ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে পুলিশী নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু, সড়ক অবরোধ, ভাংচুর

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩ অক্টোবর ২০১৭

শেরপুরে পুলিশী নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু, সড়ক অবরোধ, ভাংচুর

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ২ অক্টোবর ॥ নালিতাবাড়ীতে পুলিশী নির্যাতনে বিশ্বদেব দে (২২) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। নিহত বিশ্বদেব শহরের কাচারিপাড়া এলাকার বিধান দেবনাথের ছেলে। সোমবার সকাল থেকে নালিতাবাড়ী শহরে নিহত যুবকের লাশ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা। ওইসময় তারা শহরের তারাগঞ্জ উত্তর বাজারের শহীদ মিনার ৩ রাস্তার মোড়ে একাধিক স্থানে টায়ার জ্বালায়। এছাড়া দোকানপাটসহ নালিতাবাড়ী সার্কেলের দায়িত্বে থাকা এএসপির কার্যালয় ভাংচুর করে জনতা। শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই ঘটনায় থানায় কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি। অন্যদিকে যুবককে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। নিহতের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, রবিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে মাদকবিরোধী অভিযানে যাওয়ার সময় তারাগঞ্জ উত্তর বাজারের একটি চায়ের দোকানের সামনে রিক্সার সঙ্গে ধাক্কা খান নালিতাবাড়ী থানার এএসআই সুমন। ওইসময় তিনি ক্ষেপে গিয়ে পাশেই দাঁড়ানো কাচারিপাড়া মহল্লার যুবক বিশ্বদেবকে ধরে মারধর শুরু করেন এবং পকেট থেকে গাঁজা উদ্ধার দেখিয়ে আটক করে থানায় নিয়ে যান। পরে রাত ১০টার দিকে স্থানীয়দের সুপারিশে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর থেকেই বিশ্বদেব অসুস্থ হয়ে পড়লে রাত ১টার দিকে তাকে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান স্বজনরা। ওইসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক বিশ্বদেবকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সোমবার ভোর থেকেই এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে এবং যুবকের মরদেহ নিয়ে শহরের উত্তর বাজারের শহীদ মিনার ৩ রাস্তার মোড়ে অবস্থান নেয়। ওইসময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশের এএসআই সুমনের বিরুদ্ধে সেøাগান দিয়ে একাধিক স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ভাংচুর চালায়। সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ করে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে কয়েক শতাধিক জনতা। এতে উত্তর বাজারে হাজারো জনতা অংশ নেয় এবং শহরে মৃতদেহ নিয়ে মিছিল বের করে হরতালের ডাক দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব টহল শুরু করে। পরে স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ দিয়ে দেয়া হয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা ও আরএমওর উপস্থিতিতে পুলিশ বিশ্বদেবের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর মর্গে বিশ্বদেবের লাশ পাঠানো হলে জেলা সদর হাসপাতালের আরএমও ডাঃ নাহিদ কামাল, সাবেক আরএমও ডাঃ মোবারক হোসেন ও ডাঃ রবিউল করিমের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের বোর্ডের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ওইসময় ডিআইও-১, নালিতাবাড়ী ও সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ একদল পুলিশ নিয়োজিত ছিলেন। মেডিক্যাল বোর্ডের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না। ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়ার পর মতামত দেয়া হবে। নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী দাবি করেছেন, বিশ্বদেব শৈশবে বাবাকে হারিয়েছে। বর্তমানে সে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করে বিধবা মা আর ছোট বোনের সংসারের ঘানি টানছে। সদ্য সমাপ্ত দুর্গাপূজার ছুটিতে সে বাড়িতে আসে। সে কোন প্রকার নেশার সঙ্গে জড়িত নয়। পুলিশ তাকে মিথ্যে ঘটনায় ফাঁসিয়ে নির্যাতন করেছে এবং ওই নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহতের বড়ভাই নিত্যানন্দ দে বলেন, মরদেহ সৎকারের পর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হবে আর পুলিশ মামলা না নিলে বিকল্প চিন্তা করা হবে। অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম ফসিহুর রহমান জানান, প্রায় ৫০-৬০ গ্রাম গাঁজাসহ রবিবার সন্ধ্যায় বিশ্বদেবকে আটক করে নিয়ে আসা হয়। রাত ১০টার দিকে স্থানীয়দের সুপারিশের ভিত্তিতে মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। কোন নির্যাতনের ঘটনা থানায় ঘটেনি। আমাদের সিসিটিভি ফুটেজই এর প্রমাণ। অভিযোগকারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনছে। এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম জানান, বিশ্বদেবের পরিবারের তরফ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তে সে ধরনের কিছু পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×