ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়া আজিজুল হক কলেজ

কাটা হচ্ছে গাছ ॥ জানে না কর্তৃপক্ষ

প্রকাশিত: ০৪:১০, ১ অক্টোবর ২০১৭

কাটা হচ্ছে গাছ ॥ জানে না কর্তৃপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজ ক্যাম্পাসের বৃক্ষ নিধন করা হচ্ছে। গত তিন বছরে কয়েক দফায় ক্যাম্পাসের মূল্যবান ৮৩টি বৃক্ষ কেটে ফেলা হয়েছে। কোন সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অল্প সময়ে এতটা গাছ কাটার ঘটনায় বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা প্রশ্ন উঠেছে। গাছ কাটার কোন ঘটনাতেই মামলা হয়নি। অধ্যক্ষ আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের কাছে কোন অভিযোগ করেননি। সর্বশেষ শুক্রবার দিনভর কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবন সংলগ্ন বেগম রোকেয়া হলের ভিতরের সেগুন, জাম, কৃষ্ণচূড়া ও ছাতিম এই চারটি গাছ কাটা হয়। এর আগে ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অযৌক্তিক অজুহাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৭৪টি গাছ কাটা হয়। সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসব গাছ কাটায় কলেজ প্রশাসন কোন দরপত্র আহ্বান করেনি। নিয়মবহির্ভূতভাবে মূল্যবান গাছগুলো নিধন করা হয়। চলতি বছর ২০ আগস্ট কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ২টি বেলজিয়ামসহ ৫টি মূল্যবান গাছ কাটা হয়। প্রতিবারই অধ্যক্ষ বলেন গাছ কাটার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। কলেজ অধ্যক্ষের এমন বক্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্য এই বিষয়টি সুধীজনে বলাবলি হয়। অধ্যক্ষ প্রফেসর সামস্-উল আলম ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। তার যোগদানের পর থেকে কলেজের বৃক্ষ নিধনের হিড়িক পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও সরকারী ছুটির দিনে গোপনে গাছ কাটা হয়। কলেজের মূল ভবনের সামনে গোল চত্বরের চারধারে সৌন্দর্য বর্ধক ও মূল্যবান মেহেগুনি গাছ কাটা হয়। এত গাছ কাটায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের জানান দেন সরকারী ওপর মহলে এবং শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক আছে। যে কারণে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস দেখায় না। সর্বশেষ শুক্রবার দুপুরে কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবন সংলগ্ন বেগম রোকেয়া হলের ভিতরে গোপনে গাছ কাটা শুরু হলে কলেজের ছাত্র সংসদের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম ডাব্লু (যিনি বগুড়ায় আগামী সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী) খবর পান। এ সময় মুষল ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল। এর মধ্যেই তিনি বেগম রোকেয়া হলে গিয়ে দ্রুত গাছ কাটা দেখে হলের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মোস্তফা কামাল সরকারকে জিজ্ঞাসা করেন কেন এসব গাছ কাটা হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক কিছু জানেন না বললে আমিনুল ইসলাম পুলিশে খবর দেয়ার কথা বলেন। এরপর তত্ত্বাবধায়ক বলেন বিষয়টি অধ্যক্ষ জানেন। পরে আমিনুল ইসলাম পুলিশে খবর দেন। ততক্ষণে গাছের গুঁড়ি কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। যারা এসব গাছ কাটেন তাদের মধ্যে ছিলেন করাত কলের শ্রমিক সাজু শেখ, চান মিয়া ও চান্দু। তারা বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ দৈনিক ৫শ’ টাকা দিন হাজিরায় বেগম রোকেয়া হলের গাছ কাটার কাজে লাগায়। দুপুরের মধ্যেই তারা করাত দিয়ে গাছ কেটে ভ্যান গাড়িতে করে পাঠিয়ে দিয়েছেন। চারটি গাছ কাটা হয়েছে। আরও গাছ কাটা হবে কিনা এ বিষয়ে এই শ্রমিকরা বলেন কলেজ প্রশাসন গাছ কাটার জন্য ডাকলেই তারা যায়। এর আগেও তারা গাছ কেটেছে। শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বলেন, মাঝে মধ্যেই কলেজের মূল্যবান গাছ কেটে ফেলা হয়। এ বিষয়ে অজ্ঞাত কারণে ছাত্র সংগঠনগুলো সোচ্চার নয়। বর্তমান অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া যায়। গাছ কাটার বিষয়ে খোঁজখবর করতে শনিবার সকালে ও দুপুরে কয়েক দফায় অধ্যক্ষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগোযোগ করা হলে প্রতিবারই তিনি ফোন ধরেননি।
×