ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করমজলে বার বার কুমিরের ডিম নষ্ট

বিশেষজ্ঞ নেই দু’বছর

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ১ অক্টোবর ২০১৭

বিশেষজ্ঞ নেই দু’বছর

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে নোনা পানির কুমির জুলিয়েট ও পিলপিলের ৯১টি ডিম থেকে একটি বাচ্চাও হয়নি। গত দুই বছর ধরে কেন্দ্রটিতে কুমির বিশেষজ্ঞ না থাকায় বার বার এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে ধারণণা করা হচ্ছে। প্রজনন কেন্দ্রে প্রায় প্রতিবারই কোন না কোন সমস্যায় কুমির জুলিয়েট ও পিলপিলের দেয়া ডিম থেকে ফুটছে না বাচ্চা। আর এ কারণেই গত ১২ বছরে কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল ৭২৩টি ডিম পাড়লেও তা থেকে জন্ম নিয়েছে মাত্র ৪৬৫ বাচ্চা। আর বিভিন্ন কারণে নষ্ট হয়েছে ২৫৮টি ডিম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বলেন, কুমিরের ডিম ইনকিউবেটরে দেয়ার পর থেকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। কোন ফাইনাল ইনফেকশন বা অন্য কোন সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেটি না করার কারণেই এবার পিলপিল ও জুলিয়েটের দেয়া ৯১টি ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, গত বছর অনেক ডিম নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এবার একটি ডিম থেকেও বাচ্চা হয়নি। কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নজর না দিলে ভবিষ্যতে এ প্রজনন কেন্দ্র হুমকির মুখে পড়বে। জানা গেছে, বিলুপ্তপ্রায় নোনাপানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও লালন-পালনের উদ্দেশ্যে ২০০২ সালে করমজল পর্যটন কেন্দ্রে ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে আট একর জায়গায় বন বিভাগের উদ্যোগে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র সরকারী কুমির প্রজনন কেন্দ্র। এরপর কুমির লালন-পালন ও বন্যপ্রাণীর ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য বন বিভাগ তাদের দুজন কর্মকর্তা নির্মল কুমার হাওলাদার ও আঃ রবকে এক বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রে পাঠায়। এরপর থেকে আঃ রব এ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জেলেদের জালে আটক ছোট-বড় পাঁচটি কুমির দিয়ে কেন্দ্রের প্রজনন কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৫ সালে তিনি অবসরে যান। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত এ কেন্দ্রে কোন কুমির অথবা প্রাণী বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হয়নি। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে নোনাপানির দুটি স্ত্রী কুমির জুলিয়েট ও পিলপিল এবং রোমিও নামের একটি পুরুষ কুমির রয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত এ কেন্দ্রে জুলিয়েট ও পিলপিলের মোট ৭২৩টি ডিম থেকে ৪৬৫টি বাচ্চা হয়েছে। গত বছর জুলিয়েট ও পিলপিলের ৯৮টি ডিম থেকে ৪৭টি বাচ্চা হয়। সে সময় ৫১টি ডিম নষ্ট হয়ে যায়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৯ মে জুলিয়েট ৪৩টি ও ২০ মে পিলপিল ৪৮টি ডিম দেয়। ৯০ দিনের মধ্যে ডিম ফেটে বাচ্চা বেরোনোর কথা থাকলেও ১০০ দিন অতিবাহিত হলেও কোন বাচ্চা বের হয়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, আমরা যারা করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে কাজ করছি কুমির বিষয়ে আমাদের কারও কোন প্রশিক্ষণ নেই। আমরা ধারণার ওপর ভরসা করে কাজ করি। আমাদের এখানে জাকির নামে একজন রয়েছেন, যিনি অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত আঃ রব সাহেবের সঙ্গে দীর্ঘদিন সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গত দুই বছর ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর চেষ্টা করেছি। তবে এবার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও জুলিয়েট ও পিলপিলের ডিম থেকে আমরা কোন বাচ্চা পাইনি। আমরা ধারণা করছি, ডিম নিষিক্ত না হওয়াই এর প্রধান কারণ। এ বিষয়ে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মাহামুদুল হাসান বলেন, করমজল প্রজনন কেন্দ্রের কুমির পিলপিল ও জুলিয়েটের ডিম নষ্ট হওয়ার বিষয়টি বন বিভাগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ইতোমধ্যেই করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে একজন কুমির বিশেষজ্ঞের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে লিখিতভাবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
×