ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বড় টার্গেটের মুখে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১ অক্টোবর ২০১৭

বড় টার্গেটের মুখে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা যেভাবে ব্যাটিং করেছে, তাতে মনে হয়েছে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রোটিয়াদের আর নামতেই হবে না। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা নামতে বাধ্য হলো। তবে এখন বাংলাদেশের সামনে জিততে বড় রানের টার্গেটই দাঁড় হতে যাচ্ছে। তৃতীয়দিন শেষেই ২৩১ রানের টার্গেট দাঁড় হয়ে গেছে। বাংলাদেশের শততম টেস্টে বাদ পড়ার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও রাখা হয়নি মুমিনুল হক ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। মুমিনুল শেষ পর্যন্ত জায়গা করে নিতে পারলেও মাহমুদুল্লাহকে দূরেই রাখা হয়। দুইজনই বাদ পড়ার জবাবটা ভালই দিলেন। দুইজনের দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে জবাবটা ভাল দিয়েছে বাংলাদেশও। কিন্তু সেই জবাবে কী আর কোন কাজ হচ্ছে? দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসে তৃতীয়দিন শেষে ২ উইকেট হারিয়ে ৫৪ রান করে। এরপর আলো স্বল্পতার কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। তৃতীয়দিনের খেলা শেষ হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ৪৯৬ রানে ইনিংস ঘোষণা করে, এরপর টপাটপ বাংলাদেশের ৩ উইকেট পড়ে যায়, তখন ফলোঅন এড়ানোই যেন কষ্টসাধ্য ছিল। বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়বে এমন ধারণাই সবার মনে খেলে। কিন্তু মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহর ব্যাটিং দৃঢ়তায় ফলোঅন শুধু এড়ায়নি বাংলাদেশ, অনেক দূর পর্যন্তই এগিয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে ৩২০ রান করে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে প্রথম ইনিংসেই ১৭৬ রানে পিছিয়ে থাকে। তিন উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান করে দ্বিতীয়দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। মুমিনুল ২৮ ও তামিম ২২ রানে ব্যাট করছিলেন। তৃতীয়দিনের শুরুটাও এ দুইজন দুর্দান্ত করেন। কিন্তু তামিম খুব বেশিদূর নাও যেতে পারেন, এমন ভাবনারও উদয় হয়েছিল। কারণ তিনি যে নিজের ওপেনিং পজিশনে ব্যাট করতে নামতে পারেননি। পজিশন পরিবর্তন হলে যে ব্যাটসম্যানের আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যায়। দ্বিতীয়দিন দ্বিতীয় সেশন চলার সময় তামিম মাঠের বাইরে থাকেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ঘোষণা করে দেয়। তখন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিস জানতেন, তামিম শুরুতেই নামতে পারবেন না। সেই সুবিধা পানও প্লেসিস। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী ইনিংস ঘোষণার আগে একজন ফিল্ডার যতক্ষণ মাঠের বাইরে থাকবেন ব্যাট হাতে নামতে তাকে ততক্ষণেই ড্রেসিংরুম বন্দী হয়ে থাকতে হবে। তামিম তাই ওপেনিংয়ে নামতে পারেননি। এরপর পাঁচ নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমেও দিনটি শেষ করেছেন। মনে হচ্ছিল যদি তামিমের কাছ থেকে বড় একটি ইনিংস মিলে যায়। কিন্তু তৃতীয়দিনে প্রথম সেশনেই তামিম (৩৯) আউট হয়ে যান। বাংলাদেশ যেন বিপত্তিতে পড়ে যায়। এই বিপত্তি দূর করতে হলে মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহকে যা করার করতে হতো। তাই করে দেখালেন তারা। দুইজন মিলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন। মুমিনুল দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। মাহমুদুল্লাহও এগিয়ে যেতে থাকেন। দুইজন মিলে দলকে ২০০ রানের ওপরেও নিয়ে যান। প্রথম সেশনে আর কোন উইকেটই পড়তে দেননি মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই ২১৮ রান যোগ হয়ে যায়। মনে করা হচ্ছিল, ফলোঅন এড়াতে যে ২৯৭ রান লাগবে তা এ দুইজন মিলেই করে ফেলবেন। কিন্তু তা আর হয়নি। দলের স্কোর যখন ২২৭ রান তখন মুমিনুল (৭৭) আউট হয়ে যান। জুটিটি ভেঙ্গে যায়। মুমিনুল যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সেঞ্চুরি মিলে যেতে পারে। কিন্তু হলো না। ফলোঅন এড়াতে তখনও ৭০ রান লাগত, এমন সময়ে মুমিনুল সাজঘরে ফেরেন। প্রস্তুতি ম্যাচে সাব্বির রহমান রুম্মন দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন। তাই সাব্বিরের কাছ থেকেও আশা করা হয়। মুমিনুল আউটের পর সাব্বির ব্যাট হাতে নেমে সেই আশার প্রতিদানও দেন। মাহমুদুল্লাহ এরমধ্যে হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। ‘নতুন জীবন’ পেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা যে তা হাতছাড়া করেন না মাহমুদুল্লাহ বুঝিয়ে দেন। সাব্বিরকে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু একটা সময় গিয়ে সাব্বিরও আর কুলিয়ে উঠতে পারেননি। সাব্বির শট খেলতে পছন্দ করেন। কিন্তু বল ব্যাট দিয়ে রুখতে গিয়ে ব্যাটে লেগে স্ট্যাম্পের বেলস পড়ে যায়। তবে এরআগে মাহমুদুল্লাহ ও সাব্বির মিলে ৬৫ রানের জুটি গড়েন। যা দলকে ফলোঅন এড়ানোর একেবারে কাছে নিয়ে যায়। ২৯২ রানে সাব্বির (৩০) আউটের পর অবশ্য মাহমুদুল্লাহও বেশিক্ষণ উইকেট আঁকড়ে থাকতে পারেননি। তবে ফলোঅন ঠিকই এড়ান। ৩০৪ রানের সময় ৬৬ রান করে মাহমুদুল্লাহ আউট হন। তার আউটের ধরনও সাব্বিরের মতোই হয়। এভাবে টেস্টে আউট হলে কী আর হয়। আর এক রান যোগ হতেই তাসকিন আহমেদ রান আউট হন। দেখতে দেখতে ৩২০ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। ২৯২ রানে সাব্বিরের আউটের সঙ্গে শেষ ২৮ রানেই ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। স্কোর ॥ তৃতীয়দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস ৪৯৬/৩ (ইনিংস ঘোষণা এলগার ১৯৯, আমলা ১৩৭, মার্করাম ৯৭ ও দ্বিতীয় ইনিংস তৃতীয়দিন শেষে ৫৪/২; ১৫.৫ ওভার; আমলা ১৭*, মার্করাম ১৫*)। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ৩২০/১০; ৮৯.১ ওভার (মুমিনুল ৭৭, মাহমুদুল্লাহ ৬৬, মুশফিক ৪৪, তামিম ৩৯, সাব্বির ৩০)।
×