ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উখিয়া ও আশপাশে দ্রুত তৈরি হচ্ছে আশ্রয়স্থল, বাড়ানো হয়েছে ত্রাণ ও চিকিৎসাসেবা

রোহিঙ্গারা শুধু নয় শঙ্কিত বর্মী মুসলমানরাও

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গারা শুধু নয় শঙ্কিত বর্মী মুসলমানরাও

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের সমূলে উৎখাতে চলমান সামরিক অভিযানের জের পুরো মিয়ানমারের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে চলমান লোমহর্ষক বর্বরতায় পুরো মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মুসলমান সম্প্রদায়ের সদস্যদের মাঝে বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। ফলে সেখানকার এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে মুসলমানদের অবাধ চলাফেরার ওপর অলিখিত নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারিও চলছে। ফলে মিয়ানমারের সকল জাতিগোষ্ঠীর মুসলমান সদস্যরা একদিকে চরম ক্ষোভ ও অপরদিকে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাঝে রয়েছে। সোমবার ঢাকায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকের পর বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস প্রদানের পাশাপাশি এ কাজে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে এ বিষয়টি কোন আশার সঞ্চার করেনি। কেননা, অতীতেও মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বহু আশার বাণী শোনানো হয়েছে। কিন্তু কার্যকর কোন সফলতা আসেনি। উল্টো দমন-নিপীড়ন গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটেই চলেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অবস্থানরত সদস্যদের অনেকে ঢাকার বৈঠকের কথা জানার পর জানিয়েছেন, তারা সব হারিয়ে বাংলাদেশে শুধু প্রাণ বাঁচানোর জন্য আশ্রয় নিয়েছে। রাখাইনে তাদের এখন কিছুই নেই। পুরো রাজ্যটি একটি বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে। সেখানে তাদের ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হলেও বাস্তবিক অর্থে অবস্থান কী হবে তা নিয়ে তারা ব্যাপকভাবে শঙ্কিত। অর্থ, সম্পদ, বাড়ি-ঘর কিছুই নেই। শুধু তাই নয়, জমি-জমাও সেদেশের মগরা দখল নিয়েছে। আর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা তো সেখানে চলে আসছে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। সঙ্গতকারণে জাতিসংঘসহ বিশ্বের বহু দেশের পক্ষে চাপ সৃষ্টি করেও মিয়ানমারের জান্তা সমর্থিত সরকারকে যেখানে দমানো যায়নি, সেখানে তাদের মতো নিরীহ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যরা কোন্ সাহসে এবং কিসের আশায় সেদেশে ফিরে যাবে। এছাড়া এ পর্যন্ত যারা এসেছে তাদের পর্যায়ক্রমে নেয়া হলেও বেঁচে থাকার অবলম্বনও বা কী হবে। তাদের ধারণা, বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ইতিপূর্বেকার মতো মানবেতর জীবনেই তাদের থাকতে হবে। রোহিঙ্গাদের পক্ষে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো কার্যকর ও জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া রাখাইন রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হলে আগের পরিণতিই নেমে আসবে তাদের ভাগ্যে। ২০১৪ সালের সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী মিয়ানমারে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬ কোটি। কিন্তু বেসরকারীভাবে এ সংখ্যা আরও বেশি। এর মধ্যে মিয়ানমানজুড়ে মুসলমানদের সংখ্যা ৪ দশমিক ৭ শতাংশ (রোহিঙ্গারা বাদে)। সেদেশে রয়েছে সাতটি রাজ্য ও অপর সাতটি জাতিভিত্তিক রিজিয়ন। আর একটি হচ্ছে ইউনিয়ন টেরিটরি (রাজধানী নেপিডো)। সাতটি রাজ্যে জাতিভিত্তিক নাগরিকদের বসবাস রয়েছে। আর প্রধান সাতটি অঞ্চলে বর্মীরা সংখ্যাধিক্য রাজ্যে- শান, মোন, কারেন, রাখাইন, থাইন, চীন কাচিন, কায়া ও কায়িন মুসলমানদের বসবাস রয়েছে। প্রধানত এসব জাতিগোষ্ঠীসহ ১৩৫ নৃগোষ্ঠী স্বীকৃত হলেও রোহিঙ্গাদের তা নেই। রাখাইন ছাড়াও অপর ৬ রাজ্যে ও সাত রিজিয়নে স্বল্প পরিমাণ রোহিঙ্গাসহ বার্মিজ মুসলমানদের বসবাস রয়েছে। এছাড়া ৭টি জাতিভিত্তিক রিজিয়নগুলো হচ্ছেÑ ইয়াঙ্গুন, বাগো, তানিন তারি, ইরাবতী, মাগুয়ে, মান্ডালে ও জেগাইন। টাউনশিপে রয়েছে ৩৩০। আর গ্রামের সংখ্যা ৬৭ হাজার। এর মধ্যে ইয়াঙ্গুন রিজিয়ন, ইরাবতী নদীর তীরে। ৭ প্রদেশের মধ্যে রয়েছেÑ শান মুসলিম, মোন রাজ্যে রয়েছে মোন মুসলিম, যাদের মন মি লাইন বলা হয়ে থাকে। এ রাজ্যে মুসলমানদের সংখ্যা রাখাইন বাদে অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় অনেকাংশে বেশি। কারেন রাজ্যে মুসলমান থাকলেও খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বেশি। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বার্মিজ মুসলমান রয়েছে। এছাড়া চীন প্রদেশটি মিজো জাতি অধ্যুষিত আর কাচিন রাজ্যেও রয়েছে মুসলমানদের বসবাস কিন্তু তারা সংখ্যালঘু। সব মিলিয়ে মিয়ানমারে ১৩৫টি নৃগোষ্ঠীর সদস্যরা স্বীকৃতি ও নাগরিকত্ব পেয়েছে। শুধু রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব যেমন কেড়ে নেয়া হয়েছে, তেমনি অবাধ চলাফেরার সুযোগও রহিত করে রাখা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে আইডিপি (ইন্টারন্যালি ডিসপ্লেইস্্ড পারসন) ক্যাম্প রয়েছে অসংখ্য। এসব আইডিপি থেকেও রোহিঙ্গারা এখন দলে দলে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে সাগরপথে বাংলাদেশে চলে আসছে। চলে আসার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের আজ্ঞাবহ কিছু রোহিঙ্গাকে দিয়ে মাইকিং করাচ্ছে বাংলাদেশে চলে যাওয়ার জন্য। সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো সোমবার এ তথ্য দিয়েছে। মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাবিরোধী সামরিক অভিযান চালিয়ে যে নৃশংস বর্বরতা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল এতে দেশজুড়ে জাতিগত (বুড্ডিস্ট-মুসলিম) দাঙ্গা ছড়িয়ে যেতে পারে এ আশঙ্কা এবং বিশ্ব চাপের মুখে এখন এতে ধীরগতি এনেছে বলে সেখানকার বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলো মত ব্যক্ত করেছে। তবে প্রতিটি রাজ্য ও রিজিয়নে বসবাসরত মুসলমানরা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন অতিবাহিত করছেন। এর মূল কারণ বর্তমান মিয়ানমার সরকারের সার্বিক কর্মকা- শুধু রোহিঙ্গা নয়, রীতিমতো মুসলমান জাতিগোষ্ঠীবিরোধী। যার ফলে মোট জনসংখ্যার মধ্যে রোহিঙ্গা বাদে মুসলমানদের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৩০ লাখ। সেদেশের সরকার ও সামরিক বাহিনীর মনোভাবটা এমন যে, পুরো মুসলমান জাতিগোষ্ঠীবিরোধী বলেই সেখানকার মুসলমানদের মনে ধারণা প্রোথিত হয়েছে। এছাড়া মুসলমানদের চলাফেরা ও সামগ্রিক কর্মকা-ে নজরদারি ও অবাধ প্রক্রিয়াটি হ্রাস করায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা এখন শীর্ষে পৌঁছেছে। এদিকে, মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন টাউনশিপ থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। রবিবার ও সোমবার দু’দিনে ২ সহ¯্রাধিক রোহিঙ্গা সমুদ্রপথে টেকনাফ থেকে ইনানী উপকূল দিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে। অপরদিকে, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দমন-নিপীড়ন ও হত্যার মাত্রা আগের তুলনায় বর্তমানে কম পরিলক্ষিত হচ্ছে। উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের আগে রোহিঙ্গাদের ২য় শ্রেণীর নাগরিকত্ব দিতে দেশটির সরকার রাজি হয়েছিল। কিন্তু একশ্রেণীর রোহিঙ্গা নেতা ও বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্যদের কারণে সে সুযোগও হারিয়েছে রোহিঙ্গারা। আরএসও ক্যাডাররা রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দোহাই তুলে বিদেশী অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ করে নিতে উস্কানি দিয়ে সফল হয়। যার জের টানতে হচ্ছে সেখানকার অসহায় রোহিঙ্গাদের। মিয়ানমার সরকার সেদেশের হিন্দু জনগোষ্ঠীর সদস্যদেরও (রোহিঙ্গা হিন্দু বাদে) দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রসঙ্গত, মিয়ানমারে তিন ধরনের নাগরিকত্ব প্রদানের বিধান রয়েছে। সেখানে দেয়া হয় প্রকৃত নাগরিক ও গুরুত্বপূর্ণ অভিবাসীদের গ্রীনকার্ড। মিয়ানমারে গ্রীন কার্ডধারী আরাকানি হিন্দুরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকে। ভোটাধিকারও আছে তাদের। তারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা এবং সরকারী চাকরিও করতে পারে। স্বাধীনভাবে চলাফেরা করা ছাড়াও চিকিৎসা সুবিধাও ভোগ করে থাকে সরকারী হাসপাতালগুলোতে। কিন্তু রোহিঙ্গারা এসব সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়ে তা আদায়ের জন্য দাবি জানিয়ে আসছে দশকের পর দশকজুড়ে। এ দাবির বিপরীতে মিয়ানমারের জান্তা প্রতিটি ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যমূলক আচরণই করে আসছে। ১৯৭৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৬ দফায় রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক দমনপীড়ন চালিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। ধরপাকড় ও নির্যাতন শুরু হলে রোহিঙ্গারা চলে আসে বাংলাদেশে। ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে কিছু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হলেও ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি গেড়েছে। পরবর্তী ২০১৬ ও সম্প্রতি পালিয়ে এসেছে এ পর্যন্ত ৬ লক্ষাধিক। অতীতের চেয়ে এবারে (গত ২৫ আগস্ট থেকে) রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হয়েছে নির্যাতনের বিশাল ছোবল। অতীতে সেনা অভিযান ও রাখাইন বিদ্রোহীদের হাতে এত ব্যাপক রোহিঙ্গার প্রাণহানি ঘটেনি। আর লাখে লাখে রোহিঙ্গা ও বিতাড়িত হয়ে আসেনি। এবার জ্বালাও-পোড়াওর ঘটনাও ঘটেছে সর্বাধিক সংখ্যক। রোহিঙ্গা যুবতী ও নারীদের ধর্ষিত হওয়ার সংখ্যাও অগণন। যার ফলে রাখাইন রাজ্যে চারটি টাউনশিপ সিটওয়ে, মংডু, বুচিদং, রাচিদং শহর রোহিঙ্গাশূন্য হতে চলেছে। যে তিন লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সর্বশেষ জিম্মি হয়েছিল তাদেরও বাংলাদেশে চলে আসতে বাধা দেয়া হচ্ছে না। সেনা মদদপুষ্ট কিছু রোহিঙ্গা সদস্যের দিয়ে বাংলাদেশে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিংয়ের মাধ্যমে আহ্বান জানানো হচ্ছে। শুধু তাই নয়, মাইকিংয়ে বলা হচ্ছেÑ ‘বাংলাদেশ হুকুমতে’ রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয়সহ সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। এর ফলে রোহিঙ্গা স্রোত থামছে না। প্রতিদিন রোহিঙ্গারা আসছেই। টেকনাফ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত স্থলসীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থলমাইন স্থাপন করার ঘটনা অবহিত হয়ে রোহিঙ্গারা সমুদ্রপথকে বেছে নিয়েছে। নৌযানযোগে আসতে গিয়ে অনেকে ডুবে সাগরে প্রাণও হারিয়েছে। তারপরও সমুদ্রের উত্তাল ঢেউকে উপেক্ষা করে তারা আসছেই। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ও অঘোষিত বাদে সীমান্ত খোলা রেখেছে। তাদের বাঁচানোর তাগিদে মানবতার হাতও ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করে রেখেছে। এখানে আরও উল্লেখ করা যেতে পারে, ১৯৪৮ সাল থেকে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের ওপর অন্তত ২২ দফায় অপারেশন চালানো হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা বারবার বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে বুচিদংয়ের রোহিঙ্গাদের একাধিক গণকবরের চিহ্ন মুছে ফেলা হচ্ছে। সীমান্তের ওপার থেকে জানা গেছে, সোমবার সিন্দিপ্রাং পাহাড়ী এলাকার গণকবরগুলো বুলডোজারের মাধ্যমে মাটি ভরিয়ে সমান করে ফেলা হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, বিপুলসংখ্যক সেনা গত সপ্তাহখানেক ধরে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকাগুলো ধ্বংসযজ্ঞের স্পটগুলো মুছে ফেলার কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া নতুন নতুন যেসব রোহিঙ্গা প্রাণ হারাচ্ছে তাদের লাশও অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। এসব কাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার জাতিসংঘেরসহ অন্যান্য কোন সংস্থার প্রতিনিধিদের ঐসব এলাকায় পরিদর্শনে যেতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে, রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে দাবি করে সেখানকার স্কুলগুলো পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়া হচ্ছে। গত ২৫ আগস্টের রাত থেকে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা শুরু হওয়ার পর রাখাইন রাজ্যে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ মংডু ও বুচিদং এলাকার সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। নতুন রোহিঙ্গা আগমনের সংখ্যা গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাবিরোধী সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমর মতে, এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। যদিও বেসরকারী পরিসংখ্যানে এ সংখ্যা ৬ লক্ষাধিক। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘ আগাম বার্তা দিয়েছে এবারের সহিংসতার পর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা ১০ লাখে উন্নীত হবে। একই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন ইউএনএইচসিআর। রোহিঙ্গা আগমনের ঘটনায় সরকার পক্ষে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে যে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত ঠিক কী পরিমাণ বাংলাদেশে এসেছে তা সঠিক সংখ্যা জানা যাবে না। এছাড়া এরই মধ্যে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ, নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে গেছে এবং প্রতিনিয়ত তা অব্যাহত রয়েছে। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ভাষাগত এবং চেহারাগত তেমন বেশি কোন তফাত না থাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীরা বিভিন্ন স্থানে সরিয়ে যেতে সফল হচ্ছে।
×