ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনীতি সমিতির সংবাদ সম্মেলন

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে অর্থনৈতিক কূটনীতি চালানোরও পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে অর্থনৈতিক কূটনীতি চালানোরও পরামর্শ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল করতেই পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কট সৃষ্টি করা হয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। আর এ সঙ্কট সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন সমিতির সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংগঠনের অবস্থান তুলে ধরে সাবেক সভাপতি এ পরামর্শ দেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমিতির বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন। লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর যে ধরনের নির্যাতন চালাচ্ছে তা কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বিষয়টিকে ‘গণহত্যা’, ‘জাতিগত নিধন’, ‘সমাজগোষ্ঠী নিধন’ ও ‘অজনগণকরণ’ হিসেবে দেখছে। রোহিঙ্গা সমস্যা কোন সাধারণ, সাময়িক বা আপদকালীন বিষয় নয়। কারণ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য প্রাকৃতিক সম্পদে প্রাচুর্য ও ভূরাজনৈতিক অবস্থানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মিয়ানমারের এ রাজ্যের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণে বিনোয়োগ ও সামরিক আগ্রাসী শক্তিসহ স্বৈরাচার জিইয়ে রাখছে। উঠতি অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল করাসহ সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই এ সঙ্কটের পেছনে কাজ করেছে। তিনি বলেন, যদিও আমরা কূটনীতিক না, রাজনৈতিক কূটনীতি দিয়ে পুরো সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে করি না। রাজনৈতিক কূটনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি চালানো ভালো হবে। তিনি আরও বলেন, আলোচনা দ্বিপক্ষীয় করতে হয়, বহুপক্ষীয়ও করতে হয়। এ বিষয়গুলো কাজে লাগে আমি জানি। আনুষ্ঠানিক আলোচনা যখন হয়, অনেকে অনেক কথা বলেন, অনেক মত দেন, অনেক ভাল কথা বলেন। কিন্তু আসল কাজটা হয় গ্রীনরুমে। এখন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কূটনীতির গ্রীনরুমে পলিটিক্সে আমরা কতটুকু ভাল করব, সেটা একটা বিষয়। অভ্যন্তরীণভাবে আমরা কতটুকু গণতন্ত্র ও বৈশ্বিক বিষয়ের চর্চা করব, সেটা একটা বিষয়। কারও কাছে গিয়ে যদি বলি এটা নিয়ে, তারা যদি বলে তোমাদের নিজের মধ্যেও তো এ প্রবলেম আছে। তাই অর্থনৈতিক কূটনীতিও আমাদের চালিয়ে যেতে হবে। বিভিন্ন দেশ ও দেশের মানুষকে নিয়ে বিশ্ব জনমত গঠনের আহ্বান জানিয়ে বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ বলেন, এটা কেবল অর্থনৈতিক বিষয় নয়। এটার যে পরিবেশগত প্রভাব সেটাও আছে, সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ থেকে বক্তব্য এসেছে। আমরা একটা কথা বলেছিলাম, আসিয়ান অঞ্চলের যে দেশগুলোতে প্রভাবটা পড়েছে তাদের সম্পৃক্ত করতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। চীন-ভারতের স্বার্থের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চীনের বিনিয়োগ বেশি মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্টে। বিনিয়োগ কয়েক ট্রিলিয়ন ডলার। ভারতের বিনিয়োগ আছে কয়েক বিলিয়ন ডলার। এটা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের যে প্রাকৃতিক সম্পদ, গ্রেসিয়াম, ইউরেনিয়ামসহ যেগুলো আছে। আবার বঙ্গোপসাগরের সংযোগকারী। রাখাইন রাজ্যের ইউরেনিয়াম সবচেয়ে গুণগত মানসম্পন্ন হওয়ায় বৈশ্বিক শক্তিগুলোর মধ্যে এ নিয়ে প্রতিযোগিতা আছে। ইউরেনিয়ামের ওপর নজর চীনের বহু আগে থেকেই। আর ওই দূর থেকে নজরে রেখেছেন কে... তিনি হয়ত ওপর থেকে দেখছেন, এরা একটু মারামারি করুক। পরে আমি বলব, এই এত মারামারি কীসের, একটু দেখি তো কী হলো? সঙ্কট সমাধানে কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নসহ অর্থনীতি সমিতির পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি, সুপারিশ ও পরামর্শ তুলে ধরা হয়। মিয়ানমার পৃথিবীর দশম বৃহৎ সামরিক বাহিনীর দেশ উল্লেখ করে রোহিঙ্গা নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে মিয়ানমারের স্বৈরশাসক-যুদ্ধাপরাধীদের বিদেশী ব্যাংক হিসাব জব্দেরও দাবি জানান আবুল বারকাত।
×