ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিদিন মহানগরীতে বাড়ছে ১ হাজার ৭শ’ মানুষ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩ অক্টোবর ২০১৭

প্রতিদিন মহানগরীতে বাড়ছে ১ হাজার ৭শ’ মানুষ

রহিম শেখ ॥ ঢাকা মহানগর এলাকায় দিনে এক হাজার ৭০০ জন মানুষ বাড়ছে। বছরে যুক্ত হচ্ছে গড়ে ৬ লাখ ২০ হাজার ৫০০ মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এবং জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণে বর্তমানে রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৬ লাখ। গত ৪০ বছরে ১০ গুণ মানুষ ঢাকাবাসী হয়েছেন। মহানগরীর পরিধি দ্রুত সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে রাজধানীতে বাসস্থানহীন মানুষের সংখ্যা। পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী প্রায় ১ কোটি মানুষের নিজস্ব বাসস্থান নেই। এই বিপুলসংখ্যক মানুষকে ভাড়াটে বাসায়, সরকারী বাসায় বা বস্তিতে বসবাস করতে হয়। এর মধ্যে বস্তিবাসীরা আশ্রয় নিয়েছেন সরকারী বা ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গার ওপর। এছাড়া নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের প্রায় কারোরই রাজধানীতে নিজস্ব মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। নগদ মূল্যে স্বপ্নের একটি ফ্ল্যাট তৈরি করতেই বয়সের অর্ধেক পার হয়ে যায় অনেকের। যদিও অনেক দেশে স্বল্প সুদে সরকার আবাসনের জন্য মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষকে ঋণ দিয়ে থাকে। যাতে সে নিজস্ব মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করে নিতে পারে। বাংলাদেশে কখনোই তা করা হয়নি। এ অবস্থার মধ্য দিয়েই সোমবার বাংলাদেশসহ বিশ্বে পালিত হয়েছে ‘বিশ্ব বসতি দিবস’। এ বছরে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘গৃহায়ন নীতিমালা : সাধ্যের বসতি’। কিন্তু আদৌ কি সাধ্যের বসতি গড়তে পেরেছেন নগরবাসী? সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫-৬ শতাংশ সুদে সরকার আবাসন ঋণ দিলে অনেকেই রাজধানীতে থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারতেন। যদিও বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ঋণখেলাপী থাকলেও আবাসন খাতের ঋণগ্রহীতাদের ৯৯ শতাংশই খেলাপী নন। এ খাতে ঋণখেলাপী খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। কাজেই এ খাতে ঋণদানে ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এজন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকেই। জানা গেছে, মানুষের মৌলিক অধিকার বাসস্থানের বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হলেও এখনও রাজধানীসহ দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের নিজস্ব বাসস্থান নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগের হিসাবেই রাজধানীতে এখনও বস্তির সংখ্যা ৪ হাজার ৭২০টি। নগর গবেষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, রাজধানীতে ৪০ লাখ মানুষ বস্তিতে বাস করে। সরকারী বা ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গার ওপর ঘর তুলে তারা বাস করে। এ রকম লোকের সংখ্যা রাজধানীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ। এছাড়া নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের প্রায় কারোরই রাজধানীতে নিজস্ব মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ মানুষের নিজস্ব বাসস্থান আছে। এর বেশি কোনক্রমেই হবে না। রাজধানীতে ৬০-৭০ লাখ মানুষের নিজস্ব বাসস্থান আছে। অন্য ১ কোটি ৫ লাখ মানুষের মাথা গোঁজার নিজস্ব ঠাঁই নেই। পাওয়ার এ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়তে ২০ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। এজন্য ১০ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন পড়বে। রিহ্যাব সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভুঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, অনেক দেশে স্বল্প সুদে সরকার আবাসনের জন্য মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষকে ঋণ দিয়ে থাকে। যাতে সে নিজস্ব মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করে নিতে পারে। বাংলাদেশে কখনোই তা করা হয়নি। ৭-৮ শতাংশ সুদে সরকার আবাসন ঋণ দিলে অনেকেই রাজধানীতে থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারতেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ঋণখেলাপী থাকলেও আবাসন খাতের ঋণগ্রহীতাদের ৯৯ শতাংশই খেলাপী নন। এ খাতে ঋণখেলাপী খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। কাজেই এ খাতে ঋণদানে ঝুঁকি নেই বললেই চলে। বিষয়টি তিনি অর্থমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন। স্বল্প সুদে আবাসন ঋণ দেয়ার জন্য অনুরোধও করেছেন। বিশ্ব বসতি দিবস উপলক্ষে রিহ্যাবের প্রেস এ্যান্ড মিডিয়া কমিটির কো-চেয়ারম্যান কামাল মাহমুদ বলেন, নগরায়ন ও শিল্প প্রসারের লক্ষ্যে নিত্য নতুন শিল্পাঞ্চল সৃষ্টি, জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপে নানাবিধ কারণে সাধারণ মানুষের চলাচল ও প্রবেশ উপযোগী সার্বজনীন স্থানের সংকুলান বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানাবিধ কারণে বসতি সমস্যা এখন বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত প্রকট। অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে নগরের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৈশ্বিক অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত নগরায়নের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও সেটা যেন অপরিকল্পিতভাবে গড়ে না ওঠে সেদিকে লক্ষ্য রাখা একান্ত আবশ্যক। আমরা রিহ্যাবের পক্ষ থেকে একটি পরিকল্পিত নগর গঠনে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে অনেক দিন ধরে কাজ করে আসছি। আমাদের এ প্রক্রিয়া চলমান। আমরা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার ফ্ল্যাট সরবরাহ করেছি। একই সঙ্গে সমপরিমাণ প্লট সরবরাহ করেছি। আবাসন খাত এখন রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন জেলায় বিস্তৃত হয়েছে। তিনি বলেন, নানাবিদ সমস্যা থাকলেও আমরা পরিকল্পিত নগর গঠনে বদ্ধপরিকর। জানা গেছে, ১৯৮৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪০তম অধিবেশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবারকে ‘বিশ্ব বসতি দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। এবার এ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘গৃহায়ণ নীতিমালা : সাধ্যের বসতি’। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ অধিদফতর, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষসহ (রাজউক) আবাসন খাতের বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়েছে। এদিন সকাল ৭টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে র‌্যালির মাধ্যমে দিবসটির কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এছাড়াও দিনব্যাপী সভা- সেমিনারসহ বিভিন্ন আয়োজন করা হয়।
×