ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এএফপি সাংবাদিক সুইহার্ড হত্যার ওপর গ্রন্থ

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ১ অক্টোবর ২০১৭

এএফপি সাংবাদিক সুইহার্ড হত্যার ওপর গ্রন্থ

সময়টা ১৯৬২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেল। এএফপির রিপোর্টার পল সুইহার্ড ওই সময় মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পৌঁছে গেছেন। ‘ওলি মিস’ নামে কেবল শ্বেতাঙ্গদের এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তখন প্রথমবারের মতো এক আফ্রিকান-আমেরিকানের ভর্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাচ্ছে ছাত্ররা এবং মার্কিন মার্শালরা ঢিল নিক্ষেপকারী ছাত্র ও অন্যান্যের বিরুদ্ধে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। কাঁদানে গ্যাসে আচ্ছন্ন পুরো ক্যাম্পাস। রাত নামার আগেই পিঠে গুলিবিদ্ধ হন ৩০ বছর বয়স্ক সুইহার্ড। গুলি তার হৃৎপি- ভেদ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৬০ -এর দশকে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের মধ্যে একমাত্র তিনিই নিহত হয়েছেন বলে জানা যায়। তার মৃত্যুর ঘটনার সমাধান বা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি এ পর্যন্ত। সুইহার্ডের মৃত্যু ও ১২ আমেরিকান সাংবাদিকের ঘটনা নিয়ে মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ক্যাথলিন উইকহ্যাম ‘উই বিলিভড উই ওয়্যার মর্টাল’ শীর্ষক একটি নতুন বই লিখেছেন। ১৯৬২ সালে ক্যাম্পাস বর্ণ বিভেদমুক্তকরণের উদ্যোগকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতার সৃষ্টি হয় তার ওপর প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্বে ছিলেন এ সাংবাদিকরা। সুইহার্ডের হত্যা ও মার্কিন বিমান বাহিনীর অভিজ্ঞ সৈনিক কৃষ্ণাঙ্গ জেমস মেরিডিথের মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিরুদ্ধে উদ্ভূত দাঙ্গার ৫৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার বইটি প্রকাশ করে ইয়োকনাপাতাওফা প্রেস। উইকহ্যাম এএফপির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, তিনি সুইহার্ডের ঘটনা তুলে এনেছেন। কারণ এ ঘটনার অনেকটাই স্মৃতিতে চাপা পড়ে গেছে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে নিজেকে অপরাধী বলে মনে হয় আমার যে, একজন রিপোর্টার নিহত হয়েছিলেন এবং সে বিষয়ে কিছুই লেখা হয়নি। আমি তাকে জনসমক্ষে পরিচিত করতে চাই। ওই রাতে ওলি মিস ক্যাম্পাসে সুইহার্ডের কি ঘটেছিল তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি আমি দৃঢ়তার সঙ্গে। সেখানে আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন সৈন্যরা পৌঁছার আগ পর্যন্ত কয়েক হাজার সংহতি বিরোধীর সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত থাকে কয়েকশ’ মার্কিন মার্শাল। তিনি বলেন, কে বা কারা সুইহার্ডকে হত্যা করেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টায় তদন্তের মতো বিষয়টায় কাজ করেছি আমি। কারণ তখন কি ঘটেছিল তা সেখানে কেউ না কেউ জানে। মার্কিন বিচার বিভাগের সিভিল রাইটস ডিভিশন ২০১১ সালে সুইহার্ডের মৃত্যুর তদন্তে চার্জ গঠন ছাড়াই বন্ধ করে দেয়। উইকহ্যাম ব্যাপক চেষ্টা সত্ত্বেও তার বইতে কোন সুনির্দিষ্ট পরিণতিতে পৌঁছোতে পারেননি। তিনি বইতে লিখেছেন, বেশ কিছু অনুমিত ধারণা সত্ত্বেও পলের হত্যা এক রহস্য হয়ে রয়েছে। স্পষ্টভাবে যতটুকু বোঝা যায় তা হচ্ছে, সুইহার্ডকে ওই সন্ধ্যায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। তার পিঠে ৩৮ ক্যালিবারের বুলেট ছোড়া হয়েছিল এক ফুটেরও কম দূরত্ব থেকে এবং এ বুলেটেই তিনি নিহত হন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে একথা বলা হয়। বইটির ভাষ্য অনুযায়ী, ইংরেজ মা ও ফরাসী বাবার ছেলে সুইহার্ড ফ্রান্সের পশ্চিম উপকূলে সেন্ট ম্যালোতে বেড়ে ওঠেন এবং সাইপ্রাসে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। লালচুল ও লাল দাড়িম-িত সুইহার্ডকে যখন ওই সংঘাতের সংবাদ সংগ্রহের জন্য মিসিসিপিতে পাঠানো তখন তিনি এএফপির নিউইয়র্ক ব্যুরোর একজন কপি এডিটর ছিলেন। তখন তার সঙ্গে ছিলেন নিউইয়কের বাসিন্দা ফটোগ্রাফার স্যামি স্কুলম্যান (৫৬)। সুইহার্ড ও স্কুলম্যান নিউইয়র্ক থেকে বিমানে করে মিসিসিপির জ্যাকমনে যান এবং একটি সাদা শেভ্রোলেট ভাড়া করে গবর্নরের বাসভবনের দিকে রওয়ানা হন। সেখানে হোয়াইট সিটিজেন কাউন্সিলের উদ্যোগে সংহতির বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে উপস্থিত ছিল প্রায় ৩ হাজার লোক। সুইহার্ড এ সমাবেশের পর হোয়াইট সিটিজেন কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালকের সাক্ষাতকার নিতে যান। সুইহার্ড ও স্কুলম্যান এরপর গাড়ি চালিয়ে প্রায় চার ঘণ্টার পথ অক্সফোর্ডে মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পথে তারা রাত ৮টায় রেডিওতে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ভাষণ শোনেন। ভাষণে তিনি আদালতের রুলিং কার্যকর করার জন্য মার্কিন মার্শালদের নির্দেশ দেন। রুলিংয়ে বলা হয়, মেরিডেথকে মিসিসিপি বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হলো। সুইহার্ডও স্কুলম্যান কেনেডেরি ভাষণ শেষ হওয়ার পরপরই প্রায় রাত ৮টায় গোলযোগপূর্ণ ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছান। পথে মিসিসিপি রাজ্যের এক হাইওয়ে টহল পুলিশ তাদের গাড়ি থামায়। -এএফপি
×