ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুক্রবার নতুন করে বাংলাদেশে ঢুকেছে ২ হাজারের বেশি ইনানীতে আরও ৬ লাশ উদ্ধার

রাখাইন রোহিঙ্গামুক্ত করতে ফের হামলে পড়েছে বর্মী বাহিনী

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রাখাইন রোহিঙ্গামুক্ত করতে ফের হামলে পড়েছে বর্মী বাহিনী

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনে রক্তাক্ত অভিযান কেন্দ্র করে সারাবিশ্বে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি হলেও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আর এরই জেরে শুক্রবার জুমার নামাজের পর থেকে উত্তর মংডুতে উন্মত্ত সেনারা অসহায় রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন শক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে বহু রোহিঙ্গাকে। আরও বহু রোহিঙ্গাবসতি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতেও সামরিক অভিযান অব্যাহত ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত শুক্রবার অবহিত হওয়ার পর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা নতুন গণহত্যার হিংসার ছোবল হেনেছে। শুক্রবার সকালে একদিনেই এসেছে আরও ২ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা। এরা এসেছে সাগরপথে শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকালে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকাটি ডুবে যায় তাতে প্রাণ হারানো আরও ৬ রোহিঙ্গার লাশ শুক্রবার উখিয়ার ইনানী সমুদ্র উপকূল থেকে উদ্ধার হয়েছে। ফলে বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু’দিনে এই ঘটনায় ২২ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার হলো। এছাড়া জীবিত উদ্ধার হয়েছে আরও ১৩। উদ্ধার হওয়াদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আরও অনেকে প্রাণ হারিয়েছে, যাদের লাশ সমুদ্রে ভাসছে। সীমান্তের ওপার থেকে সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও মগ সন্ত্রাসীরা এখন পুরো মংডু শহর রোহিঙ্গামুক্ত করার অভিযান শুরু করেছে। গত ২৫ আগস্ট রাত থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান শুরুর পর চারটি টাউনশিপ সিটওয়ে, বুচিদং, রাচিদং ও মংডুতে নির্বিচারে গণহত্যা শুরু হয়। ফলে বেসরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী ইতোমধ্যে প্রায় ৬ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা প্রাণ হারিয়েছে। আর বাংলাদেশে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছে প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশু। এ অবস্থায় জাতিসংঘসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এ ঘটনায় মিয়ানমারের ওপর সহিংসতা বন্ধে চাপ সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক ডাকতে বাধ্য হয়। গত সপ্তাহে শেষদিকে রোহিঙ্গা আগমনের শঙ্কা কমে এসেছিল। অনেকে সীমান্তের জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নিয়ে আছে ফিরে যাবার আশায়। কিন্তু সবই এখন গুড়েবালি। যেহেতু নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমার বাধ্য হয় এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সে কারণে সে দেশের সেনাবাহিনী ও বিজিপি সদস্যরা এখন আবারও অমিত বিক্রমে রোহিঙ্গা নিধনে নেমেছে। শুক্রবার ভোর থেকে টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ জালিয়াপাড়া, জেটিঘাট, মিস্ত্রিপাড়া, দক্ষিণপাড়া, ঘোলাপাড়া দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গা জানায়, সেনাবাহিনী ও রাখাইনরা মিলে গুলি বর্ষণ, জবাই করে হত্যা, জ্বালাও -পোড়াও থামছে না দেখে আশ্রয় নিতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যেখানে আশ্রয় নিয়েছে বলে সন্দেহ হচ্ছে সেখানে সেনা সদস্যরা জঙ্গল ও প্যারাবন লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করছে। রোহিঙ্গা পারাপারের সঙ্গে জড়িত নৌকার মাঝি আবদুর রশিদ জানান, আমার বাড়িও মিয়ানমারে পতেংজা গ্রামে ছিল। মিয়ানমারে যেসব গ্রামে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রয়েছে সেখানে হামলা চালাচ্ছে সেনা সদস্যরা। সঙ্গে রয়েছে রাখাইন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যও। বিশেষ করে মংডু এলাকার চম্যুইন্ন্যা, পতেংজা, ধাউংখালী, মগনিপাড়া, হাইস্যুরাতা, শিলখালী, বড়ডেইল, সাইরা পাড়াতে শুক্রবারও হত্যা, গুলি বর্ষণ ও জ্বালাও পোড়াও অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া চর, গদুরছড়া ও ধাউংখালীর প্রায় ১০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা এপারে আসার অপেক্ষায়। এদিকে আউং সান সুচি তার বক্ত্যবে বলেছিলেন গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে সেখানে সেনা অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে, তা স¤পূর্ণ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হলেও মিয়ানমার সারা বিশ্বের সঙ্গে এক ধরনের ভাওতাবাজি করে চলেছে। বাস্তবে রাখাইন রাজ্যে জঙ্গী দমনের নামে সামরিক অভিযান শুরু করা হয়েছে পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা শূন্য করার লক্ষ্যে। আর এ কারণেই একের পর এক রোহিঙ্গা বসতি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। চলছে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট এবং বিতাড়ন প্রক্রিয়া। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের স্থানীয় বাসিন্দা আবদুস সালাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে শাহপরীর দ্বীপের জেটিঘাট এলাকায় ওপারে প্রচ- গুলির শব্দ শোনা গেছে। সকালে উঠে দেখা যায়, শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এর বেশিরভাগ ছিল নারী ও শিশু। মংডুর পতেংজা থেকে দুই শিশুসন্তান নিয়ে পালিয়ে আসা নুর নাহার জানায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের পাড়ায় পাড়ায় হত্যাকা- চালিয়ে যাচ্ছে। তার ভাইকেও গুলি করে হত্যা করা হয়। মংডু মগনিপাড়ার দেড় হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। তাদের এ অভিযানে সহায়তা করেছে স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর লোকজন। ওই গ্রাম থেকে পালিয়ে আসা জেলে মোঃ শফি উল্লাহ জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, কিছুদিন রোহিঙ্গা আগমনের ঢল হ্রাস পেলেও এখন আবারও তাদের অনুপ্রবেশ বেড়েছে। আসলে ওপারে কি হচ্ছে ঠিক এপার থেকে বোঝা মুশকিল। আরও ৬ রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার উখিয়ার ইনানী সমুদ্রসৈকতের কাছাকাছি এলাকায় রোহিঙ্গাবাহী ট্রলার ডুবি ঘটনায় এ পর্যন্ত ২২ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। শুক্রবার ভোরে জোয়ারের পানিতে আরও ৬ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে ১৬ রোহিঙ্গা নারী-শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে এ ঘটনায় মোট ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলো। উদ্ধার কাজ চলছে। এখনও ৬১ জন নিখোঁজ রয়েছে বলে তথ্য মিলেছে। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ইনানী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে মরদেহগুলো দাফন করা হয়েছে। বেঁচে যাওয়া ২৬ রোহিঙ্গাকে চিকিৎসার জন্য উখিয়া থানা পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উখিয়ার পাটুয়ারটেক মোহনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নৌকাডুবির কবলে পড়া ১০৭ রোহিঙ্গা মিয়ানমারের মংডুর মইঢং থেকে বাংলাদেশে আসছিল। টেকনাফের শামলাপুর নামার কথা ছিল তাদের। ভুল করে উখিয়ার পাটুয়ারটেক পৌঁছালে প্রবল বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে নৌকাটি উল্টে গিয়ে ডুবে যায়। মিয়ানমারের বুচিদংয়ের মুইদং এলাকার জামাল হোসেনের স্ত্রী রাশেদা বেগম জানান, কোন রকমে কূলে আসতে সক্ষম হলেও তার ৭ মাসের মোহাম্মদ হোসাইন নামে পুত্রসন্তান ছিটকে পড়ে সাগরে ডুবে নিখোঁজ হয়ে যায়। তার এই পুত্রসন্তানের বেঁচে থাকার আশা নেই বলে তিনি মনে করেন। জীবিত উদ্ধার আরেক রোহিঙ্গা যুবতি মিয়ানমারের বুচিদং থানার আমিনা খাতুন বলেন, তার পিতা লালু মিয়া এবং ভাই জাফর আলম ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে। কিন্তু তার ভাবি তৈয়বা খাতুন, তাদের যমজ ২ সন্তান নুর কামাল ও জুবাইদা খাতুন ডুবে মারা গেছে। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী মোস্তাক মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে সাগরে মাছ শিকার করতে গেলে রোহিঙ্গা বোঝাই বড় আকৃতির একটি নৌকা উপকূলে ভেসে আসতে দেখা যায়। এটি ছিল ডুবন্ত অবস্থায়। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। দালালের কান্ড বাংলাদেশে সরকার থাকা-খাওয়ার সুযোগ দিচ্ছে এমন প্রলোভন দেখিয়ে নৌকায় ভরে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে দালাল চক্র। নৌকায় তোলার পর নির্যাতন করে তাদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে নগদ মিয়ানমার মুদ্রা কিয়াত ও স্বর্ণালঙ্কার। এতে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে রোহিঙ্গারা। মিয়ানমারে সহিংস ঘটনার প্রেক্ষিতে গত এক মাসেরও অধিক সময় ধরে স্বদেশে ফিরতে পারছেন না মিয়ানমারের ৪৪ রোহিঙ্গা মাঝিমাল্লা। টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্যের আওতায় পণ্য নিয়ে এসে মিয়ানমারের ১৩টি কার্গো ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে আটকা পড়েছে। মিয়ানমার নাগরিক ৪৪ জনের মধ্যে ৪৩ জনই রোহিঙ্গা মুসলিম এবং ১ জন হিন্দু। এদের সকলের বাড়ি মিয়ানমারের মংডু টাউনশিপের নোয়াপাড়া, উকিলপাড়া, নাপিতের ডেইল, সুধাপাড়া, খাঁড়িপাড়া, ফয়েজীপাড়া, মনিপাড়া এবং ২ সহোদর বাড়ি বলিবাজার গ্রামে। তারা জানান, মোবাইল ফোনে পরিবারের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। কয়েক জনের পরিবার-পরিজন পালিয়ে বাংলাদেশে চলেও এসেছে। ২৭ সহস্রাধিক রোহিঙ্গার পরিচয়পত্র প্রদান রোহিঙ্গাদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর শুক্রবার পর্যন্ত ২৭ হাজার ৪৭১ জনকে পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে। মূলত নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় এখনও জোরালো গতি লাভ করেনি। এর মূল কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, নিবন্ধিত হতে রোহিঙ্গাদের আগ্রহের যেমন অভাব রয়েছে তেমনি এ কার্যক্রমে জনবল সঙ্কটও রয়েছে। টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পের তত্ত্বাবধায়ক ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের উপ-পরিচালক সাঈদুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত নয়াপাড়া ক্যাম্প ছাড়াও কুতুপালং ও থাইংখালি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের নাম নিবন্ধন কার্যক্রম চলছে। তিনি জানান, ডিজিটাল পদ্ধতিতে নাম নিবন্ধন করার বিষয়ে তেমন আগ্রহ নেই রোহিঙ্গাদের। ত্রাণ গ্রহণ নিয়েই ব্যস্ত রোহিঙ্গারা। নিবন্ধন ছাড়া ভবিষ্যতে তারা কেউ ত্রাণ সহায়তা পাবে না নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এ কাজে রোহিঙ্গাদের ব্যাপক আগ্রহ আসবে না। ত্রাণ সংগ্রহে চলন্ত গাড়ির পেছনে ছুটছে রোহিঙ্গা শিশুরা ত্রাণের আশায় রোহিঙ্গা শিশুরা ত্রাণ বোঝাই চলন্ত গাড়ির পেছনে ছুটছে। সেনাবাহিনী মোতায়েন করা সত্ত্বেও সুযোগ বুঝে ছোট ছোট রোহিঙ্গা শিশু প্রধান সড়কে চলে আসছে। এতে দুর্ঘটনাও ঘটছে। মিয়ানমারের চলমান সেনা অভিযানের ফলে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফ-উখিয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ২৫ আগস্টের পর থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আশ্রিত রোহিঙ্গারা সকালের সূর্য উদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সন্তানাদি নিয়ে টেকনাফ-কক্সবাজার হাইওয়ে সড়কে অবস্থান এবং ত্রাণবাহী কোন গাড়ি দেখলে চলন্ত গাড়ির পেছনে ছুটতে দেখা যায়। বিশেষ করে কুতুপালং, বালুখালী, লেদা, আলীখালী, জাদিমুরা, মুচনী, কাঞ্জরপাড়া, মিনাবাজার, লম্বাবিল, আমতলী, মাঝেরপাড়া, তুলাতুলী নামক স্থানে রোহিঙ্গারা দল দলে ত্রাণবাহী গাড়ি লক্ষ্য করে রাস্তার পাশে বসে থাকে। তবে সেনা মোতায়েনের পর বহুলাংশে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। এরপরও ফাঁকফোকরে রোহিঙ্গা নরনারী ও শিশু ত্রাণবাহী গাড়ি দেখলেই রাস্তার ওপর চলে আসে। ঘুমধুম পরিস্থিতি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তের জিরো পয়েন্টে এখনও ৫ সহস্রাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে আছে। আগে এ সংখ্যা ছিল ২০ সহস্রাধিক। সেনা মোতায়েনের পর জোরালো পদক্ষেপ গৃহীত হওয়ায় একে একে রোহিঙ্গাদের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। রাখাইনে অবশিষ্ট রোহিঙ্গাদের জীবনও অনিশ্চিত রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনও ৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অবস্থান রয়েছে। এরা দুঃসাহস করে নিজেদের বসতঘরে রয়ে গেছে। কিন্তু সেনা অভিযান থামছে না। থামছে না হত্যাযজ্ঞও। ফলে এসব রোহিঙ্গার অবস্থান চরম অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে। শুক্রবার নতুন করে মাইকিং করা হয়েছে। এরপরও যারা থেকে যাবে হয়ত তারা বহুমুখী সেনা বর্বরতায় প্রাণ হারাবে। আর যারা প্রাণ রক্ষার চিন্তা করবে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পথ বেছে নেবে বলে সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। রোহিঙ্গা ইস্যু দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংস সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর অগণন রোহিঙ্গা যেমন প্রাণ হারিয়েছে তেমনি বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটেছে ৬ লাখেরও বেশি। রোহিঙ্গা ভারে জর্জরিত এখন গোটা কক্সবাজার, এমনকি বান্দরবান জেলার একটি অংশও। এছাড়া রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ফাঁকফোকরে দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি হলেও নিরাপত্তা পরিষদে দুই প্রভাবশালী সদস্য চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আছে। ফলে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গাদের ওপর সেনা বর্বরতা বন্ধে এবং তাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে কঠোর অবস্থানে থাকলেও নিরাপত্তা পরিষদ এখনও কার্যকর কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। সঙ্গত কারণে এ সমস্যার সমাধান প্রক্রিয়া সহসা হবার নয় বলে প্রতীয়মান। প্রকারান্তরে তা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে বলেও বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।
×