ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টিউমার অপসারণের পর মুক্তামণি এখন সুস্থ, তবে দুর্বল

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

টিউমার অপসারণের পর মুক্তামণি এখন সুস্থ, তবে দুর্বল

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের ৬০৪নং কেবিনে ভর্তি আছে মুক্তামণি। তৃতীয় দফায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার হাতের রক্তনালির সব টিউমার অপসারণের পর বর্তমানে সে সুস্থ আছে। তবে তার শারীরিক দুর্বলতা বেড়েছে। সঙ্গে খাওয়ায় অরুচি ও মাঝেমধ্যেই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। তবে চিকিৎসকরা এগুলো স্বাাভাবিক লক্ষণ মেনেই চিকিৎসা করছেন। মুক্তামণির ডান হাতের ক্ষতস্থান এখনও ব্যান্ডেজে মোড়ানো রয়েছে। দুদিন পরপর চলছে ড্রেসিং। আগামী সপ্তাহে তার হাতের ক্ষতস্থানে ‘স্কিন গ্রাফটিং’ তথা নতুন করে চামড়া বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে জানান ঢামেকের বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক চিকিৎসক সামন্তলাল সেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মুক্তামণির কেবিনে গিয়ে দেখা গেল সে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। গায়ে পাতলা চাদর জড়ানো। পাশে বসে আছেন তার মা। জানা গেল, সকাল সাড়ে ৯টায় মুক্তাকে ড্রেসিংয়ের জন্য নেয়া হয়েছিল। এরপর তাকে দুই ঘণ্টা আইসিইউতে রাখা হয়। দুপুর দেড়টা নাগাদ তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়। মুক্তাকে খুবই দুর্বল দেখাচ্ছিল। এরই মধ্যে কথা শুনে চোখ মেলল মুক্তা। কেমন আছে সে জানতে চাইলে ‘ভাল’ বলে উত্তর দিল মুক্তা। ‘হাতে খালি ব্যান্ডেজ আর ব্যান্ডেজ। একটু আগেই ড্রেসিং করছে। হাতে এখন আর ব্যথা করে না, চুলকায় না। হাতটা আগের চেয়ে হাল্কা লাগে।’ তার ডান হাতে মোটা ব্যান্ডেজ আর বাঁ হাতে রক্ত দেয়ার জন্য ক্যানোলা লাগানো। তাড়াতাড়ি হাতে চামড়া লাগানো শেষ হলেই সে বাড়ি ফিরতে পারবে! এ আশাতেই দিন গুনছে মুক্তামণি। মুক্তামণির এ কঠিন সময়ে পরিবারের সদস্যরাই তার ভরসা। তার পাশে ছায়াসঙ্গী হয়ে মা, বাবা, বোন ও ছোট ভাই সবাই তাকে সুস্থ হয়ে ওঠার সাহস যোগাচ্ছে। মুক্তার বন্ধু ও বোন বলতে তার যমজ বোন হীরামণি। তার সঙ্গেই সব সময় গল্প ও খুনসুটি করে হাসপাতালের রুদ্ধ কেবিনে সময় কাটে বারো বছরের মেয়েটির। তবে চোখের সামনে হীরামণির ঘুরে বেড়ানো দেখে মাঝেমধ্যেই কষ্ট হয় মুক্তামণির। কারণ বিছানা তার সঙ্গী। তবে আশাহত নয় মুক্তা। সে জানালো, ‘ভাল হয়ে গেলি তো কত ঘুরে বেড়াতি পারব। হাতের চামড়া লাগানো হলি আমি ভাল হয়ে যাব।’ শরীরের অন্য জায়গা থেকে চামড়া এনে হাতে লাগানোর জন্য মুক্তামণি চিকিৎসকদের কথা অনুযায়ী দিনে চারটি ডিম খাচ্ছে। অন্যান্য খাবারও খাচ্ছে। মুক্তামণির শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে মা আসমা খাতুন জনকণ্ঠকে বলেন, ‘কালকে জ্বর এসেছিল। পরে বিকেলে আবার জ্বর কমেও গিয়েছিল। মাঝে মাঝেই জ্বর আসে মেয়েটার। ডাক্তার কইছে তেমন সমস্যা নাই। আজকে সকালে আবার ড্রেসিং করল। ইদানীং মুক্তামণির চোখেও একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। মেয়ের চোখ দিয়ে পানি পড়ে। আগের তুলনায় মনে হচ্ছে ওর খাওয়ায় রুচিও কমে গেছে। মাঝে মাঝেই বলে মা শরীর দুর্বল লাগছে।’ জাতীয় বার্ন এ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের প্রধান সমন্বয়ক ডাঃ সামন্তলাল সেন জনকণ্ঠকে বলেন, মুক্তামণির উপযুক্ত চিকিৎসা চলছে। এমন অপারেশনে এ রকম জ্বর আসা স্বাভাবিক। জ্বর আসবে, ছেড়েও যাবে। মুক্তামণির শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ভাল। মানসিক শক্তিও আছে বেশ। আমরা আগামী সপ্তাহে তার হাতে চামড়া লাগানোর অপারেশনটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার চিকিৎসায় বিন্দুমাত্র ঘাটতি নেই। তার শারীরিক দুর্বলতা কাটাতে প্রতিদিন চারটি করে ডিম খাওয়ানোর নির্দেশনা রয়েছে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে জানান সামন্তলাল সেন। গত জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিরল রোগে আক্রান্ত মুক্তামণির সংবাদ প্রকাশ হয়। পরে মুক্তাকে বিনামূল্যে চিকিৎসার দায়িত্ব নেন স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তার চিকিৎসার যাবতীয় দায়ভার বহনের দায়িত্ব নেন। ঢামেকে ভর্তি করা হয় মুক্তাকে। মুক্তার চিকিৎসার জন্য একটি বোর্ড গঠনসহ সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢামেক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা জানান, মুক্তামণির অস্ত্রোপচার এখানে সম্ভব নয়। অবশেষে ঢামেক হাসপাতালের চিকিৎসকরা তৃতীয় দফায় মুক্তামণির হাতে অস্ত্রোপচার করেন এবং তার হাতের রক্তনালিতে থাকা সব টিউমার অপারেশনের মাধ্যমে তিন কেজি মাংসপি- অপসারণ করেন।
×