা হ্রাস বা ছাত্র ছাত্রী ভর্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করা যাবে। অনিয়ম গুরুতর অথচ সংশোধনযোগ্য না হলে প্রয়োজনে কলেজের অনুমোদন স্থগিত/বাতিল করা যাবে। কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন অথবা মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি নামকরণ করে এমবিবিএস কোর্সে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যাবে না। কলেজের নিজস্ব একাডেমিক হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোন সরকারী/আধা সরকারী/স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার/বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিক বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের বাস্তব প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে ফরেনসিক মেডিসিন ও রেডিওথেরাপি বিষয়ে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ব্যবহার সুবিধা প্রদান করা হবে। কোন উদ্যোক্তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএমডিসির লিখিত ব্যতীত মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন না। নীতিগত অনুমোদন প্রাপ্তির দুই বছরের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে ব্যর্থ হলে প্রাপ্ত অনুমোদন সরাসরি বাতিল বলে গণ্য হবে। কলেজে প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ, আধুনিক সুযোগ সুবিধাসম্বলিত লাইব্রেরি, খেলাধুলা, বিনোদন ও ছাত্রছাত্রীর আবাসিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। প্রতিটি বেসরকারী মেডিক্যাল কলেজের সঙ্গে ফিল্ড সাইট প্রশিক্ষণের জন্য একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও একটি কমিউনিটি ক্লিনিক সংযুুক্ত থাকতে হবে। প্রতিটি কলেজে মেডিক্যাল এডুকেশন ইউনিট ও কোয়ালিটি নিশ্চিতকরণ কর্মসূচী থাকতে হবে। সরকার যে কোন সময় প্রয়োজনে এ নীতিমালা পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং সংশোধন করতে পারবে বলে জানায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
×