ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাটিং দৈন্যতায় লজ্জায় ডুবল বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩ অক্টোবর ২০১৭

ব্যাটিং দৈন্যতায় লজ্জায় ডুবল বাংলাদেশ

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাটিং, লজ্জাজনক হার। এমনটা টেস্ট ক্রিকেটে গত ১০ বছর দেখেনি বাংলাদেশ দল। এবার দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রথম টেস্টেই সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা সঙ্গী হয়েছে। যার কারণে ৩৩৩ রানের বড় ব্যবধানে হারতে হয়েছে পোচেফস্ট্রুমের সেনওয়েস পার্কে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে। ৪২৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসার মিছিলে ৯০ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। গত ১০ বছরে এই প্রথম ১০০ রানের নিচে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বনিম্ন টেস্ট ইনিংস খেলেছে। তবে এই হারের পেছনে টস জিতেও ব্যাটিং স্বর্গে প্রথমে ফিল্ডিং নেয়া এবং মূলত বোলারদের ব্যর্থতাকেই দুষেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। বড় রানের চাপে পড়েই ব্যাটসম্যানরা ভাল করতে পারেনি বলে দাবি তার। অপরদিকে, ম্যাচ জয়ের পেছনে বোলারদেরই কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস। ভুলটা ম্যাচ শুরুর আগেই করেছিলেন মুশফিক। সেটার খেসারত দিতে হয়েছে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে বল কুড়াতে কুড়াতে। বোলাররা কোন পাত্তাই পায়নি প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের আগ্রাসনের সামনে। শেষ পর্যন্ত ৩ উইকটে ৪৯৬ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। পরে ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ ৩২০ রান করে বাংলাদেশ। কিন্তু ১৭৬ রানে পিছিয়ে থাকাটাই হয়েছে সবচেয়ে বড় চাপ। ব্যাটিংবান্ধব ফ্লাট উইকেটে আগে ব্যাটিং না নেয়ার আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের কারণেই এমনটা হয়েছে। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘আমি আসলেই বুঝিনি উইকেট এমন ফ্লাট হবে। আমি ভেবেছিলাম প্রথম ইনিংসে ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলতে পারবে না। সেই ভুলটা আমাদের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে। তবে আমাদের বোলাররাও প্রত্যাশা অনুসারে বোলিং করতে পারেনি।’ পরে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের বোলাররা নিজেদের কিছুটা ফিরে পেলেও দ্রুত রান করার দিকে মনোযোগী হয়েছে বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা। তারা ৬ উইকেটে ২৪৭ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা দেয়। পেসার মুস্তাফিজুর রহমান দারুণ বোলিং করে ২ উইকেট এবং প্রথম ইনিংসে ৭৭ রানের সর্বোচ্চ ইনিংস খেলা মুমিনুল হক তার বাঁহাতি স্পিনে ৩ উইকেট শিকার করেন। প্লেসিস ৮১ ও টেমবা বাভুমা ৭১ রান করেন। এসব রানের বোঝা কমাতে পারেনি। প্রথম ইনিংসের ১৭৬ রানে এগিয়ে থাকা বাড়তি সুবিধা দিয়েছে প্রোটিয়াদের। চতুর্থ দিনেই মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ দল। ৪২৪ রানের বিশাল জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটিং চিত্র হয়ে যায় পুরনো দিনের মতোই বিভীষিকাময়। প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে ধাক্কা দেন গতিময় বোলার মরনে মরকেল। তিনি ফিরিয়ে দেন তামিম ইকবাল (০) ও মুমিনুলকে (০)। সেই আঘাত কাটিয়ে তোলার জন্য ইমরুল কায়েস ঝড় তুলেছিলেন। তিনি ব্যক্তিগত ২ রানে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু চতুর্থ দিনের একেবারে শেষ ওভারে স্পিনার কেশব মহারাজের কাছে উইকেট তুলে দিয়েছেন তিনিও ৪২ বলে ৩২ রান করে। ফলে ৩ উইকেটে ৪৯ রান নিয়ে দিন শেষ করার পর মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায় বড় ব্যবধানে হারতে চলেছে বাংলাদেশ। সেটাই সত্যি হয়েছে। আগের দিন পিঠের ব্যথার কারণে মাঠ ত্যাগ করা ভয়ানক মরকেল পঞ্চম দিন না নামলেও কাগিসো রাবাদার গতির ঝড়ে বেসামাল হয়ে গেছে বাংলাদেশের টপঅর্ডার। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৩২.৪ ওভারে ৯০ রানে গুটিয়ে যায় দ্বিতীয় ইনিংস। ইমরুলের ৩২ রানের পর মুশফিক ১৬ ও মেহেদী মিরাজের অপরাজিত ১৫ ছাড়া আর কেউ দুই অঙ্কের রানে পৌঁছতে পারেননি। এটি ছিল বাংলাদেশের ২০০৭ সালে জুলাইয়ে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে (৬২ অলআউট) ম্যাচটির পর প্রথম ১০০ রানের নিচে গুটিয়ে যাওয়া। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগে কখনও এমনটা হয়নি। তাই উন্নতিটা যেন বিদেশের মাটিতে আসেইনি বাংলাদেশ দলের। এ বিষয়ে মুশফিকও হতাশা নিয়ে বলেছেন, ‘শেষবার ১০০ রানের নিচে আমরা কবে অলআউট হয়েছিলাম তা আমার মনে নেই। আমি সত্যিই হতাশ। আমাদের আসলে মানসিকভাবে শক্ত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। সবমিলিয়ে যেখানে যেখানে প্রয়োজন উন্নতি করতে হবে। বোলাররা প্রত্যাশা অনুসারে বোলিং করতে পারেনি। যার কারণে প্রথম ইনিংসে বড় রানে পিছিয়ে থাকাই চাপ হয়েছে। এরপরও এমন ব্যাটিংয়ের জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।’ ৩৩৩ রানে হারটি রানের দিক থেকে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বাধিক ব্যবধানের হার। সবচেয়ে বড় পরাজয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে ৪৬৫ রানে। এরপর ২০১৩ সালের এপ্রিলে হারারেতে জিম্বাবুইয়ের কাছে ৩৩৫ রান। এমন একটি জয়ের জন্য দলের বোলারদেরই কৃতিত্ব দিয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক প্লেসিস, ‘আমাদের বোলিং ইউনিট খুব সুশৃঙ্খল। ছেলেরা নেটে কঠোর পরিশ্রম করছে, এই জায়গাটায় উন্নতি করতে।’ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এই প্রথম ইনিংস হার ঠেকিয়েছে বাংলাদেশ দল এটাই হয়তো সান্ত¦নার কথা হতে পারে। কিন্তু দলের উন্নতি খুব কমই হয়েছে সেটাও পরিষ্কার ফুটে উঠেছে। পেসবান্ধব উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কতটা অসহায় সেই চিত্রই পরিষ্কার হয়েছে সেনওয়েস পার্কে।
×