ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাদ পড়ার জবাব দিলেন রানে ফিরে মুমিনুল

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১ অক্টোবর ২০১৭

বাদ পড়ার জবাব দিলেন রানে ফিরে মুমিনুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দল থেকে বাদ পড়েন। আবার একাদশেও সুযোগ পান না। এমন কঠিন দিনই দেখতে হয়েছে মুমিনুল হককে। সেই জবাবটা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে দিয়ে দিলেন। ২৩ রানের জন্য সেঞ্চুরি হাতছাড়া হয়েছে। তবে ৭৭ রান করেও দেখিয়ে দিলেন মুমিনুল। বুঝিয়ে দিলেন, কোনভাবেই ফুরিয়ে যাননি। যাওয়ার পাত্রও তিনি নন। দক্ষিণ আফ্রিকা ইনিংস ঘোষণার পর দ্বিতীয়দিনের শেষ সেশনে ব্যাট হাতে নামে বাংলাদেশ। ১৬ রানে ১ উইকেট পড়ার পরই ওয়ানডাউনে ব্যাট হাতে নামেন মুমিনুল। সেই থেকে ধৈর্য ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন। তার সামনে দিয়ে আরও ২ উইকেট পড়ে। কিন্তু মুমিনুল উইকেট আঁকড়ে থাকেন। দ্বিতীয় দিন ২৮ রান করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। তৃতীয়দিনেও দুর্দান্ত ব্যাটিং করতে থাকেন। এদিন মারমুখী হয়েও খেলেন। উইকেটের সুবিধা নিয়ে, বল ব্যাটে আসার সুবিধা নিয়ে বাউন্ডারি হাঁকাতে থাকেন। ইমরুল, লিটন, মুশফিক, তামিমের মতো গুরুত্বপূর্ণ চার উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় পড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু মুমিনুল নির্ভয়ে খেলে এগিয়ে যেতে থাকেন। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে এগিয়ে যান। দলকে ফলোঅন এড়ানোর কাছাকাছিও নিয়ে যান। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ৪৯৬ রান করায় ফলোঅন এড়াতে বাংলাদেশকে ২৯৭ রান করতে হতো। দল যখন ২২৭ রানে যায় তখনই মুমিনুল আউট হন। ততক্ষণে ফলোঅন এড়াতে আরও ৭০ রানের দরকার ছিল। বাংলাদেশ যে এতদূর এসেছে, লড়াইয়ের আবহ তৈরি করে দিয়েছে। সেটি মুমিনুলের জন্যই সম্ভব হয়েছে। মুমিনুল তৃতীয়দিনের প্রথম সেশনেই হাফসেঞ্চুরি করেন। তবে দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই সাজঘরে ফিরেন। মুমিনুল যখন ১৫০ বলে ১২ চারে ৭৭ রান করে শর্ট লেগে আউট হন, তখন বাংলাদেশ যেন আবার বিপদে পড়ে যায়। তবে মুমিনুল আলো ছড়িয়েই মাঠ ছাড়েন। যদিও ভাবা হচ্ছিল, সেঞ্চুরি করে ফেলবেন। কিন্তু তা করতে পারেননি। ক্যারিয়ারের শুরুতেই টানা ১১ টেস্টে কোন না কোন ইনিংসে ৫০ উর্ধ রান করেছেন। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গল টেস্টে খেলে টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু করেন মুমিনুল। প্রথম ইনিংসেই হাফসেঞ্চুরি করে পাদপ্রদীপের আলোয় এসে পড়েন। এরপর কলম্বো টেস্টের প্রথম ইনিংসেও হাফসেঞ্চুরি করে নিজের আগমনী বার্তা ভালভাবেই জানান দেন। মাঝপথে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে হারারে টেস্টে কোন ইনিংসেই হাফসেঞ্চুরি করতে পারেননি। এরপর টানা ১১ টেস্টে সেই ইতিহাস রচনাকারী নৈপুণ্য দেখান। এরমধ্যে আবার চারটি সেঞ্চুরিও করেন। কি দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যেতে থাকেন মুমিনুল। ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেট মানেই মুমিনুল থেকে একটা বড় ইনিংস মিলছেই, এমন ধারণাই হয়ে যায়। সেই মুমিনুল হঠাৎ করেই যেন হারিয়ে যেতে বসেন। সেই নৈপুণ্য আর দেখাতে পারছিলেন না। ক্যারিয়ারের প্রথম ১৪ টেস্টে যে উড়ন্ত নৈপুণ্য দেখা যায়, পরের ৯ টেস্টে তা আর দেখা যায়নি। দুটি টেস্টে শুধু দুই ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করতে পেরেছেন। মুমিনুল থেকে যে আশা করা হয়, তার প্রতিদান দিতে পারেননি। টেস্ট স্প্যাশালিস্ট ব্যাটসম্যান যদি টেস্টেই রান করতে না পারেন, তাহলে কী হয়। ১৫ থেকে ১৮ টেস্ট পর্যন্ত, এই চার টেস্টে মুমিনুলের ব্যাট কোনভাবেই কথা বলেনি। আর তাই মুমিনুল যেন কোচের বাদ পড়া ক্রিকেটারের তালিকাতে ঢুকতে থাকেন। একের পর এক ম্যাচে বাদ যেতে থাকেন। কখনও ইনজুরির জন্য। কখনও আবার একাদশ থেকে বাদই দেয়া হয় মুমিনুলকে। বাংলাদেশের শততম টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে যেমন একাদশে রাখা হয়নি মুমিনুলকে। আবার সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তো মুমিনুলকে শুরুতে দলেই রাখা হয়নি। এরপর এত বেশি সমালোচনা হয়েছে যে শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের পরিবর্তে দলে জায়গা হয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে একাদশে জায়গা হয়নি। দলও জিতে। তাই মুমিনুলের একাদশ থেকে বাদ পড়া নিয়ে পরে আর তেমন আলোচনা হয়নি। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে ঠিকই ব্যাট হাতে নামেন মুমিনুল। কিন্তু প্রথম ইনিংসে চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নামলেও দ্বিতীয় ইনিংসে আট নম্বর পজিশনে নামানো হয় মুমিনুলকে। এরপরও দমে যাননি তিনি। প্রথম ইনিংসে ৩১ রান করেন। দ্বিতীয় ইনিংসে পজিশন হারিয়েও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৯ রান করেন। মুমিনুল তাই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও টিকে যান। টিকে গিয়ে যেন নিজেকে প্রমাণই করে দিলেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে বাদ পড়ার পর মুমিনুল বলেছিলেন, হাল ছাড়বেন না। এত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র তিনি নন। মুমিনুল দেখিয়ে দিলেন, তার ভেতর যে ফিরে আসার জেদ ঢুকেছে, সেই জেদেই পারফর্মেন্স করে দেখিয়েছেন। পোচেফস্ট্রুম টেস্টে বাংলাদেশের বিপদের সময় হাল ধরেছেন। বাংলাদেশকে টেনে তুলেছেন। টেনে নিয়ে গেছেন। তাকে বাদ দেয়ার জবাব দিয়েছেন। তিনি যে টেস্টে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান, সবাইকে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন।
×