ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিপাকে ৫ প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

আট বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ১ অক্টোবর ২০১৭

আট বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর, ৩০ সেপ্টেম্বর ॥ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের আট বছরেও রাজস্ব খাতে স্থানান্তর বা আত্তীকরণ করা হয়নি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া শহীদ শেখ জামাল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ সমাপ্ত পাঁচটি প্রকল্পের ১ হাজার ৩৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এর মধ্যে জামালপুর ও শেরপুর জেলার ৬০ কর্মকর্তা ও কর্মচারীও রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মরত থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রায় ২০ বছর ধরে একই বেতনে চাকরি করায় দুর্মূল্যের বাজারে আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। ২৩ সেপ্টেম্বর জামালপুরে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জামালপুর ও শেরপুর জেলার ৬০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর পক্ষে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের কাছে এক আবেদনে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়। এ সময় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের সচিব ও যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভুক্তভোগীরা জানান, ১৯৯৭ সালে শুরু হওয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া শহীদ শেখ জামাল যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ পাঁচটি উন্নয়ন প্রকল্প কার্যক্রম ২০০৬ সালে শেষ হয়। প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এর কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। চলমান প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সরকারী উন্নয়ন প্রকল্প কর্মকর্তা-কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের পক্ষে প্রকল্পের জনবল উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব স্থানান্তর বা আত্তীকরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে উন্নয়ন প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতের স্থানান্তরের নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-২ সেলিনা খাতুন ২০০৯ সালের ২২ মার্চ ১২.৩৯.১৬.০০.০০.০১.২০০৯ নং স্মারকমূলে চারটি মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন খাতের জনবলকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে পত্র পাঠান। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয় তাদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতে আত্তীকরণ করে নেয়। অভিযোগ রয়েছে, একই পত্রে তিন মন্ত্রণালয় সরকারী উন্নয়ন খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করলেও যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর গাফিলতির কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের আট বছরেও গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি প্রকল্পের এক হাজার ৩৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয়নি। একপর্যায়ে ২০১৩ সালে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের আওতাধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে গোলাম মোস্তাফা বাদী হয়ে যুব ও ক্রীড়া, জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের তিন সচিবকে বিবাদী করে হাইকোর্টে একটি আবেদন দাখিল করেন। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বিচারপতি কর্মচারীদের পক্ষে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে সরকার পক্ষ সুপ্রীমকোর্টে আপীল করেন। সুপ্রীমকোর্টের মাননীয় বিচারপতি হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। সুপ্রীমকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ দায়ের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়কে পত্র পাঠান। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পত্রের জবাবে আইন মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেন- আপীল বিভাগ প্রদত্ত রায়/আদেশসমূহের বিরুদ্ধে রিভিউ দায়ের করলে কোন ফল আসবে না। বরং সরকারের আর্থিক ও সময়ের অপচয় হবে মর্মে পরামর্শ দেয়া হয়। এরপর যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উন্নয়ন খাত থেকে রাজস্ব স্থানান্তর বা আত্তীকরণ না করে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে পত্র পাঠানো হয়। ওই পত্রের প্রেক্ষিতে জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয় একই সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আবেদনকারীদের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়। মন্ত্রণালয়ের রশি টানাটানিতে ইতিমধ্যে পার হয়ে গেছে আট বছর। এরপরও যুব উন্নয়ন অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিরা রহস্যজনক কারণে আবেদনকারীদের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় উন্নয়ন প্রকল্পের সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অর্থাভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এছাড়াও উন্নয়ন প্রকল্পে থাকা অবস্থায় ১৪ কর্মকর্তা মৃত্যুবরণ করায় তাদের পরিবার-পরিজন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
×