ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উল্টোপথে গাড়ি

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ১ অক্টোবর ২০১৭

উল্টোপথে গাড়ি

উল্টোপথে গাড়ি চালানো আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। তারপরও এমন বিধি অনেকেই মানতে চান না। বারবার এই নিয়মের ব্যত্যয় হয় বিধায় নতুন করে আবারও নির্দেশ জারি করতে হয়। কিছুদিন আগেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এক আদেশ বলে ঘোষণা দেয় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কিংবা প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরাও এই বিধির আওতায় পড়বেন। অর্থাৎ কোন ভিআইপি যানবাহনও যদি সোজাপথে গাড়ি না চালায় তাহলে সেখানেও আইনী প্রক্রিয়া বহাল থাকে। গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জব্দ করা থেকে শুরু করে অর্থদ-ও দিতে হয় সংশ্লিষ্টদের। সম্প্রতি রাজধানীর হেয়ার রোডে বিকেল ৪টা থেকে ঘণ্টা দুয়েকের যে পুলিশী অভিযান চালানো হয় সেখানে অন্তত ৫০টি গাড়িকে আটক করে জরিমানা আদায় করা হয়। এসব গাড়ির মধ্যে প্রতিমন্ত্রী, সচিব কিংবা উর্ধতন কর্মকর্তাদের গাড়িও জব্দ করে বিধিসম্মত জরিমানা ধার্য করা হয়। এর মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা এবং সাংবাদিকও রয়েছেন। আইন ‘সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য’ এই বার্তা বিশেষ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ হওয়ায় এই খবরটি দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) আশরাফ হোসেন দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেছেন। সড়কে-মহাসড়কে মাত্রাতিরিক্ত যানজটের সঙ্গে পথচারীদের যেখানে সেখানে রাস্তা পার হওয়ায় হরেক রকম ট্রাফিক সমস্যায় পড়তে হয় সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের। রাস্তা পার হওয়ার জন্য ওভারব্রিজ থাকলেও পথচারীরা যে কোন কারণেই হোক তা ব্যবহার করে না, সেটাও আইনের লঙ্ঘন। বরঞ্চ রাস্তার মধ্য দিয়ে যান চলাচলের সঙ্কটময় মুহূর্তে পথচারীরা হেঁটে পার হয় এবং অনেক বিপর্যয়ও সামলাতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। এরপর উল্টোপথে গাড়ি চালালে ট্রাফিক ব্যবস্থাকে আরও নাজেহাল অবস্থায় পড়তে হয়। এতে সড়ক পরিবহনের আইন-কানুন মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। এই লক্ষ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধিদফতর নিয়ম বিধি অমান্য করার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছেÑ যা থেকে কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে ভিন্নমাত্রার আইন অমান্য করার ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের জরিমানা করা হয়েছে। আর আইনী বিধান মোতাবেক কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। ভোক্তা শ্রেণীকে পণ্য সরবরাহ করার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ এনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়। এই রকম ৩৮টি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকার অর্থদ- দিয়েছে সংশ্লিষ্ট অধিদফতর। পণ্যে বিক্রয় মূল্য লেখা না থাকা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য তৈরি করা ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সরবরাহ করার অভিযোগে এই ধরনের শাস্তি প্রদান করা হয়। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাজার তদারকি করে ভোক্তাদের প্রতারণা করার অভিযোগ পাওয়া যায়। ৯টি বাজার পরিদর্শন এবং ১৫টি লিখিত অভিযোগ সুরাহার মাধ্যমে উপযুক্ত অর্থদ-ে আইনগত বিধির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়াধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয় পর্যায়ে এই বাজার তদারকি অভিযান পরিচালনা করা হয়। উল্লেখিত অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন অধিদফতরের ৯ কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, আদায়কৃত অর্থ থেকে অভিযোগকারীদের পুরস্কার হিসেবে ৩১ হাজার টাকা দেয়া হয়। ন্যায্যমূল্যে অথবা স্থিরমূল্যে পণ্য বিক্রির অধিকার যেমন বিক্রেতার একইভাবে ক্রেতা সাধারণও সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে না। আবার স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে এমন খাদ্যসামগ্রী কিংবা সময় পার হওয়া ওষুুধ সরবরাহ করাও বিধিনিষেধের আওতায় পড়ে। যা লঙ্ঘন করলে বিচারিক ব্যবস্থার মুখোমুখি হতে হয়। জানা গেছে, জনগণের সচেতনতা বাড়ানো এবং পণ্যমূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সততা ও দায়বদ্ধতাকে নিশ্চিত করতে সর্বোপরি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুুধ সরবারাহ করা থেকে বিরত থাকতে এ ধরনের অভিযান চালানো হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ভোক্তাদের অভিযোগ করার অধিকারও রয়েছে। সামগ্রিক ব্যবস্থা জনসম্মুখে আসলে সংশ্লিষ্ট সবাই সচেতন হতে আগ্রহী হবে। আইনী ব্যবস্থাকে তোয়াক্কা না করলে কিংবা পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির আশ্রয় নিলে সংশ্লিষ্টদের তার মূল্য দিতে হবে। বাজার তদারকির সময় গণসচেতনতার ওপর একটি লিফলেটও বিতরণ করা হয়। এসব অর্থদ- ভেজাল ও অনিয়মকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে অনেক বেশি সতর্ক করবে যাতে ভোক্তা সাধারণ তাদের প্রাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে কোনভাবেই বঞ্চিত না হয়। সাধারণ মানুষও সেই প্রত্যাশাই করে।
×