ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

একদিন আমাদেরও কেউ স্মরণ করবে না ॥ গয়েশ্বর

দলীয়ভাবে হান্নান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন না করায় ক্ষোভ

প্রকাশিত: ০৪:৪৬, ১ অক্টোবর ২০১৭

দলীয়ভাবে হান্নান শাহর মৃত্যুবার্ষিকী পালন না করায় ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার কূটনৈতিকভাবে বিশ্বের কাছে এতিম বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ’র স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। হান্নান শাহ স্মৃতি পরিষদ এ স্মরণসভার আয়োজন করে। তিনি বলেন, বিএনপিকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করার পেছনে হান্নান শাহ অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিলেন। দলীয়ভাবে হান্নান শাহ’র মৃত্যুবার্ষিকী পালন না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে একই অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একদিন আমরাও থাকব না, তখন কেউ আমাদের স্মরণ করবে না। খন্দকার মোশাররফ বলেন, সরকার যদি জোরালোভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারত তাহলে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালাতে পারত না। আমরা আশা করব জাতিসংঘ এমন ব্যবস্থা নেবে যাতে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হয়। তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক নিয়ে বিএনপি আশাহত। মিয়ানমারের সঙ্গে সব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধেরও আহ্বান জানান তিনি। বিএনপি রোহিঙ্গাদের জন্য সেফ জোনে বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে ড. মোশাররফ বলেন, পূর্ণ নাগরিক মর্যাদা দিয়ে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নিতে হবে। সেফ জোন রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এটি বরং তাদের জন্য আরও ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনবে। ড. মোশাররফ বলেন, সরকার দেশের প্রধান তিন স্তম্ভকে ধ্বংস করছে। পার্লামেন্টকে বিচার বিভাগের সামনে দাঁড় করিয়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার ফলে বন্ধুপ্রতিম চীন ও ভারত বাংলাদেশের পাশে নেই। দেশের জনগণও এ সরকারের পাশে নেই। তাই তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে ড. মোশাররফ বলেন, নির্বাচন হবে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনে, যে নির্বাচনে দেশের সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রয়োজনে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। স্মরণসভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দুঃখ হয় আমাদের দলের অনেক সিনিয়র নেতাই মৃত্যুবরণ করছেন। আমরা দলের উদ্যোগে কোন স্মরণসভা করি না। স্মৃতি সংসদের মধ্য দিয়ে স্মরণসভার আয়োজন করি। প্রয়াত নেতা খন্দকার দেলোয়ার হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ’র ছবিও দলের কার্যালয়ে নেই। আসুন আমরা পরস্পর পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতে শিখি। তিনি বলেন, হান্নান শাহ চলে গেছেন। অথচ সমস্ত জাতীয়তাবাদী শক্তি ও জনগণের কাছে এখনও তিনি সম্মানিত ও জনপ্রিয়। কারণ হান্নান শাহ বিএনপি ও দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে রক্ষা করতে লড়াই করেছেন, যে লড়াই এখনও চলছে। গয়েশ্বর রায় বলেন, এখানে যারা উপস্থিত আছেন তাদের ১০ শতাংশও ওয়ান-ইলেভেনের দুঃসময়ে জিয়া পরিবারের পাশে ছিলেন না। কিন্তু হান্নান শাহ সেই সময় সবার আগে এগিয়ে এসেছিলেন। তারপরও এখন তার স্মরণসভা দলীয়ভাবে করা হয় না, এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি বলেন, গুণীজন বা সিনিয়র নেতাদের সম্মান না দিলে নিজেদেরও কেউ সম্মান দেবে না, এটি পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, দেশ ও দলের প্রয়োজনে হান্নান শাহ রাজনীতিতে এগিয়ে এসেছিলেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের লাশ তিনিই নিয়ে এসেছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়াপার্সনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজর (অব) মিজানুর রহমান, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি সাইয়্যেদুল ইসলাম বাবুল, হান্নান শাহ’র ছোট ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রমুখ। ড. মোশাররফ বলেন, সরকারের ব্যর্থতার কারণেই ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার সরকার জোর করে এ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। সরকার যদি সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাত তাহলে এ সঙ্কট এত তীব্র হতো না। তিনি বলেন, জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য করতে হবে। সেটি করতে হবে মিয়ানমারকে বয়কটের রেজ্যুলেশন গ্রহণ, সহযোগিতা ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করার মাধ্যমে। দশ বছরেও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে নাÑ বুলু আগামী দশ বছরেও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু। শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে জিয়া সেনা নামক একটি সংগঠন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বুলু বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউইয়র্কে বলেছেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোন আলোচনা হবে না। আমি তাকে স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, বিএনপির সঙ্গে আলোচনা না করলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান আগামী ১০ বছরেও হবে না। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতকে সবকিছু দিয়েছে। কিন্তু আজ রোহিঙ্গা সঙ্কটে তারা আমাদের পাশে নেই। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- জাগপা সভাপতি অধ্যাপক রেহানা প্রধান, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া প্রমুখ।
×