ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইতোমধ্যে ১৮২টি তৈরি হয়েছে

ইউনিসেফ রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য এক হাজার ৩শ’ শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলবে

প্রকাশিত: ০৫:১২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ইউনিসেফ রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য এক হাজার ৩শ’ শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তুলবে

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি ॥ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য ১ হাজার ৩০০ শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি করতে যাচ্ছে ইউনাইটেড ন্যাশনস চিলড্রেন ফান্ড (ইউনিসেফ)। কক্সবাজারে এসব শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। যেখানে এসব শিশুদের পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলারও ব্যবস্থা রাখা হবে। ইউনিসেফের উদ্যোগে ইতোমধ্যেই ১৮২টি কেন্দ্রে অন্তত ১৫ হাজার শিশুকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আগামী এক বছরে টার্গেট করা হয়েছে, ১ হাজার ৫০০ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশুকে শিক্ষা দেয়া হবে। ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি এ্যাডওয়ার্ড বেডবেদার ইউনিসেফের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, ‘সহিংসতার মধ্যদিয়ে এসব শিশু বাংলাদেশে এসেছে। তাদের মানসিক দিক বিবেচনায় শিক্ষা দিতে হবে। যাতে ভবিষ্যত ভাল হয়।’ প্রতিদিন তিন শিফটে করে শিশুদের শিক্ষা দেয়া হবে। এক এক শিফটে ৩৫ জন। প্রাথমিক পর্যায়ে চার থেকে ছয় বছর বয়সী শিশু এবং এরপরের ধাপে ছয়ের পর থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত শিশুদের বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান দেয়া হবে। ভাষা হিসেবে তারা শিখবে, ইংরেজী ও বার্মিজ। আরও শিখবে অংক, বিজ্ঞান, ছবি আঁকা এবং সঙ্গীত। এছাড়াও তাদের জন্য থাকবে মানসিক বিভিন্ন কাউন্সিলিং, স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা এবং দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ। শিশুদের কলম, রঙিন পেন্সিল, স্কুল ব্যাগসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হবে। এর আগে ২৪ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা শিশু ও তাদের পরিবারের জন্য ইউনিসেফের ত্রাণের প্রথম চালানটি ঢাকা পৌঁছায়। কোপেনহেগেন থেকে একটি কার্গো বিমানে করে ১০০ টন ত্রাণসামগ্রী বাংলাদেশে পৌঁছেছে। এর মধ্যে পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট, পরিবারের জন্য হাইজিন কিটস, স্যানিটারি সামগ্রী, প্লাস্টিকের তারপুলিন, শিশুদের জন্য খেলনাসহ বিভিন্ন বিনোদন সামগ্রী ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ত্রাণ হিসেবে শিশুদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এদিন আড়াই লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের সহায়তা করা হয় বলে জানায় ইউনিসেফ। এর আগে ১৭-২৩ সেপ্টেম্বর ইউনিসেফ কর্তৃক দেড় লাখ ১-৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম চলে। পরবর্তী ত্রাণবাহী চালানটিও বাংলাদেশে আসার পথে রয়েছে। এতে শিশুদের জন্য স্কুলব্যাগ, তাঁবু, শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশের বিভিন্ন উপকরণ, ফ্যামিলি হাইজিন কিটস, ত্রিপল ও পুষ্টিকর খাবার পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী কক্সবাজারে ট্রাকের মাধ্যমে ত্রাণ সামগ্রীগুলো সরবরাহ করা হবে। আগামী তিন মাসে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইউনিসেফ আরও ৭৩ লাখ মার্কিন ডলার সহায়তা চেয়েছে। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) বলছে, সহিংসতার শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা পাঁচ লাখের বেশি। তবে বেসরকারী হিসেবে এই সংখ্যা সাড়ে ছয় লাখ ছাড়িয়েছে। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সহিংসতায় প্রাণ গেছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। বেসরকারীভাবে এই সংখ্যা দশ হাজার পার করেছে মধ্য সেপ্টেম্বরেই। গত ২৪ আগস্ট রাখাইনে যখন পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এর জেরে ‘অভিযানের’ নামে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। ফলে লাখ লাখ মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে আসছেন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী। সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবরেও প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
×