ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন কর্মকান্ডের রূপরেখা তৈরি

রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে প্রস্তুত করা হচ্ছে, ভাসানচর

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে প্রস্তুত করা হচ্ছে, ভাসানচর

নিজস্ব সংবাদদাতা, হাতিয়া, ২৯ সেপ্টেম্বর ॥ মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য নির্ধারণ করা হয় নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ভাসানচর। এ লক্ষ্যে গত এক সপ্তাহে একাধিক বার ভাসানচর পরিদর্শনে আসেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা, সামরিক সচিব, র‌্যাবের মহাপরিচালকসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের একাধিক টিম। রোহিঙ্গাদের বসবাসের জন্য কতটুকু উপযোগী, উপযোগী করে তোলার জন্য কী কী কাজ করা দরকার সে বিষয়ে আলোচনা পর্যালোচনা চলছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে চরের ভৌগলিক মানচিত্র তৈরি করে উন্নয়ন কর্মকা-ের রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধদের নির্যাতনে আগে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে আরও প্রায় ৫ লাখ। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক দিক বিবেচনা করে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত দেড় বছর আগে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ অনুসারে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার ঠেঙ্গারচরে বর্তমানে ভাসানচর রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কথা চিন্তায় আসে। সে মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব ও নৌ বাহিনীর একটি টিম ঠেঙ্গার চর পরিদর্শন করেন। এর পর বর্ষা মৌসুম চলে আসায় উদ্যোগটি দীর্ঘদিন চাপা পড়ে যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপ সামলাতে ঠেঙ্গারচরের বিষয়টি পুনরায় আলোচনায় উঠে আসে। এরই অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে সরেজমিন দেখার জন্য ২২ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় কমিশনার ও ডিআইজি ২৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীসহ উচ্চ পদস্থ টিম ঠেঙ্গারচর পরিদর্শন করেন। এই বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মোহাম্মদ রিজাউল করিম জানান, ঠেঙ্গারচরে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ এর কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি এখনও। হাতিয়া উপজেলার মূল ভূখন্ড থেকে ২০ কিলোমিটার পূর্বে নদীপথ ফেরিয়ে ঠেঙ্গারচরের অবস্থান। বর্তমানে ঠেঙ্গারচরের আয়তন প্রায় ৩৩০ বর্গকিলোমিটার অর্থাৎ হাতিয়ার মূল ভূখ-ের আয়তনের প্রায় সমান। এছাড়া দ্বীপটির চতুর্থদিকে প্রতিবছর গড়ে ৩৫-৪০ বর্গ কিলোমিটার ভূমি জাগছে। জেলেরা জানান, ১৯৯০ সালে এখানে একটি ডুবোচরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যে ডুবোচরটির আয়তন বৃদ্ধির পাশাপাশি একই সময় দক্ষিণে আরও একটি নতুন চর জেগে ওঠে। স্থানীয় জেলেদের কাছে এটি ঠেঙ্গারচর নামে পরিচিত হলেও সরকারী উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক এর নাম পরিবর্তন করে ভাসানচর ব্যবহার করা হচ্ছে। হাতিয়া মূল ভূখন্ড থেকে ট্রলারযোগে ঠেঙ্গারচর যেতে সোয়া ঘণ্টা সময় লাগে। কয়েক বছর পূর্বে হাতিয়ার বন বিভাগ এখানে বনায়ন শুরু করে। ফলে ঠেঙ্গারচরে বিভিন্ন অংশে গাছ গাছালিতে ভরে গেছে। এ প্রক্রিয়া প্রথমে ছয় মাস পূর্বে রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচরে পুনর্বাসনের কথা চিন্তা করে পরিদর্শনে আসেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন বিবি পিএসসি, এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন হাতিয়ার সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ইউএনও, পৌর মেয়র একেএম ইউসুফ আলী ও ওসিসহ কর্মকর্তারা । এ সময় তারা ঠেঙ্গারচরের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। এবং তাদের নির্দেশে নৌবাহিনী চরটির হেলিপ্যাড, দুটি গভীর নলকূপ, দুটি বিশ্রামাগার একটি জেটি ও অভ্যন্তরীণ একটি সড়ক নির্মাণ করেছে। হাতিয়া আসনের এমপি আয়েশা ফেরদাউস জানান, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এবং এ দেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন সরকারের উদ্যোগকে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। সর্বশেষ ২৮ সেপ্টেম্বর ঠেঙ্গারচর পরিদর্শনে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ভাসানচরকে একটি সুন্দর আবাসন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এজন্য বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সব কিছুই এখনও পরিকল্পনা পর্যয়ে রয়েছে। শিক্ষা চিকিৎসা আবাসনসহ সব সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে শরণার্থী শিবির গড়ে তোলা হবে। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি ড. মনিরুজ্জামান, প্রকল্প পরিচালক ক্যাপ্টেন আমিনুল ইসলাম খান, স্বরাষ্ট্র সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেনসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ। এদিকে হাতিয়া উপজেলার বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করা উচিত। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়টিকে সর্বাধিক প্রাধান্য দিতে হবে। প্রয়োজনে ঠেঙ্গারচরে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড মোতায়েন ছাড়াও পুলিশের স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে।
×