ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ

গোদাগাড়ী উপজেলায় পদ্মা নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছ করে আলোর দিশা পেয়েছেন চাষীরা। কয়েক বছরের ব্যবধানে পদ্মায় ভাসমান খাচায় মাছ চাষ করে সফলতা পেয়েছেন ২০ চাষী। আগে বেকার থাকলেও এখন তারা মহাজন। উপজেলার পিরিজপুর গ্রামে পদ্মার কোলে কয়েক বছর থেকে এই মাছ চাষ করা হচ্ছে। স্থানীয় মৎস্য অধিদফতর জানিয়েছে, ২০২১ সালের মধ্যে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশকে বিশ্বের প্রথম স্থানে নিয়ে যেতে সরকারী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গোদাগাড়ীতে খাঁচায় মাছ চাষ শুরু হয়। গত বছরের মে মাসে মৎস্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে চাষীদের ১০টি খাঁচা দেয়া হয়। পরে তাদের আরও ২০টি খাঁচা দেয়া হয়। এসব খাঁচায় দেয়া হয় মনোসেক্স প্রজাতির তেলাপিয়া মাছের পোনাও। খাঁচায় মাছ চাষের প্রধান উদ্যোক্তা উপজেলার পিরিজপুর গ্রামের যুবক শফিউল ইসলাম মুক্তা। তিনিসহ ২০ যুবক একত্রিত হয়েই খাঁচায় মাছ চাষ শুরু করেন। মুক্তা জানান, মৎস্য অধিদফতর তাদের পোনাসহ ২০টি খাঁচা দিলেও লাভজনক হওয়ায় পরবর্তীতে তারা নিজেরাই খাঁচার সংখ্যা বৃদ্ধি করেছেন। পদ্মা নদীতে এখন তাদের খাঁচার সংখ্যা ৪৭টি। তিনি জানান, সর্বশেষ পদ্মায় পানি বৃদ্ধির সময় ৩৭টি খাঁচার মাছ ধরেছেন। এখন মাছ আছে ১০টি খাঁচায়। গত এক বছরে তারা তিন দফায় খাঁচা থেকে ৬ লাখ টাকার মাছ তুলে বিক্রি করেছেন। মাছের পরিমাণ ৩০ হাজার কেজি। এতে তাদের লাভ হয়েছে তিন লাখ টাকা। তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছিল ২৭টি খাঁচা তৈরি, মাছের পোনা কেনা এবং খাবার কিনতে। খাঁচায় মাছ চাষ লাভজনক হওয়ায় তারা আগামীতে খাঁচার পরিমাণ আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করছেন। তিনি আরও বলেন, ‘পদ্মা ফিশ কেয়ার’ নামে তাদের একটি সমবায় সমিতি আছে। এই সমিতির ২০ সদস্যকে নিয়ে প্রথমে তিনি নদীতে একটি মৎস্য অভয়াশ্রম করেছিলেন। তাদের ব্যক্তিগত এই উদ্যোগে সাড়া দেয় মৎস্য অধিদফতর। কিন্তু অভয়াশ্রম থেকে তাদের কোন আয় ছিল না। এ জন্য মৎস্য অধিদফতর তাদের ওই অভয়াশ্রমের পানিতেই খাঁচা করে দেয়। এ থেকে তাদের আয়ের দুয়ার খুলে যায়। এখন তারা অনেকটাই স্বাবলম্বী। গোদাগাড়ী উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল করিম বলেন, পিরিজপুরের ২০ মৎস্যচাষী প্রমাণ করেছেন, খাঁচায় মাছ চাষ খুবই লাভজনক। তাই আগামীতে আরও কিছু স্থানে খাঁচায় মাছ চাষ সম্প্রসারণের জন্য তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন। আর সফলতা ধরে রাখতে পিরিজপুরের মৎস্য চাষীদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের যুগ্ম সচিব তৌফিকুল আরিফ এই খাঁচায় মাছ চাষ পরিদর্শনে যান। তিনি বলেন, মাছ চাষে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। মিঠাপানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয় অবস্থান দখল করেছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মাছ উৎপাদনে বিশ্বের প্রথম স্থানে নিয়ে যেতে মুক্তাদের এমন উদ্যোগ খুবই ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তিনি জানান, পদ্মায় ভাসমান খাঁচায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মৎস্য অধিদফতর তাদের কিছু আয়বর্ধক কাজের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয়। খাঁচায় মাছ ছাড়ার ১০০ দিন পরে ওই মাছ বিক্রি করা হয়। ১ কেজি ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত ওজনের তেলাপিয়া পাওয়া গেছে ওই খাঁচা থেকে। গোদাগাড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শামসুল কবির বলেন, এই উদ্যোগের ফলে মা মাছগুলো ডিম দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এতে মাছের ঘনত্বও বাড়ছে। মাছ যেখানে নিরাপদ আশ্রয় পায়, সেই জায়গা ছেড়ে যেতে চায় না। ভরা পদ্মায় যখন স্রোত তীব্র হয়, তখন অভয়াশ্রমে স্রোতের বিপরীতমুখী করে রাখা রিংয়ের ভেতরে এসে মাছ আশ্রয় নেয়। এই অভয়াশ্রমের আশপাশে এখন অনেক বড় মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এর আগে এই এলাকায় এত বড় মাছ অনেক দিন পাওয়া যায়নি। উদ্যোক্তা শফিউলের সঙ্গে প্রথম এই মাছ চাষ আন্দোলনের কর্মী শরৎ চন্দ্র মন্ডল জানান, এক সময় যারা আমাদের পাগল বলেছিলেন, তারাই এখন আমাদের সমিতির সদস্য হচ্ছেন। আমরা তাদের দেশের স্বার্থটা বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে
×