ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তাজিয়া মিছিল, ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র আশুরা পালিত

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩ অক্টোবর ২০১৭

তাজিয়া মিছিল, ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে পবিত্র আশুরা পালিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যথাযথ মর্যাদা আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে পবিত্র আশুরা। কারবালার শোকাবহ এবং বিয়োগান্তক ঘটনার এ দিনটি মুসলমানদের কাছে ধর্মীয়ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। শোক এবং ত্যাগের দিন হিসেবেও পরিচিত। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে রবিবার তাজিয়া মিছিল, ইবাদত বন্দেগী ও মিলাদ মাহফিল, কোরানখানি ও নফল ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করা হয়। তবে বেশিরভাগই নফল রোজাব্রত পালনের মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করেন। আশুরা উপলক্ষে মহরমের ১০ তারিখের সঙ্গে আগে অথবা পরে আরও অতিরিক্ত একদিনসহ দুদিন রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, আশুরা উপলক্ষে রোজাব্রত পালনই মূলত মূল ইবাদত। তবে এর সঙ্গে অনেকে মিলাদ মাহফিল কোরানখানি, দান খয়রাত করেছেন। এছাড়া শিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো এবারও পুরান ঢাকার হোসেনী দালান থেকে বের করা হয় তাজিয়া মিছিল। মিছিলটি লালবাগ হয়ে জিগাতলায় গিয়ে শেষ হয়। এছাড়া ইমাম হোসেন স্মরণে মাতম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বিভিন্ন জায়গায়। ইসলামী বিধানমতে রোজার মাসের পর মহরম মাসের রোজার গুরুত্ব অনেক। রবিবার আশুরার দিন রাজধানীর পুরান ঢাকায় অবস্থিত হোসেনী দালান বা ইমামবাড়া থেকে সকাল ১০টায় সবচেয়ে বড় তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। তাজিয়া মিছিল নির্বিঘœ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেয়া হয় কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। এই শোক মিছিলে ইমাম হোসেন ও তার পরিবারের প্রতীকী কবর ও ঘোড়া এবং বিভিন্ন রঙের নিশান উড়িয়ে অংশ নেন সব বয়সের নারী-পুরুষ। এ ছাড়াও এদিন সকালে মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ থেকেও আরেকটি তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ইমামবাড়ায় গিয়ে শেষ হয়। তাজিয়া মিছিলে অংশ নেয়ারা জানান, ইমাম হোসেনের প্রতি শোক প্রকাশ করতেই মিছিলে আসা। ইসলামের জন্য উনি জীবন কোরবানি করেছেন। কারবালার হৃদয়বিদারক সে দিনটি স্মরণ করতে প্রতিবছরই ইমামবাড়া মসজিদ থেকে বের করা হয় তাজিয়া মিছিল। এবারে আশুরার দিনে বের হওয়া মিছিলে হাজারো মানুষকে হায় হোসেন, হায় হোসেন মাতম করতে দেখা যায়। শিয়া সম্প্রদায়ের বিশ্বাস যে এর মাধ্যমে পরকালে মুক্তি মিলবে। এদিন মোহাম্মদপুর বিহারি ক্যাম্প ও মিরপুর থেকেও তাজিয়া মিছিল বের করা হয়। রবিবার আশুরার দিন দুপুর থেকে মসজিদে মসজিদে দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরে আলোচনা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পরিচালনা করা হয় বিশেষ মোনাজাত। অনেকে এদিন উপলক্ষে দান খয়রাতও করে। আশুরা উপলক্ষে রবিবার ছিল সরকারী ছুটি। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম বেতার, টেলিভিশন ও বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। আরবি হিজরীর প্রথম মাস মহরম। আর এ মাসেই কারবালার প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল বিয়োগান্তক ঘটনা। দিনটি স্মরণে প্রতিবছর ১০ মহরমে মুসলিম বিশ্বে পবিত্র আশুরা হিসেবে পালন করা হয়। এ দিনে ফোরাত নদীর তীরে কারবালার ইমাম হোসেন সত্য প্রতিষ্ঠায় ত্যাগের যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তা আজও বিশ্বের সব মানুষের কাছে অনুকরণীয় হয়ে আছে। তবে ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা স্মরণে প্রতিবছর আশুরা পালিত হলে আরও অনেক কারণে এই দিনটি ইসলামে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরু করে অনেক ঘটনাই এই দিনে সংঘটিত হয়েছে। ইসলামের পরিভাষায় এই দিনটি আরও অনেক কারণে পবিত্র দিন। কারণ ১০ মহরম তারিখে ফেরাউনকে নীল নদে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল। নিজের জাতিগোষ্ঠী নিয়ে নির্বিঘেœ নীলনদ পার হয়েছিল হযরত মুসা (আ)। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, পবিত্র মহরমের এই মাস কতকগুলো স্মৃতি বিজড়িত, যে স্মৃতিসমূহের সম্মানার্থেই এই মাসকে মহরম বা সম্মানিত মাস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মহরম মাসের ১০ তারিখ আশুরার দিনটি অত্যন্ত বরকতময় এবং তাৎপর্যপূর্ণ। আশুরার এ দিনে অনেক দাম্ভিক জলেম, কাফেরকে শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তবে অন্য অনেক বিষয়ের কারণে আশুরা গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমানের মুসলমানদের কাছে কারবালার ঘটনা যেন আশুরার সঙ্গে সমার্থক হয়ে গেছে। ইসলামী প-িতদের মতে সঙ্কট এবং বিপদের প্রতীকী নাম হলো কারবালার ঘটনা। স্মরণকালের ইতিহাসে আশুরার সঙ্গে কারবালার সম্পর্কও সুনিবিড়।
×