ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মানবাধিকারকর্মীদের রোহিঙ্গা এলাকায় যেতে দেননি ইউএনসিটির প্রধান

জাতিসংঘ মিশনপ্রধানই বাধা

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জাতিসংঘ মিশনপ্রধানই বাধা

মিয়ানমারে জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গারা যাতে সরকারের কাছে নিজেদের অধিকারের দাবি তুলতে না পারে সে লক্ষ্যে দেশটিতে কর্মরত জাতিসংঘ কর্মকর্তারা গোপনে কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। জাতিসংঘের অভ্যন্তরীণ সূত্র এবং বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার মাধ্যমে বিবিসি এ তথ্য জানতে পেরেছে। বিবিসি। জানা গেছে, জাতিসংঘের এক সাবেক কর্মকর্তা চেষ্টা করেছিলেন রোহিঙ্গা এলাকার পরিস্থিতি মানবাধিকারকর্মীরা যেন সরেজমিনে পরিদর্শন করতে না পারে। ওই কর্মকর্তা মিয়ানমারের জাতিসংঘর মিশনে কাজ করেছিলেন। নির্যাতন ও গণহত্যা থেকে বাঁচতে দেশটির রাখাইন (আরাকান) রাজ্য থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে জাতিসংঘ মিশন বিবিসির পাওয়া তথ্যের সঙ্গে ‘জোরালোভাবে দ্বিমত’ করেছে। বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর সমালোচনার মুখে পড়ে জাতিসংঘ। এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দমন-নিপীড়নের নিন্দা সমালোচনা করে। তবে জাতিসংঘের মিয়ানমার মিশন এবং দেশটির ভেতরে ও বাইরে তৎপর বিভিন্ন দাতা সংস্থার সূত্রে বিবিসি জানতে পেরেছে বর্তমান সঙ্কট শুরুর অনেক আগে থেকেই ইউনাইটেড নেশন্স কান্ট্রি টিমের (ইউএনসিটি) প্রধান কানাডার নাগরিক রেনাটা লক ডেসালিয়ন রোহিঙ্গা বসবাসকারী এলাকায় তিনি মানবাধিকারকর্মীদের যেতে বাধা দিয়েছেন। রোহিঙ্গারা যেন সরকারের কাছে তাদের অধিকারের কথা বলার সুযোগ না পান তাও তিনি বন্ধ করে দেন। সেখানে জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানো হতে পারে মিশনের যেসব কর্মী এ বিষয়ে সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন তাদের তিনি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের গণহত্যা শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিল ত্রাণকর্মী ক্যারোলিন ভ্যান্ডেনিবিল। এর আগে ১৯৯৩ সালের শেষদিকে ও ১৯৯৪ সালে চালানো গণহত্যার সময় তিনি দেশটিতে প্রথম গিয়েছিলেন। ওই গণহত্যার আগে যেসব লক্ষণ তিনি দেখেছিলেন তার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির মিল দেখে তিনি আশঙ্কা করেন যে আবারও সে রকম কিছু হতে পারে। পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও রয়ান্ডায় কাজ করার অভিজ্ঞতায় তার রয়েছে। বিবিসিকে ক্যারোলিন বলেন, ‘সম্প্রতি কিছু বিশেষজ্ঞ ও বার্মিজ ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমার কথা হয়। তারা বলছিলেন, ‘আমাদের উচিত এদের (রোহিঙ্গা) কুকুরের মতো মেরে ফেলা।’ তিনি বলছেন, ‘আমার মতে, কোন সমাজে মানুষের প্রতি যখন ঘৃণা বিদ্বেষ এতটা তীব্র হয় যে খোলাখুলিভাবে হত্যার কথা মানুষ বলতে শুরু করে, এটি তখন সামাজিক গ্রহণযোগ্যতাও অর্জন করে।’ তার মতে, এটি একটি বিপজ্জনক অবস্থার পূর্বাভাস। ২০১৩ থেকে ১৫ সালের মধ্যে তিনি মিয়ানমারের জাতিসংঘ মিশনে রেসিডেন্ট কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন। রাখাইন রাজ্যে ঘৃণার বীভৎসতা সম্পর্কে এ সময় তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা হয়। ২০১২ সালে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম ও রাখাইন বৌদ্ধদের মতো সংঘাত শুরুর পর প্রাদেশিক রাজধানী সিটওয়ের আশপাশে বিভিন্ন ক্যাম্পে ১ লাখের ওপর রোহিঙ্গা আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। ওই সংঘাতে ১০০-এর বেশি লোক নিহত হওয়ার কথা সরকারীভাবে বলা হয়। এরপর থেকে ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত বছর রোহিঙ্গাদের একটি সশস্ত্র গ্রুপের উত্থান ঘটে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জাতিসংঘের জরুরী ত্রাণ পৌঁছাতে বাধা দিতে শুরু করে রাখাইনরা। একপর্যায়ে তারা সেখানে পৌঁছানোর রাস্তা ব্লক করে দেয়। তারা জাতিসংঘের ত্রাণবহরেও হামলা চালায়। মিয়ানমারের সরকার এবং বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সহযোগিতা ছাড়া জাতিসংঘের সেখানে জরুরী সহায়তা পৌঁছানো কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রীয় পরিচয়বিহীন রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কথা বলাও কঠিন হয়ে পড়ে জাতিসংঘ কর্মীদের জন্য।
×