ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩৬৯ রানে পিছিয়ে মুশফিকরা

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

৩৬৯ রানে পিছিয়ে মুশফিকরা

মিথুন আশরাফ ॥ প্রথম ইনিংসেই বিপদে পড়ে গেল বাংলাদেশ। প্রথমদিনেই বোঝা হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রানের পাহাড়ে চাপা পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই হল। দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ৩ উইকেটে ৪৯৬ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাট হাতে নেমে দ্বিতীয় দিন শেষ হওয়ার আগে ৩ উইকেট হারিয়ে ১২৭ রান করে। বিপদে পড়ে যায়। মুমিনুল হক (২৮*) ও তামিম ইকবাল (২২*) আজ তৃতীয় দিনে ব্যাট হাতে নামবেন। এখনও ৩৬৯ রানে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় দিন দ্বিতীয় সেশন পর্যন্ত খেলে। তারা যেন অপেক্ষা করছিল, কখন উইকেটে পেসাররা সুবিধা পেতে শুরু করবে। সেই সুবিধা যখনই মুস্তাফিজ, শফিউলরা পেলেন, তখনই ইনিংস ঘোষণা করল দক্ষিণ আফ্রিকা। বোঝাই গেল, পেস আক্রমণে টাইগার ব্যাটসম্যানদের ডোবাতে চায় দক্ষিণ আফ্রিকা। তাই হলো। শুরুতেই ২ উইকেট হারিয়ে বসল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল প্রস্তুতি ম্যাচে মাংসপেশিতে চোট পেয়েছিলেন। টান লেগেছিল। সুস্থ হয়েও ওঠেন। মনে করা হয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে সাবলীলভাবে খেলতেও পারবেন। কিন্তু যখন বাংলাদেশের ইনিংস শুরু হলো, ইমরুল কায়েস ও লিটন কুমার দাস ওপেনিংয়ে নামলেন। তখনই বোঝা হয়ে গেল, তামিম পুরোপুরি সুস্থ নন। দলের ১৬ রানে ইমরুল আউটের পর মুমিনুল হক নামলেন। ৩৬ রানে লিটন আউট হওয়ার পর মুশফিক নামলেন। তখন তামিমের ইনজুরি মুক্ত না হওয়ার বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। তামিম কেন তাহলে একাদশে? সেই প্রশ্নও উঠে গেল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে একের পর এক ভুল হচ্ছে। সেই ভুলে শেষপর্যন্ত না আবার বড় ধরনের খেসারতই দিতে হয়। ৫৪ ও ৬৩ রানের সময় মুশফিক স্লিপে আউট হওয়া থেকে বাঁচেন। বাংলাদেশ স্পিনাররা কিছুই করতে পারেননি। অথচ দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররা গতির ঝড় তোলার সঙ্গে যেন স্পিনাররাও দ্যুতি ছড়াতে থাকেন। দুইবার ‘নতুন জীবন’ পাওয়ার পরও ৪৪ রান করে ১০৩ রানে গিয়ে স্পিনার মহারাজের বলে আউট হয়ে যান মুশফিক। বাংলাদেশের ঘাড়ে বিপত্তি চেপে বসে। মুশফিক আউট হওয়ার পর ব্যাট হাতে নামেন তামিম। শেষবেলায় ব্যাট হাতে নেমে উইকেট আঁকড়েও থাকেন। মুমিনুলকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তামিম। আজ প্রথম সেশনটাই বাংলাদেশের জন্য বিপজ্জনক। এই সেশনটা অতিক্রম করতে পারলে বিপদ উতরে যাওয়া যাবে। নয়ত বিপদ আরও ঘনিয়ে আসবে। প্রথমদিনে ১ উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রান করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ডিন এলগার ১২৮ রানে ও হাশিম আমলা ৬৮ রানে ব্যাট করছিলেন। দ্বিতীয় দিনে প্রথম সেশনেই বিশাল রান করে ফেলে প্রোটিয়ারা। ৪১১ রান করে ফেলে। এলগার ও আমলা মিলেই প্রথম সেশনটি কাটিয়ে দেন। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই স্কোরবোর্ডে আরও ১১৩ রান যোগ করে ফেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই সময়ে এলগার প্রথমবারের মত দেড়শ রান করে ফেলেন। দুইশ রানের কাছাকাছি চলে যান। আমলাও ক্যারিয়ারের ২৭তম সেঞ্চুরি পূরণ করে ফেলেন। দুইজন মিলে নিখুঁত ব্যাটিং করতে থাকেন। দুইজন মিলে ২০০ রানের বেশি জুটিও গড়ে ফেলেন। দ্বিতীয় উইকেটে ২১৫ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। আরেকদিকে বাংলাদেশের পেসার, স্পিনাররা বল করতেই থাকেন। কিন্তু কোন কাজ হয় না। প্রথমদিনটি শেষে বাংলাদেশ ক্রিকেটার সাব্বির রহমান রুম্মন বলেছিলেন, ‘ওরা যদি তিন দিন ব্যাটিং করে আপনি বলতে পারবেন না ওরা কত রান করবে। ১০০০ রান হতে পারে, ৭০০ রানও পারে।’ দক্ষিণ আফ্রিকা যেন সাব্বিরের কথাই প্রমাণ করতে চায়। অবশ্য প্রথম সেশনে যেভাবে এগিয়ে যেতে থাকে প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানরা, দ্বিতীয় সেশনে সেই ধারা বজায় রাখতে পারেনি। এবার বাংলাদেশ বোলাররা একটু দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে আঘাত হানেন। মধ্যাহ্ন বিরতির পর মুহূর্তেই আমলাকে সাজঘরে ফেরান শফিউল ইসলাম। অফ সাইডে ওয়াইড দূরত্বে বল ছোড়েন শফিউল। আমলা বলটিতে শট নেন। বলটি আকাশের দিকে উঠে যায়। ব্যাক ওয়ার্ড পয়েন্টে মেহেদী হাসান মিরাজ ক্যাচ ধরে ফেলেন। ৪০ রানে প্রথমদিনে যেখানে আউট হতেন আমলা, সেখানে ১৩৭ রানে গিয়ে আউট হন। অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার ২ উইকেটের পতন ঘটে। যে বাংলাদেশ বোলাররা ঝিমিয়ে পড়েছিলেন, আমলার আউটের পর যেন একটু তরতাজা হয়ে ওঠেন। আর ৩৪ রান যোগ হতেই এলগারকেও ড্রেসিংরুমের পথ ধরতে হয়। এবার এলগারকে আউট করেন মুস্তাফিজুর রহমান। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট পেস বান্ধব হবে ধরে নিয়ে মুস্তাফিজের দিকেই সবার নজর ছিল। কিন্তু অনেক দেরিতে মুস্তাফিজ তার ‘কাটার’ দেখাতে পারেন। অফ সাইডের বাইরের বলটি মিডউইকেট দিয়ে খেলতে গিয়ে মুমিনুল হকের হাতে ধরা পড়েন এলগার। ততক্ষণে অবশ্য দেড়শ রান ছাড়িয়ে ১৯৯ রানে চলে যান এলগার। ১ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি করতে পারেননি। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার সময়ই তার স্কোরবোর্ডে ১৭২ রান জমা ছিল। শেষপর্যন্ত ১৯৯ রানে এলগারও আউট হন। বাংলাদেশ শিবিরেও যেন একটু স্বস্তি আসে। দ্বিতীয় সেশনে প্রোটিয়াদের ভালই চাপে রাখা যায়। এই সেশনে প্রোটিয়ারা আরও ২ উইকেট হারিয়ে ৮৫ রান যোগ করে। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, কতটা চাপ তৈরি হয়। কিন্তু সেই চাপ বেশিক্ষণ নিতে হয়নি টেম্বা বাভুমা (৩১*) ও অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিসের (২৬*)। দুইজন মিলে দলকে ৪৯৬ রানে নিয়ে গিয়ে চা বিরতিতে যান। ইনিংসও ঘোষণা করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ব্যাট হাতে নেমে দ্রুত উইকেট হারাতে থেকে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
×