ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তাজিয়া মিছিলসহ মাতম অনুষ্ঠানের আয়োজন

আজ আশুরা ॥ কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার ঐতিহাসিক দিন

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ১ অক্টোবর ২০১৭

আজ আশুরা ॥ কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনার ঐতিহাসিক দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কারবালা প্রান্তরের বিয়োগান্তক ঘটনার ঐতিহাসিক দিন আজ। ১০ মহরম, পবিত্র আশুরা। বিশ্বের মুসলমানদের ধারণা আশুরা মূলত শোকাবহ একটি দিন। এ দিনেই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা.) ইরাকের ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন। সেই থেকে মুসলিম বিশ্বে কারবালার শোকাবহ ঘটনাকে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক হিসেবে পালন করা হয়। তবে ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে কারবালার বিয়োগান্তক ঘটনা স্মরণে প্রতিবছর আশুরা পালিত হলেও আরও অনেক কারণে এই দিনটি ইসলামে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরু করে অনেক ঘটনাই এ দিনে সংঘটিত হয়েছে। আজকের এ দিনেই পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যাবে। ইসলামের পরিভাষায় এ দিনটি আরও অনেক কারণে পবিত্র দিন। কারণ ১০ মহরম তারিখে পৃথিবী ও আসমান সৃষ্টি করা হয়েছিল। এ দিনে পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ.)কে সৃষ্টি করা হয়। এ দিনেই হযরত ইব্রাহিম আ. নমরুদের অগ্নিকু- থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন। ফেরাউনকে নীলনদে ডুবিয়ে দেয়া হয়েছিল। এ দিনেই নুহ (আ.)’র কিস্তি ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিল। তিনি জুদি পাহাড়ে নোঙ্গর ফেলেছিলেন। এ দিনেই হয়রত ইসা (আ.)কে উর্ধ আকাশে তুলে নেয়া হয়েছে। হাদিসের বর্ণনামতে এ দিনে কেয়ামত সংঘটিত হবে। তবে আশুরার দিনে বিশ্বের মুসলমানরা কারবালার ঘটনাকে স্মরণ করেই বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়ে থাকে। এবারও এই দিন উপলক্ষে বাংলাদেশের শিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তাজিয়া মিছিল বের করাসহ মাতম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা কারবালার ঐতিহাসিক ত্যাগের ঘটনাকে স্মরণ করে জাতীয় জীবনেও ত্যাগের দৃষ্টান্ত অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও পবিত্র আশুরা উপলক্ষে মুসলিম উম্মার সুখ সমৃদ্ধি এবং শান্তি কামনা করেন তারা। এদিকে আশুরা উপলক্ষে আজ রবিবার ইমাম হোসেনের মৃত্যুর প্রতীকী শোক পালন করতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও রাজধানীর হোসনী দালানের ইমামবাড়া থেকে তাজিয়া মিছিল বের করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে শিয়া সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে। এছাড়াও মোহাম্মদপুর, মিরপুর, বকশিবাজার, লালবাগ, পল্টন, মগবাজার থেকেও আশুরার মিছিল বের করার কর্মসূচীও রয়েছে। আজ রবিবার জোহরের নামাজের পর হোসনী দালান থেকে বের হবে তাজিয়া মিছিল। পুরান ঢাকার বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ধানম-ি লেকে গিয়ে শেষ হবে এ মিছিল। এছাড়া এ উপলক্ষে মাতম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মাতম অনুষ্ঠানে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা মূলত বুকে পিঠে লোহার দ- দিয়ে আঘাত করতে থাকে। আর মুখে উচ্চরণ করে হায় হোসেন, হায় হোসেন। এভাবে তারা সারা অঙ্গ ক্ষত বিক্ষত করে ইমাম হোসেনের প্রতি শোক পালন করে থাকে। এদিকে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে তাজিয়া মিছিলে দা, ছোরা, কাঁচি, বর্শা, বল্লম, তরবারি, লাঠি বহন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একইসঙ্গে আতশবাজি ও পটকা ফোটানোও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনে এগুলো ব্যবহার করা যাবে না। ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, মহরম মাসের ১০ তারিখ আশুরার দিনটি অত্যন্ত বরকতময় এবং তাৎপর্যপূর্ণ। আশুরার এই দিনে অনেক দাম্ভিক জালেম, কাফেরদের শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। বুখারী শরীফের বর্ণনামতে, রমজান মাসের রোজা ফরজ হওয়ার আগে মুসলমানদের ওপর আশুরায় রোজা ছিল ফরজ। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর আশুরায় রোজ নফলে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু আশুরায় রোজা নফল হওয়া সত্ত্বেও এ রোজার গুরুত্ব কমে যায়নি। মহানবী সা. বলেছেন, রমজানের পর সর্বোত্তম হলো আশুরায় রোজা পালন। পবিত্র আশুরা উপলক্ষে ১০ মহরমের সঙ্গে আগে অথবা পরে একদিন মিলে ২টি রোজা রাখার বিধান রয়েছে। তবে অন্য অনেক বিষয়ের কারণে আশুরা গুরুত্বপূর্ণ হলেও বর্তমানের মুসলমানদের কাছে কারবালার ঘটনা যেন আশুরার সঙ্গে সমার্থক হয়ে গেছে। ইসলামী প-িতদের মতে সঙ্কট এবং বিপদের প্রতীকী নাম হলো কারবালার ঘটনা। স্মরণকালের ইতিহাসে আশুরার সঙ্গে কারবালার সম্পর্কও সুনিবিড়। এদিনে নবী দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন ইসলামী অনুশাসনকে সমুন্নত রাখতে সপরিবারে নিহত হন। কারবালার প্রান্তরে হযরত ইমাম হোসেন যেদিন প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন সেদিন থেকেই ইসলাম মৌলিকত্ব প্রকৃত প্রাণ শক্তি অর্জন করে। তাই আশুরা হলো ত্যাগের, শক্তির, প্রতিবাদের, সফলতার এবং বিজয়ের। কারবালার স্মৃতি মুসলিম হৃদয়ে কেবল আবহই জাগায় না সাধনা এবং সাফল্যের এক নতুন উদ্দীপনাও জাগিয়ে তোলে। আরবি ৬০ হিজরীতে এজিদ বিন মুয়াবিয়া পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসেবে ঘোষণা করেন। আসলে তিনি প্রকৃত মুসলমান ছিলেন না। ছিলেন মোনাফেক। এমনই পথভ্রষ্ট ছিলেন যে ক্ষমতায় বসেই মদপান, একই সঙ্গে দুই সহোদরকে বিয়ে করাকে বৈধ ঘোষণা করেন। শাসক হিসেবে সে ছিল স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী। তাই ইমাম হোসেন (রা.) এজিদের আনুগত্য করতে নারাজ। ইসলামের সংস্কারের জন্য মদীনা ছেড়ে মক্কায় চলে আসেন। সেখান থেকে কুফার উদ্দেশে যাত্রা করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি কারবালার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এই সময়ে উমর বিন সাদ আবি ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে। কয়েক ঘণ্টা পর সীমারের নেতৃত্বে বহু সৈন্য এসে তার সঙ্গে যোগ দেয়। কারবালায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে যুদ্ধ শুরু হয়। অসম এই যুদ্ধে ইমাম হোসেন এবং তার ৭২ জন অনুসারি মৃত্যুবরণ করেন। সীমার নিজে ছুড়ি চালিয়ে ইমাম হোসেনকে হত্যা করে। সেদিন ছিল আরবি ৬১ হিজরীর ১০ মহরম।
×