ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার পক্ষে রায়

কাটালোনিয়ায় গণভোট

প্রকাশিত: ০৪:০২, ৩ অক্টোবর ২০১৭

কাটালোনিয়ায় গণভোট

স্পেনের কাটালানিয়ার স্বাধীনতার প্রশ্নে রবিবার অনুষ্ঠিত গণভোটে অঞ্চলটি স্বাধীনতার পক্ষে রায় পেয়ে রাষ্ট্র গঠনের অধিকার পেয়েছে বলে দাবি করেছেন আঞ্চলিক নেতা কার্লোস পুজদেমন। স্পানিশ পুলিশের ব্যাপক বাধা সত্ত্বেও স্বায়ত্তশাসিত কাটালোনিয়ায় স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটে অংশ নেয় কাতালানবাসীরা। খবর বিবিসির। কাটালান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৪২ দশমিক তিন শতাংশ ভোট পড়েছে। ভোটারদের ৯০ শতাংশ স্বাধীনতার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। একতরফাভাবে স্বাধীনতা ঘোষণার দরজা উন্মুক্ত হয়ে গেছে বলে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে দাবি করেছেন পুজদেমন। ভাষণের সময় অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কাতালান নেতাদের পুজদেমনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পুজদেমন বলেন, আশা ও দুর্ভোগের এই দিনগুলোতে কাতালোনিয়ার নাগরিকরা প্রজাতান্ত্রিক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার অর্জন করেছে। আমার সরকার, আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই আজকের এই ভোটের ফল কাতালান পার্লামেন্টে পাঠাবে যেন পার্লামেন্ট গণভোটের আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে। পার্লামেন্টেই আমাদের জনগণের সার্বভৌমত্ব বিরাজ করছে। এরপর থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) আর ‘অন্যভাবে দেখা চালিয়ে যেতে’ পারবে না। স্বাধীনতার প্রশ্নে কাটালোনিয়ার গণভোটকে স্পেনের সাংবিধানিক আদালত অসাংবিধানিক ঘোষণা করার পর ভোট বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছিল স্প্যানিশ সরকার। গণভোট বন্ধের চেষ্টায় পুলিশের শক্তি প্রয়োগে সৃষ্ট সহিংসতায় ৭৬১ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন কাতালানিয়ার জরুরী বিভাগের কর্মকর্তারা। পুলিশ কর্মকর্তারা কিছু মানুষকে ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয় এবং ভোটকেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার ও ব্যালট বাক্স জব্দ করে নিয়ে যায়। যে স্কুলগুলোতে ভোটকেন্দ্র হবার কথা ছিল সেরকম ২০ হাজার ৩১৫টি স্কুলের মধ্যে এক হাজার ৩৯৯টি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। কাতালানিয়া অঞ্চলের রাজধানী বার্সেলোনায় পুলিশ গণভোটপন্থীদের প্রতিরোধ দমনে লাঠি চার্জের পাশাপাশি রাবার বুলেটও নিক্ষেপ করে। স্পেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সহিংসতায় ১২ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন এবং তিনজনকে আটচক করা হয়েছে। স্থানীয় সময় রবিবার রাত ৮টায় ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাখয় ‘অবৈধ ভোটে অংশ নিয়ে কাতালানরা বোকা বনেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন। এর আগে পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে পুজদেমন বলেছিলেন, স্প্যানিশ রাষ্ট্রের এই অন্যায় সহিংসতা কাতালান জনগণের ইচ্ছাকে দমাতে পারবে না। এদিকে স্পেনের কেন্দ্রীয় সরকার ও সাংবিধানিক আদালতকে উপেক্ষা করে পুলিশের বাধা আর বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতার প্রশ্নে গণভোটে অংশ নেয় কাতালোনিয়া। পুলিশ এই ভোট আটকাতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বাধা দিয়েছে, ব্যালট পেপার ও বাক্স কেড়ে নেয়ারও ঘটনা ঘটেছে। আঞ্চলিক রাজধানী বার্সেলোনায় রাবার বুলেট ছুড়ে স্বাধীনতাপন্থীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। স্পেন সরকার সাংবিধানিক আদালতের রায় মেনে কাতালানবাসীকে এই ভোট বন্ধ করার আহ্বান জানায়। স্পেনের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশের বসবাস কাতালোনিয়ায়। দেশের মোট রফতানি আয়ের ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ এ অঞ্চল থেকেই আসে। মোট বিদেশী বিনিয়োগের ২০ দশমিক ৭ শতাংশ পাওয়া। কাতালোনিয়াই স্পেনের জিডিপির ১৯ শতাংশের যোগান দেয়। কেন্দ্রীয় সরকারের ভোট বন্ধের চেষ্টার মধ্যেই কাতালান সরকার ঘোষণা দেয়, ভোটাররা নিজেদের মতো করে ব্যালট পেপার প্রিন্ট করে নিতে পারবে এবং নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্র বন্ধ পেলে যে কোন কেন্দ্রে ওই ব্যালট বাক্সে ফেললেই হবে। রবিবার সকাল ৯টায় ভোট শুরুর কথা থাকলেও কিছু কেন্দ্রে আগেই ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে যায়। সম্পদশালী কাতালোনিয়া স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত একটি অঞ্চল। প্রায় ৭৫ লাখ জনসংখ্যার এ অঞ্চলের ভাষা ও সংস্কৃতিও আলাদা। গৃহযুদ্ধের আগে কাতালোনিয়া আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন পেলেও ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোর স্বৈরশাসনের সময় তা নানাভাবে খর্ব করা হয়। ফ্রাঙ্কোর মৃত্যুর পর কাতালান জাতীয়তাবাদ ফের শক্তিশালী হতে শুরু করে, আন্দোলনের মুখে ১৯৭৮ সালে তাদের স্বায়ত্তশাসন ফিরিয়ে দেয়া হয়। স্পেনের পার্লামেন্ট ২০০৬ সালে নতুন আইন করে কাতালোনিয়ার আঞ্চলিক সরকারের হাতে আরও কিছু ক্ষমতা দেয়। কাতালানদের দেয়া হয় জাতির মর্যাদা। কিন্তু পরে স্পেনের সাংবিধানিক আদালতে সেসব বাতিল হয়ে যায়।
×