ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে স্বাধীন গণমাধ্যমের বিকল্প নেই’

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১ অক্টোবর ২০১৭

‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে স্বাধীন গণমাধ্যমের বিকল্প নেই’

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে স্বাধীন গণমাধ্যমের কোন বিকল্প নেই। কারণ স্বাধীন গণমাধ্যমের মাধ্যমেই রাষ্ট্র পরিচালনায় জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সম্ভব। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাজাত সাম্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্ত গণমাধ্যম বিকাশে সহায়ক পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। আর বিশ্লেষণাত্মক রিপোর্টের ওপর প্রিন্ট মিডিয়ার ভবিষ্যত নির্ভর করবে। শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার অডিটরিয়ামে ‘আধুনিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে স্বাধীন গণমাধ্যম কেন প্রয়োজন’ শীর্ষক মাসিক পাবলিক লেকচারে ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম এ কথা বলেন। রিডিং ক্লাব ট্রাস্ট ও জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন যৌথভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেনÑ রিডিং ক্লাবের পরিচালক আরিফ খান, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমদ। মাহফুজ আনাম বলেন, জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরা। পাকিস্তানের আধা-ঔপনিবেশিক শমাসনামলে তাই সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচারের খড়গ নেমে এসেছিল। তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষ অনলাইন মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে যুক্ত হচ্ছে। ফলে প্রায় বিনামূল্যে প্রতিদিনকার সংবাদ তারা ইন্টারনেট বা টেলিভিশনের মাধ্যমে জানতে পারছে। এ কারণে টাকা দিয়ে পত্রিকা কিনে একদিন আগের সংবাদ কেউ পড়তে চাইবে না। সেক্ষেত্রে টিকে থাকতে হলে প্রিন্ট মিডিয়াকে ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম করতে হবে এবং এ ধরনের রিপোর্টের ওপর প্রিন্ট মিডিয়ার ভবিষ্যত নির্ভর করবে। একজন গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত মানুষ হিসেবে ঋণখেলাপীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে না পারাকে মিডিয়ার ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তিনি। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি থেকে বলছি, মিডিয়ার সবথেকে বড় ব্যর্থতা হলো এ দেশে ৩২ হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপীর বিরুদ্ধে মিডিয়া শক্ত অবস্থান নিতে পারেনি। যার ফলে বন্ধ হচ্ছে না ঋণখেলাপীদের দৌরত্ম্য। অন্যদিকে পরিবেশ রক্ষায় মিডিয়ার যে ভূমিকা তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, এ দেশের রাজনীতিবিদরা বলেন আমরা (রাজনীতিবিদরা) জনগণের ভোট নির্বাচিত। আপনারা সাংবাদিকরা কোন্ ভোটের জোরে আমাদের সমালোচনা করেন? এ দেশের মানুষ পাঁচ বছরে আপনাদের একবার ভোট দেয়। কিন্তু আমাদের প্রতিদিন সকালে একটি করে ভোট দেয় জনগণ। এ সময় শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশ যতটুকু এগিয়ে যাচ্ছে তার পেছনে সবথেকে বড় অবদান স¦াধীন সাংবাদিকতার বলে মন্তব্য করেন তিনি। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গণমাধ্যম দেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গণমাধ্যমের কারণে দেশে নতুন আইন প্রবর্তিত হয়। অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের মুখোশ খুলে দেয় গণমাধ্যম। জনগণকে বলা হয় সকল ক্ষমতার উৎস। এই জনগণের সঙ্গে ক্ষমতাসীন সরকারের মধ্যে সেতুবন্ধের কাজ করে গণমাধ্যম। তারা জনগণের অধিকার নিয়ে কথা বলে। কাজেই আধুনিক রাষ্ট্র গঠনে স্বাধীন গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি আরও বলেন, স্বাধীন গণমাধ্যম ছাড়া স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসনভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন সুদূরপরাহত। বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের প্রতি যে চাহিদা ও গণসচেতনতার সৃষ্টি হচ্ছে তাতে গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসংশনীয়। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে দুর্নীতিমুক্ত ও জনগণের প্রতি দায়িত্বশীল করে তোলার জন্য মুক্ত গণমাধ্যম ও উদার রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলা আবশ্যক। গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিককরণ ও সুশাসনের সকল উপাদান, বিশেষ করে আইনের শাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও জনঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে স্বাধীন ও বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম অপরিহার্য। বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, যেসব সরকার অবাধ গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে তারা শুধু গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে না, বরং বাস্তবেও দীর্ঘমেয়াদে এসব ভূমিকা তাদের নিজেদের জন্য আত্মঘাতী হয়। আরিফ খান বলেন, আমাদের সংবিধানে প্রদত্ত একটি প্রধান নাগরিক অধিকার হলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ছাড়া স্বাধীন দেশের নাগরিকগণও পরাধীন হয়ে পড়েন। জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে স্বাধীন গণমাধ্যম নিশ্চিত করতে হবে।
×