ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেহঘড়ির আণবিক সূত্র উদ্ঘাটন করে তিন মার্কিন চিকিৎসাবিজ্ঞানীর নোবেল জয়

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৩ অক্টোবর ২০১৭

দেহঘড়ির আণবিক সূত্র উদ্ঘাটন করে তিন মার্কিন চিকিৎসাবিজ্ঞানীর নোবেল জয়

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেহঘড়ির আণবিক সূত্র উদ্ঘাটন করে নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিজ্ঞানী। সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট সোমবার স্থানীয় সময় বেলা সাড়ে ১১টায় চিকিৎসাবিজ্ঞানে চলতি বছরের বিজয়ী হিসেবে মার্কিন প্রজনন শাস্ত্রবিদ জেফ্রি সি হল, মাইকেল রসবাস এবং মাইকেল ডব্লিউ ইয়ংয়ের নাম ঘোষণা করে। তারা মানুষের শরীরের ভেতের বিদ্যমান প্রাকৃতিক ঘড়ি নিয়ে গবেষণা করে এ পুরস্কারে ভূষিত হন। খবর এএফপি ও মেইল অনলাইনের। এবার নোবেল পুরস্কারের ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার এ তিন বিজ্ঞানী ভাগ করে নেবেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। নোবেল কমিটির এ বিষয়ক ঘোষণায় বলা হয়েছে, জীবজগতের প্রতিটি সদস্যের মধ্যে নিজস্ব একটি ঘড়ি রয়েছে, যা পৃথিবীর আহ্নিকগতির সঙ্গে তাল মেলাতে তাকে সহায়তা করে। এ ধারণা অনেক পুরনো হলেও এতদিন এ বিষয়ে তেমন কোন প্রমাণ হাজির করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। জেফরি সি হল, মাইকেল রসবাস ও মাইকেল ডব্লিউ ইয়ং এ বহুল প্রতীক্ষিত প্রমাণটিই সবার সামনে হাজির করেছেন। একই সঙ্গে শরীর বৃত্তীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে এ দেহঘড়ির প্রভাবের বিষয়টিও তারা উন্মোচন করেছেন। নোবেল কমিটি এ আবিষ্কারকে চিকিৎসাক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতির ক্ষেত্র হিসেবে উল্লেখ করেছে। নোবেল এ্যাসেম্বলি জানিয়েছে, তাদের আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষ কিভাবে দেহের জৈব ঘড়ির ছন্দের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। পৃথিবীর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে যুগপৎভাবে এমনটাই ঘটে আসছে। এ তিন গবেষক মূলত মানুষের ঘুম, খাওয়া ও জেগে থাকার ধরন, হরমন ও শরীরের তাপমাত্রা নিয়ে কাজ করেছেন। জীবদেহ কেমন করে ত্রুটিপূর্ণ কোষ ধ্বংস করে নিজের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে আর কোষ কিভাবে নিজের আবর্জনা প্রক্রিয়াজাত করে সুস্থ থকে, সে রহস্যে আলো ফেলে জাপানের বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওশুমি গত বছর চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছিলেন। তিন বিজ্ঞানী মূলত দেখিয়েছেন, পৃথিবী নামক গ্রহের আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীর শরীর তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়। বহু বছর ধরে আমরা জেনে এসেছি, প্রাণীর বিভিন্ন অঙ্গ পরস্পর নির্ভরশীল। মানুষের শরীরের ভেতরে একটি জৈব ঘড়ি আছে, যেটা মানুষকে দিনের বেলার আবর্তনের ছন্দের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করে। এ তিন গবেষক মূলত দেখিয়েছেন, আমাদের জৈব ঘড়ির ভেতরে সেটা কিভাবে কাজ করে। দেহের ভেতরের জৈবিক ছন্দটি আবিষ্কারের পথে মার্কিন বিজ্ঞানী ত্রয়ী মৌমাছির ওপর গবেষণা চালান। তারা ওই মৌমাছির শরীরে একটি বিশেষ জিন খুঁজে পান, যা এ বিশেষ জৈবিক ছন্দটি নিয়ন্ত্রণ করে। তারা দেখেন যে, এ বিশেষ জিন থেকে পাঠানো সঙ্কেতে রাতের বেলা দেহকোষে একটি প্রোটিন জমা হয়। এ বিশেষ প্রোটিন পরবর্তী সময়ে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে এসে তা পুরোপুরি নিঃশেষ হয়ে যায়। এভাবে প্রতি রাতেই ওই জিনের পাঠানো সঙ্কেতে দেহকোষে প্রোটিন জমা হয়, যা বহিঃজগতের সময় ধারণার মতো দেহের ভেতরেও একটি নিজস্ব সময়ের বৃত্ত তৈরি করে। নোবেল জয়ী জেফ্রি সি হল ১৯৪৫ সালে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরাল ডিগ্রী অর্জন করেন। মাইকেল রসবাসের জন্ম ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কানাস শহরে। এমআইটি থেকে তিনি ১৯৭০ সালে ডক্টরেট ডিগ্রী পান। আরেক নোবেল জয়ী মাইকেল ডব্লিউ ইয়াং জন্ম নেন ১৯৪৯ সালে মায়ামিতে। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে তিনি ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন। মঙ্গলবার পদার্থ, বুধবার রসায়ন, শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ৯ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। আর সাহিত্য পুরস্কার কবে ঘোষণা করা হবে, সে তারিখ পরে জানানো হবে বলে নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।
×