ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ॥ ঢাকায় এশিয়া কাপ হকি

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১ অক্টোবর ২০১৭

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ॥ ঢাকায় এশিয়া কাপ হকি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দীর্ঘ ৩২ বছরের প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে চলেছে আর মাত্র ১০ দিন পরেই। বাংলাদেশে আবারও ফিরেছে এশিয়া কাপ হকি। বর্ণাঢ্য আয়োজনে দশম আসরটিকে স্মরণীয় করতে প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন (বাহফে)। নতুন রূপে গড়ে উঠছে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়াম। প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করে স্থাপন করা হয়েছে বহুল আলোচিত ফ্লাডলাইট। ২২ অক্টোবর বড় আকর্ষণ হয়ে ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন দলকে ট্রফি তুলে দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১১ অক্টোবর প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী মোস্তফা কামাল। আগামী ৭ অক্টোবর ঢাকা আসবেন এশিয়ান হকি ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। সেদিনই মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম চলে যাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে। পরদিন সকাল থেকে আসা শুরু হবে বিদেশী দলগুলোর। ৯ অক্টোবর সবশেষে আসবে ওমান। স্বাগতিক হওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল টুর্নামেন্ট শুরুর ৪৫ দিন আগে ফ্লাডলাইটসহ যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করতে হবে, অন্তত ১৫ দিন আগে স্টেডিয়ামের দায়িত্ব নিবে এশিয়ান হকি ফেডারেশন। বাংলাদেশের অনুরোধে গতকাল পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছিল। শনিবার উন্মোচিত হয়েছে ‘হিরো এশিয়া কাপ হকি ২০১৭’র থিম সং’ আটটি তারার মেলা।’ খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করার জন্য, মাঠে কঠিন সময়ে নিজেদের সেরা নৈপুণ্য প্রদর্শনে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনাময় শিল্পী আরিফের কণ্ঠে গানটি দর্শক-খেলোয়াড় ও অন্য সবাইকে আনন্দ দেবে এই থিম সং। মান্নান মোহাম্মদের লেখা ও সুরের গানটি হকি অঙ্গনে আলোড়িত করবে এই প্রত্যাশা বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের (বাহফে)। শনিবার বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিশেয়নের (বিওএ) অডিটরিয়ামে থিম সংয়ের পাশাপাশি টুর্নামেন্টের প্রোমেশনাল ভিডিওটি (‘৩২ বছর পর, বাংলা ও ইংরেজী ভাষায় নির্মিত) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। প্রোমোশনাল ভিডিওটি পরিচালনা করেছেন মোকাদ্দেম বাবু ও সম্পাদনা করেছেন নাদিমুল হক। এই ভিডিওটি বাংলা ও ইংরেজী উভয় ভাষায় নির্মিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাহফের সহ-সভাপতি ও এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান, বাহফের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাদেক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ প্রমুখ। আটটি তারার মেলা নামের গানটিতে হকিপ্রেমীদের মাঠে ছুটে আসার আহ্বানসহ খেলোয়াড়দের সেরা নৈপুণ্য প্রদর্শনের বাণী সঙ্কলিত হয়েছে। উচ্চালয়ের গানটি ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে সমাদৃত হবেÑ এমন প্রত্যাশা ড. মাহফুজুর রহমানের, ‘আমরা চেয়েছি দ্রুতলয়ের ও উচ্চৈঃস্বরে গাওয়া একটি গান, যেটি খেলার মাঠের সাথে মিশবে। হকি ও দেশের কথা গানের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে। আমরা আশা করি এশিয়া কাপের মাধ্যমে বাংলাদেশ হকির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।’ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জাতীয় অধিনায়ক আব্দুস সাদেকের কণ্ঠে আবেগ, ‘আর মাত্র ১০ দিন বাকি। এশিয়ার হকির বৃহত্তম আসর আবার ঢাকার মাঠে। শুধু তাই নয়, ফ্লাডলাইটে অনুষ্ঠিত হকির এই মহাযজ্ঞ দেশের হকিতের নতুন প্রাণ সঞ্চার করবে বলে বিশ্বাস করি।’ অনুষ্ঠানে প্রশ্ন-উত্তর পর্বে আবদুস সাদেক বলেন, ‘সামথিং নিউ হবে এবার। আর মাত্র ১০ দিন বাকি। এজন্য মিডিয়ার পাবলিসিটি আমাদের দরকার। ৩২ বছর পর এই আসটি বাংলাদেশে হচ্ছে আবারও। ১৯৮৫ সালে আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। সেবার স্টেডিয়ামে দর্শক সমাগম ছিল অভাবনীয়। আশা করি এবারও দর্শকরা মাঠে আসবেন খেলা দেখতে। তবে তারা মাঠে না এলে আসরটি সফল হবে না।’ ইলেকট্রনিক্স স্কোর বোর্ড প্রসঙ্গে সাদেক বলেন, ‘এটি এখন আছে চট্টগ্রাম বন্দরে। এটি ঢাকায় এসে পৌঁছাবে ৫ অক্টোবরের মধ্যে। এটা ইন্সটল করতে লাগবে দুদিন। ফলে স্থাপন করা হবে ৭ অক্টোবরের মধ্যে।’ সাদেক আরও যোগ করেন, জাতীয় দল এখন প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে সাভারের জিরানির বিকেএসপিতে। আগামী ৩/৪ দিনের মধ্যে ঢাকায় চলে আসবে। আগামী ৮ অক্টোবর সন্ধ্যায় তারা ১টি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে।’ উল্লেখ্য, এবারের আসরে যে ৮টি দল অংশ নিচ্ছে, তাদের মধ্যে ৫টি দলই আছে বিশ্ব হকি র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা ২০-এর মধ্যে (বাংলাদেশ এবং ওমান বাদে)। সাদেক স্থানীয় স্পন্সরদের (ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এবং গ্রিন ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স) ধন্যবাদ জানান বাহফের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘এই আসর আয়োজনের মধ্য দিয়ে আশা করি বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে সুনাম বৃদ্ধি করতে পারবে।’ ড. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন ২০২২ বিশ্বকাপ আসরে খেলায়। এবারের এশিয়া কাপ আসরে যদি কমপক্ষে দুটি ম্যাচে জিতি, তাহলে আমরা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারব। ক্রিকেটে খেলে ১২টার মতো দেশ। অথচ হকি খেলে ১৫০টির মতো দেশ। একবার ভাবুন, বাংলাদেশ যদি হকি বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে পারে, তাহলে বাকি ১৪৯টি দেশের কাছে বাংলাদেশের নামটি পৌঁছে যাবে। তারা বাংলাদেশকে চিনবে। এটা হবে নিঃসন্দেহে বড় এক প্রাপ্তি। এ লক্ষ্যেই বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’ মাহফুজুর আরও যোগ করেন, ‘গ্যালারি যে কোন মূল্যেই হোক আমাদের পরিপূর্ণ রাখতে হবে। ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড, ঘোড়াগাড়ি, বাদ্যবাজনা এগুলোর বন্দোবস্ত করা হবে। হেলিকপ্টারে করে বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে টুর্নামেন্টের লিফলেট বিতরণ করা হবে। স্টেডিয়ামের গ্যালারির আসন ফাঁকা থাকলে দরকার হলে সেটা ফিলাপ করতে আমরা স্টেডিয়ামের পাশের রাস্তা থেকেও লোক ধরে আনব (হা-হা-হা)!’ উদ্বোধনী ও সমাপনী দিনে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। উদ্বোধনী দিনে হাজির থাকবেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। আর সমাপনী দিনে উপস্থিত থাকবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টুর্নামেন্ট চলাকালে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বিধান করা হবে। প্রতিদিনই মোট ৩০০ পুলিশ স্টেডিয়ামে মোতায়েন করা হবে। এছাড়া দলগুলোর হোটেলে এবং ভেন্যুতে আসা-যাওয়ার পথে নিরাপত্তা দেয়া হবে। হোটেলে এবং স্টেডিয়ামের বিভিন্ন অংশে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকবে, যাতে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে সঙ্গেই সঙ্গেই অপরাধীকে ধরা সম্ভব হয়। আসরের প্রচারণা প্রসঙ্গে সাদেক জানান, ‘যুবসমাজ তথা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঠে এসে খেলা দেখতে উৎসাহিত করা হবে। এজন্য বাছাই করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগেভাগেই নির্দিষ্ট সংখ্যক ফ্রি টিকেট দেয়ার পরিকল্পনা আছে।’
×