ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১ অক্টোবর ২০১৭

প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয়  দুর্গোৎসব শেষ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাবার বাড়ি থেকে ‘আনন্দময়ী’ দেবী দুর্গা ফিরে গেছেন কৈলাসের দেবালয়ে। শনিবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গোৎসব। শেষ হয়েছে বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শারদীয় উৎসব। দশ দিন আগে মহালয়ার পুণ্য তিথিতে দেবীদুর্গা মর্ত্যে আবাহনের মাধ্যমে যে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, শনিবার সকালে বিজয়া দশমীতে ‘বিহিত পূজা’ আর ‘দর্পণ বিসর্জনে’ দুর্গা পূজার শাস্ত্রীয় সমাপ্তি ঘটে। আর বিকেলে কড়া নিরাপত্তায় সারা হয় প্রতিমা বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা। এবার প্রতিটি মন্ডপ ছাড়াও প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। আসুরার সঙ্গে বিজয়া দশমীর আনুষ্ঠানিকতা খানিকটা মিলে যাওয়ায় বাড়তি নজর ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি যেমন কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এসব প্রবৃত্তিকে বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য। সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) নৌকায় চড়ে আসায় দেশে অতি বৃষ্টি হবে ও শস্যবৃদ্ধি। আর স্বর্গালোকে ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। রোগ, ব্যধি বাড়বে ও ফসল নষ্ট হবে। তবে ভক্তদের বিশ্বাস, ফল যাই হোক মা মঙ্গলময়ী, আনন্দময়ী। তিনি জগতের কল্যাণ করেন। তিনি সন্তানের কল্যাণই করবেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী; দেবী দুর্গা যে ক’দিন পিতৃগৃহে ছিলেন, ঢোলের বাদ্য সে ক’দিন ভক্তদের মনে ভক্তি আর আনন্দ মূর্ছনা দুই-ই জাগিয়েছে। শনিবার সকালে সকল মন্ডপে দশমী পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন দেয়া হয়। শাস্ত্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও বিসর্জনের আগে রাজধানীর মন্ডপে মন্ডপে দুপুর পর্যন্ত চলে আবীর খেলা আর আনন্দ উৎসব। প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গন থেকে বিজয়ার কেন্দ্রীয় শোভাযাত্রা বের হয়। শনিবার দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদ এবং মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির যৌথ উদ্যোগে বের হয় বর্ণাঢ্য এই বিজয়া শোভাযাত্রা। বিজয়া শোভাযাত্রা ও প্রতিমা বিসর্জনে অংশ নিতে দুপুর গড়িয়ে যেতেই ভক্তরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পূজামন্ডপ থেকে ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে সমবেত হতে শুরু করেন ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানের পূজাম-প থেকে আসা প্রতিমা নিয়ে ট্রাকগুলো সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যায় রাস্তায়। প্রতিটি ট্রাকে দুর্গার পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশের প্রতিমাও ছিল। সেই সঙ্গে উৎফুল্ল ছিল বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। তারা নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রাকে আরও বর্ণিল করে তোলে। সেখান থেকে সম্মিলিত বাদ্যি-বাজনা, মন্ত্রোচ্চারণ ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শোভাযাত্রা। অধিকাংশ মন্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হলেও ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমাটি রেখে দেয়া হয়। কিন্তু পূজার কাজে ব্যবহৃত দেবীর ফুল, বেলপাতা ও ঘট বিসর্জন দেয়া হয়। যাত্রাপথে অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখে। বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব সদস্যরাও মাঠে ছিলেন। এ সময় বুড়িগঙ্গার দুই তীরে হাজারও ভক্ত ও দর্শনার্থী প্রতিমা বিসর্জন দেখতে ভিড় করেন। অনেকে প্রতিমা বিসর্জনের সময় নৌকায় করে নদীতে আনন্দ করে। এ উপলক্ষে শনিবার ওয়াইজঘাট এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। প্রথা অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে জল এনে (শান্তিজল) মঙ্গলঘটে নিয়ে তা আবার হৃদয়ে ধারণ করা হয়। আগামী বছর আবার এ শান্তিজল হৃদয় থেকে ঘটে, ঘট থেকে প্রতিমায় রেখে পূজা করা হবে। রামকৃষ্ণ মিশনে সন্ধ্যা আরতির পর মিশনের পুকুরে প্রতিমা বিসর্জন দেয়া হয়। এরপর ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ ও মিষ্টিমুখ করেন। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এবছর সারা দেশে ৩০ হাজার ৭৭ মন্ডপে শারদীয় প্রতিমা পূজা হয়েছে। গত বছর ২৯ হাজার ৩৯৫ মন্ডপে দুর্গা পূজা হয়। গত বছর রাজধানীতে ৩২৬ মন্ডপে দুর্গা পূজা হয়েছে। এবছর এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩১।
×