ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পায়ুপথে বাতাস দিয়ে শিশু হত্যা

নিহত রাসেলের কর্মস্থলে মানা হতো না শিশুশ্রম নীতি

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১ অক্টোবর ২০১৭

নিহত রাসেলের কর্মস্থলে মানা হতো না শিশুশ্রম নীতি

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় এবিসি টাইলস ফ্যাক্টরিতে কিশোর শ্রমিক রাসেলের পায়ুপথে উচ্চ শক্তির কমপ্রেসারের পাইপে বাতাস দিয়ে হত্যা করার ঘটনাটি আলোড়ন তুলেছে। এই হত্যাকে ঘিরে সামনে এসেছে নানা প্রশ্ন। ওই টাইলস ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের দিকেও শিশু শ্রমনীতি না মানার আঙ্গুল তুলেছেন সুধীজন। এদিকে শুক্রবার রাসেলের পোস্ট মর্টেম শেষে লাশ গ্রামের বাড়ি বিরকেদারে দাফন করা হয়েছে। কাহালু থানার ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, ঘটনায় গ্রেফতারকৃত শ্রমিক রুবেল হোসেন ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। তবে মামলায় এই ঘটনাকে ঘিরে সার্বিক বিষয় তদন্ত করা হবে। এবিসি টাইলস ফ্যাক্টরিটি বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার পশ্চিমে। নিহত কিশোরের বাড়ি ফ্যাক্টরি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। এলাকাবাসী জানায়, ওই ফ্যাক্টরির শ্রমিকদের মধ্যে কিশোর রাসেল ছিল। জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী রাসেলের বয়স ১৫ বছর ৭ মাস। বয়সের হিসেবে সে শিশু। ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ ওই শিশু শ্রমিককে রাতের শিফটে কাজ করায়। কলকারখানা আইনের শ্রম নীতিমালায় কোন শ্রমিককে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। আইনে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ। তারপরও দেশে অনেক শিশু শ্রমিক আছে। এই ক্ষেত্রে কোন কারখানায় শিশু শ্রমিক থাকলে তাদের প্রতি সদয় ও সহানভূতিশীল হতে হবে। এলাকার লোক জানায়, এবিসি টাইলস ফ্যাক্টরিতে অনেক সময় ১২ ঘণ্টারও বেশি কাজ করানো হয়। নিহত শিশু শ্রমিক রাসেলও বৃহস্পতিবার রাতে ৮ টায় কাজে যোগ দিয়ে শুক্রবার সকাল ৭ টা পর্যন্ত কাজ করে। সে ছিল ফিনিশিং ইউনিটের শ্রমিক। দরিদ্র পরিবারের ছেলে রাসেল তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। বছর চারেক আগে সে এবিসি টাইলস ফ্যাক্টরিতে কাজ নেয়। তার বাবা আব্দুল হান্নান শারীরিক প্রতিবন্ধী। এক হাতে ভ্যান গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এক হাতে এখন আর ভালভাবে ভ্যান চালাতে পারেন না। রাসেল প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা বেতন পায়। বাবার আয় ও রাসেলের এই অর্থে তাদের সংসার চলে। রাসেলের ছোট ভাই আশিক লেখাপড়া করছে। রাসেলের মা আসমা খাতুন জানায়, বড় ছেলে রাসেলের বয়স সাড়ে ১৫ বছর। বীরকেদার গ্রামে টিনের মাটির দুইটি ঘরে তাদের বাস। এই ঘটনায় ওই পরিবার অসহায় হয়ে পড়েছে। গ্রামবাসী রাসেল নিহত হওয়ার ঘটনার অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চায়। রাসেল নিহত হওয়ার পর সুধীজনের প্রশ্ন : একজন শিশু শ্রমিককে রাতের ১২ ঘণ্টা কাজ করিয়ে নেয়ার কোন নিয়ম আছে কি! দেশের প্রচলিত শ্রম আইনে কোনভাবেই কোন শ্রমিককে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করানোর নিয়ম নেই। তাহলে এবিসি টাইলস কর্তৃপক্ষ কিভাবে শিশু শ্রমিকদের প্রতি এতটা অমানবিক। এই বিষয়ে এবিসি টাইলস ফ্যাক্টরির ম্যানেজার কামরুজ্জামানের কাছে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি অত্যন্ত অশোভন আচরণ ও দুর্ব্যহারের সঙ্গে জানান, ওই ছেলের বয়স ২১ বছর। তিনি কোনভাবেই রাসলেকে কিশোর বলতে রাজি নন। কোন শিশু শ্রমিককে ১২ ঘণ্টা কাজ করানো যায় কি না এই প্রশ্নে তিনি রূঢ়তার সঙ্গে বলেন, তিনি কাজ করান তাতে কার কি আসে যায়। এক পর্যায়ে তিনি কলকারখানার শ্রম আইনের প্রতিও ধৃষ্টতা দেখান। এবিসি টাইলস ফ্যাক্টরির ফিনিশিং ইউনিটে টাইলস নির্মাণের পর কমপ্রেসারের চিকন পাইপের উচ্চ শক্তির বাতাসে পরিস্কার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শ্রমিক রুবেল হোসেন (২৫) শুক্রবার সকাল ৭ টার পর শিশু রাসেলকে ডেকে নিয়ে পায়ুপথে কমপ্রেসারের পাইপ দিয়ে উচ্চ শক্তির বাতাস দেয়। রাসেল গুরুতর আহত হলে ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ তাদের গাড়িতে করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে সে মারা যায়। উল্লেখ্য, দুই বছর আগে ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট খুলনার টুটপাড়ায় এক মোটরসাইকেল গ্যারেজে শিশু রাকিবের পায়ুপথে বাতাস ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার মামলায় মোটর গ্যারেজ মালিক শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টুকে মৃত্যুদ-াদেশ দেয়া হয়।
×