ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নজিরবিহীন নিরাপত্তা ছিল পূজা ও আশুরা পালনে

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩ অক্টোবর ২০১৭

নজিরবিহীন নিরাপত্তা ছিল পূজা ও আশুরা পালনে

শংকর কুমার দে ॥ এবারের পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী তাজিয়া মিছিল ও পাঁচ দিনের সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব প্রায় একই সময়ে পালনের নজিরবিহীন নিরাপত্তার আয়োজন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে, যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বলে পুলিশ প্রশাসনের দাবি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি জঙ্গী হামলার ভয়মুক্ত ও কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পালিত হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সর্বমহলেই প্রশংসিত হয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যাতে কোন সুযোগসন্ধানী অশুভ মহল কোন ধরনের সুযোগ গ্রহণ করতে না পারে সে জন্য সরকারের পদক্ষেপ ছিল কঠোর ও কঠিন। বিশেষ করে জঙ্গীগোষ্ঠীর জঙ্গী হামলার আশঙ্কামুক্ত করা যায় সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গোয়েন্দা নজরদারি ও সতর্কতা অবলম্বন করে প্রশংসা অর্জন করেছে র‌্যাব, পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর একই দিনে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সবচেয়ে বড় তাজিয়া মিছিল এবং বিজয়া দশমী অনুষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে একাধিক বৈঠকে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। এতে জঙ্গীগোষ্ঠী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গর্তে মুখ লুকায়। অথচ ২০১৫ সালেও একই দিনে তাজিয়া মিছিল ও বিজয়া দশমী অনুষ্ঠানের দিন পুরান ঢাকার হোসেনী দালানের ইমামবাড়ায় ইতিহাসের জঘন্যতম জঙ্গী হামলায় দুইজন নিহত ও শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পরের বছর ২০১৬ সালে গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার ঘটনার পর একের পর এক জঙ্গীবিরোধী অভিযানে জঙ্গীগোষ্ঠীগুলোর আস্তানা ও জঙ্গীদের পর্যুদস্ত করার কারণে মেরুদ- ভেঙ্গে গেছে। এবারও যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা ছিল নজিরবিহীন। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিব্রত সরকারকে আরও বেকায়দায় ফেলতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাজিয়া মিছিলে ও বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানের দিনে দেশে বড় ধরনের নাশকতা না ঘটাতে পারে সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। রোহিঙ্গা ইস্যুকে সামনে রেখে নাশকতা চালানোর নেপথ্যে কাজ করার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছিল স্বাধীনতাবিরোধী ও তাদের দোসর দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনগুলো। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হোসেনী দালান ও পূজাম-প এলাকায় গড়ে তোলা হয় কড়া নিরাপত্তাবলয়। বসানো হয় শত শত সিসি ক্যামেরা। বসানো হয় ওয়াচ টাওয়ার। আর্চওয়ে মেটালডিটেক্টর। মোতায়েন করা হয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা। নিরাপত্তার স্বার্থে তাজিয়া মিছিলের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করার ব্যাবস্থা ছিল খুবই সুন্দর সুশৃঙ্খল ও নয়নাভিরাম। এবারের দুর্গাপূজার সংখ্যা হয়েছে সর্বাধিক, আলোকসজ্জায় ছিল চোখ ধাঁধানো, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পাঁচ দিনব্যাপী নির্ভয়ে আনন্দ-উৎসব পালন করার দৃশ্য ছিল অতীতের চেয়ে অনেক উৎসবমুখর। আর পবিত্র আশুরা উপলক্ষে পুরান ঢাকার হোসেনী দালান এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ৪০০ বছরের পুরনো ঐহিত্যবাহী ইমামবাড়ায় শত শত মানুষের ভিড়। অনেকটা তিলধারণের জায়গা নেই। গত বছর ইমামবাড়ার মূল গেটে দোকান থাকলেও নিরাপত্তার স্বার্থে এবার মহরম মাসের শুরু থেকে তা তুলে দেয়া হয়। হোসেনী দালানের চারদিকে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তাবলয়। বসানো হয় পুলিশ ও র‌্যাবের অসংখ্য চেকপোস্ট। চাঁনখারপুল এলাকা থেকে শুরু করে পুরো এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নিষিদ্ধ করা হয় ভারী যানবাহন যাতায়াত। ইমামবাড়ার চারদিকের দেয়ালের ওপর পাঁচ ফুট কাঁটাতারের বেড়া বসানো হয়। তিনটি কন্ট্রোল রুমের একটি পুলিশ, একটি র‌্যাব ও অপরটি ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে বসিয়েছে। মূল গেটে পুলিশের তরফ থেকে ওয়াচ টাওয়ার বসানো হয়। চারদিকে মোতায়েন করা হয় প্রচুর পুলিশ আর র‌্যাব। চারদিকে সার্চলাইট বসিয়ে সার্বক্ষণিক আলোর ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, এবারের পবিত্র আশুরা উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী তাজিয়া মিছিল ও পাঁচ দিনের সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসবকে সামনে রেখে যে কোন ধরনের আপদকালীন মুহূর্ত মোকাবেলার জন্য রিজার্ভ ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়। জঙ্গীদের প্রাধান্য ও তৎপরতা রয়েছে এমন এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বেশি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি-মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান, পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটগুলো রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মানুষজনের জানমাল নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট থাকার ভূমিকা পালন করেছে, যা প্রশংসা অর্জন করেছে।
×