ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নয় মাসে সাড়ে পাঁচ শ’ কোটি টাকার ইয়াবার চালান আটক

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নয় মাসে সাড়ে পাঁচ শ’ কোটি টাকার ইয়াবার চালান আটক

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস থেকে ॥ গত ৯ মাসে সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকার ইয়াবার চালান আটক করেছে র‌্যাব। সর্বশেষ গত বুধবার ভোরে ৮ লাখ পিস ইয়াবাসহ কক্সবাজারের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপের সমুদ্রসীমায় একটি দ্রুতগামী ফিশিং ট্রলার আটক করে তল্লাশি চালানোর পর উদ্ধার করা হয় ৪০ কোটি টাকা মূল্যের ৮ লাখ পিস ইয়াবা। এই ঘটনায় ও ইয়াবা পাচারের অপরাধে ৩ রোহিঙ্গাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব সেভেনের কক্সবাজারের কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন ও এএসপি সৈয়দ মোহসিনুল হকের নেতৃত্বে একটি দল। এক মাসে রোহিঙ্গাদের জনস্্েরাতে কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের বিচরণের পাশাপাশি ইয়াবা পাচারের ঘটনাও ঘটছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। শুধু ইয়াবার চালান উদ্ধারই নয়, পাচারকারী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী এমনকি এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত সকলকেই পাকড়াও করতে র‌্যাব সেভেনের অভিযান চলছে। দীর্ঘদিনের মনিটরিংয়ে এ ধরনের বিশাল এ চালান উদ্ধারসহ মাদকের পেছনে যারা কাজ করছে তাদের যে কোন সময় আইনের আওতায় আনতে প্রক্রিয়া অব্যাহত। গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আটক করা হয় ১ কোটি ৩০ লাখ ১২ হাজার ৮৬৫ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট। এই ঘটনায় মিয়ানমারের মংডু এলাকার হাফিজুল্লাহ ও বদি আলম, আকিয়াব এলাকার মোঃ জমিল ও কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকার মৃত সোবহান হাওলাদারের ছেলে মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সাগরে যেসব ইয়াবার চালান ধরা পড়েছে সেগুলো কক্সবাজার পর্যন্ত নিয়ে আসছে মিয়ানমারের পাচারকারীরা। কক্সবাজার থেকে আনোয়ারাকেন্দ্রিক ফিশিং ট্রলার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পাচার হচ্ছে । তবে কক্সবাজার থেকে আনোয়ারা হয়েই ইয়াবার চালান আসছে সবচেয়ে বেশি। কক্সবাজারের মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফ ইয়াবা পাচারের অন্যতম রুট। তবে মিয়ানমার এবং দেশীয় চোরাচালানীদের অন্যতম রুট হচ্ছে আনোয়ারা-গহিরা উপকূলীয় অঞ্চল। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল চট্টগ্রামে ২০ লাখ পিস ইয়াবাসহ এফভি মোহসেন আউলিয়া নামক একটি ট্রলার আটক হয়েছে। র‌্যাবের অভিযানে আটক এ ট্রলার থেকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইয়াবা সিন্ডিকেট প্রধান মোজাহার ও ট্রলার মালিক জলিলসহ এ সিন্ডিকেটটি এক বছরে ৭৬ লাখ ইয়াবা পাচারের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল বলে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। আটক এসব ইয়াবা আনোয়ারা-গহিরা এলাকার সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হয়। উদ্ধার এসব ইয়াবার মূল্য প্রায় শতকোটি টাকা। গ্রেফতারদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মিয়ানমার হতে শুক্কুর, লালমিয়া ও মগ প্রকাশ সেঞ্চু ইয়াবার চালান বঙ্গোপসাগরের মৎস্য ধরার কাজে নিয়োজিত ট্রলার ব্যবহার করে পাচার করছে। কুতুবদিয়া, কক্সবাজার, টেকনাফ, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, ছেড়াদ্বীপ ও বর্মার পঁচাখালির মধ্য দিয়ে ইয়াবার চালান আসছে। ছেড়াদ্বীপের পশ্চিম দিক হতে মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতার বাইরে থাকা মোক্তারি এলাকায় আসে। এছাড়াও কাটালিয়া দিয়ে আনোয়ারা-গহিরাপথেও আসছে ইয়াবার চালান। ওই ২০ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় জড়িতরা হল মোজাহার সিন্ডিকেটের প্রধান মোজাহার, ট্রলার মালিক জলিল প্রকাশ লবণ জলিল সিন্ডিকেট হলেও মূলত মোজাহারের মাধ্যমেই এসব চালান মিয়ানমার থেকে দেশে ঢুকছে। এ ঘটনায় মকতুল হোসেন, মোঃ নুর, হেলাল, আবদুল খালেক, জানে আলম, লোকমান এনায়েত উল্লাহকে আটক করে র‌্যাব সদস্যরা। অভিযোগ রয়েছে, ইয়াবা কেউ পাচার করছে, আবার কেউবা ইয়াবা বহন করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ কেউ ইয়াবাকে কেন্দ্র করে অল্প সময়ে কোটিপতি বনে যাচ্ছে। ইয়াবা নিয়ে নানা প্রশ্ন চট্টগ্রামে। তবে প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসনের লোকজন। দায়ীত্বহীনতা আর অর্থবাণিজ্যের প্রশাসন তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতার কারণে এখনও ইয়াবার চালান স্থানান্তরিত হচ্ছে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, ততদিন ইয়াবার চালান বন্ধ হবে না যতদিন পর্যন্ত প্রশাসনের লোকজন এ নিয়ে বাণিজ্যে মেতে থাকবে। এই কারণে চট্টগ্রামে জলপথে ও সড়কপথে ইয়াবার চালান আসছে প্রতিনিয়ত। তবে এরমধ্যে ইয়াবার বড় বড় চালানগুলো আসে সমূদ্রপথে ও নৌপথে। র‌্যাব সেভেনের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, গত নয়মাসে ৩টি ফিশিং ট্রলারসহ মিয়ানমার ও এদেশের ২০ ইয়াবা পাচারকারীকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে প্রমাণ হলো যারা সাগরে মাছ ধরার নামে জেলে হিসেবে প্রশাসনের তালিকায় রয়েছে তাদের অনেকেই ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কয়েকটি সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ী চক্র মাছের ব্যবসার আড়ালে ইয়াবার চালান মিয়ানমার হতে চট্টগ্রামে নিয়ে আসছে। ইয়াবা পাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তারা মূলত কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকার। উপকূলীয় এলাকায় থাকার কারণে এরা নৌপথকে বেছে নিয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল কক্সবাজারের গভীর সমুদ্র থেকে একটি ফিশিং ট্রলার তল্লাশি করে সাড়ে চার লাখ ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনায় ৫ মিয়ানমার নাগরিক ও ৪ জেলেবেশী মাদক পাচারকারীকে গ্রেফতারের মধ্যদিয়ে প্রমাণ মিলেছে। এর আগে গত বছরের ৫ অক্টোবর আরেকটি ফিশিং ট্রলার থেকে ২০ কোটি টাকা মূল্যের ৫লাখ পিস ইয়াবার বড় চালান উদ্ধার করে র‌্যাব। র‌্যাব সেভেন সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে কক্সবাজারের গভীর সমুদ্রে একটি মাছ ধরার ট্রলারকে ধাওয়া করে আটক করে। ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তায় গভীর সমুদ্রে ফিশিং ট্রলার এফবি ‘জানিবা খালেদা’ তল্লাশি করা হয়। ট্রলারে মাছ রাখার প্রকোষ্ঠের ভেতর সুকৌশলে লুকানো ৪ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা প্রথম পর্যায়ে ৮ পাচারকারীসহ গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে ৫জন মিয়ানমারের নাগরিক। বাকি তিনজন চট্টগ্রাম,নোয়াখালী ও খাগড়াছড়ির। গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট নিয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাত্রা করে। ফিশিং ট্রলার থেকে উদ্ধার ইয়াবার মালিক কক্সবাজারের রোমানিয়ারছড়া গ্রামের আবু বক্করের ছেলে মোঃ সুলতান আহম্মদ । পরে তার বাসায় অভিযান চালিয়ে আরও ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে র‌্যাব। এই অভিযানে গ্রেফতারকৃত বাকিরা হলে খাগড়াছড়ির রামগড় এলাকার মিজানুর রহমান, রংপুরের মিঠাপুকুর গায়েশ্বর গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ও ফিশিংট্রলার চালক আব্দুর রউফ। মিয়ানমারের নাগরিক হাবিবুল্লাহ,জাহিদ হোসেন, জাহাঙ্গীর, আব্দুল হামিদ ও ওসমান গণি।
×