ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আরপিওসহ নির্বাচনী আইন অবশেষে বাংলায় রূপ পাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আরপিওসহ নির্বাচনী আইন অবশেষে বাংলায় রূপ পাচ্ছে

শাহীন রহমান ॥ আগামী নির্বাচনের আগেই গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) ১৯৭২ এবং সীমানা নির্ধারণ আইনসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইনগুলো বাংলায় রূপ দেয়া হচ্ছে। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সহজে জনগণের বোধগম্য করার জন্য আরপিওসহ এসব আইনের ধারা বাংলায় করার দাবি রয়েছে দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন সময়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। ইসির সংলাপেও বিভিন্ন মহল থেকে আরপিওর ধারাগুলো বাংলায় করার প্রস্তাব এসেছে। বোধগম্য ভাষায় নির্বাচনী আইনের ধারাগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরার বিষয়টি মাথায় রেখেই এবার এসব আইন বাংলায় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে ইসি যে রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে সেখানেও আরপিও ধারা বাংলায় অনুবাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার বেগম কবিতা খানম বলেন, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)সহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি সংস্কারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরপিও এবং সীমানা নির্ধারণ আইন বাংলায় অনুবাদ করা হবে, এটাও মোটামুটি নিশ্চিত উল্লেখ করেন তিনি। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন শুধু এবার নয়, এর আগেও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট আইনের ধারাগুলো বাংলায় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। বিশেষ করে ২০০৮ সালে শামছুল হুদা কমিশন দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এই আইনের ধারাগুলো বাংলায় করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সেই সময়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিরোধিতা করার কারণে ইসির সেই উদ্যোগ ভেস্তে যায়। তবে জানা গেছে এবার নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আরপিও বাংলায় করার যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন বিরোধিতা করা হচ্ছে না। এমনকি বাংলায় করার জন্য দলটির পক্ষ থেকে সায় রয়েছে বলেও জানা গেছে। ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপে উল্লেখ করা হয়েছে নির্বাচনী ব্যবস্থার জন্য বিদ্যমান আইনী কাঠামোর কিছু অংশ ইংরেজীতে এবং কিছু অংশ বাংলায় রয়েছে। পুরো আইনী কাঠামোটি বাংলায় প্রণীত হলে ব্যবহারকারীদের কাছে তা সহজেই বোধগম্য হবে। এর মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানাসংক্রান্ত অধ্যাদেশ ১৯৭৬ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ আইন দুটি উল্লেখযোগ্য। কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সব মানুষের জন্য একটি ঐতিহাসিক এবং অপরিহার্য দলিল। তারা জানান সব সংশোধনীসহকারে মূল আইনটি বাংলায় রূপান্তর করা গেলে তা প্রার্থী, ভোটার এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার কাছে সহজবোধ্য হবে। নির্বাচন পরিচালনা সময়োপযোগী করার উদ্দেশ্যে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭২-এ এ যাবত প্রায় দুই শতাধিকবার সংশোধনী আনা হয়েছে। আইনটি প্রয়োজনের নিরিখে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আরও সংস্কারের প্রয়োজন হবে। তারা জানান, পুরো আইনটি একীভূত করে বাংলায় প্রণীত হলে সবাই উপকৃত হবেন। এছাড়াও ইংরেজীতে মূল আইনটি বলবত থাকায় বেশ কিছু শব্দ এবং শব্দগুচ্ছ বাংলায় প্রণীত অন্যান্য আইনী কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তারা জানান, আইন দুটো বাংলা ভাষায় রূপান্তর এবং সর্বজনবোধগম্য করে পুনরায় তৈরি করা হলে ব্যবহারকারীরা উপকার পাবেন। ফলে অহেতুক ব্যবহৃত ইংরেজী শব্দগুলো পরিহার করাও সম্ভব হবে। কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর আলোকে যেসব আইন বিধি, প্রবিধি, প্রণয়ন করা হয়েছে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত সংগঠনগুলো সে সম্পর্কে অবহিত আছে। তারপরও এই আইনগুলো সম্বন্ধে পুনরায় আলোকপাত করা হলে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবাই আইনী কাঠামো আরও কার্যকর করার জন্য মতামত ও সুপারিশ রাখতে পারবেন। তাদের সুপারিশের আলোকে একটি আইনী কাঠামো প্রণয়ন এবং তার প্রয়োগ করা হলে ভোটাররা স্বাচ্ছন্দ্যে এবং নির্দ্বিধায় ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনের প্রার্থী তাদের এজেন্ট এবং সমর্থক ভোটাররা নিয়ম-কানুন বা বিধি-নিষেধ সুচারুরূপে প্রতিপালনের মাধ্যমে ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সক্ষম হবেন বলে উল্লেখ করেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনার জন্য বিদ্যমান আইনের নাম ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আইন বা আরপিও’। ১৯৭২ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির আদেশে এই আইনটি করা হয়। ইংরেজী ভাষায় করা আইনটি বারবার সংশোধন করা হলেও বাংলায় করা হয়নি। বিগত এটিএম শামসুল হুদা কমিশন আইনটির বাংলা খসড়াও চূড়ান্ত করেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আরপিও ও সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইন ইংরেজী হওয়ার কারণে বেশিরভাগ মানুষই সেটা বুঝতে পারে না। কিন্তু এই আইনটি বোঝা সব শ্রেণীর মানুষের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এই বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে ইসির পক্ষ থেকে এবারও বাংলায় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আইন সংশোধন বিষয়ে কমিশন মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা যেসব সুপারিশ পাঠিয়েছিলেন তার মধ্যে নির্বাচনী আইন বাংলায় করার প্রস্তাব রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে যেসব প্রস্তাব তুলে ধরা হয়েছে সেখানে আরপিরও ধারা বাংলায় করারও প্রস্তাব রয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদও জানান এ বিষয়ে কমিশন বেশ কিছু কাজ করছে। এর মধ্যে এটিও আছে। তবে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হচ্ছে। অংশীজনদের সংলাপের পর কতটা করা যাবে কতটা করা যাবে না সে ব্যাপারে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনী সব আইনই বাংলায় থাকা উচিত। এতে সবার কাছে বোধগম্য হয়। ভোটার ও প্রার্থীদের সচেতনতাও বাড়ে। ইংরেজী পড়ে সেটা বোঝা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। তবে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে দেশের জনগণ স্পষ্ট ধারণা পাবে নির্বাচনী আইন সম্পর্কে।
×