ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অবিনাশ পুরকায়স্থ

নাট্যোপন্যাস পঞ্চবেদ

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নাট্যোপন্যাস পঞ্চবেদ

বাংলা নাট্যশিল্পের আসরে নাট্যভাস্কর ড. মুকিদ চৌধুরীর স্বতন্ত্র চিহ্নিত। তার বিভিন্ন সময়ে লেখা নানা স্বাদের পাঁচটি নাট্যোপন্যাস নিয়ে এবারের বইমেলায় ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ এর এই নতুন সংযোজন, নাট্যভাস্কর ড. মুকিদ চৌধুরীর ‘পঞ্চবেদ’। এই ‘পঞ্চবেদ’-এ রয়েছে লোকগাথায় ‘চম্পাবতী’, মুক্তিযুদ্ধে ‘তারকাঁটার ভাঁজে’, নারীমুক্তিতে ‘বন্ধ্যা’, ইতিহাস আশ্রয়ে ‘যোদ্ধা’ ও মহাভারতের অলিখিত অধ্যায় ‘কর্ণপুরাণ’। দুই পরিবারের সদস্য গাজী ও চম্পাবতী, ধর্মের বিভেদ ভুলে, একে অপরকে ভালবাসেন। এই হিন্দু-মুসলমান প্রেম কাহিনী নিয়েই রচিত হয়েছে ‘চম্পাবতী’। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনা যে অংশ নেন এবং পাক সশস্ত্র বাহিনীর অত্যাচারের সম্মুখীন হন তা সমগ্র বিশ্ববাসীর অজানা নয়। নারী যে পুরুষের মতোই সাহসী ও যোদ্ধা এ রকম একজন বীরাঙ্গনার গৌরবময় দিক নিয়ে রচনা করা হয়েছে ‘তারকাঁটার ভাঁজে’। এই নারী যোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সহযোদ্ধা ছিলেন দু’জন পুরুষ। তাদের সহযোগিতায়ই তিনি পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রভাবে মুক্তিযুদ্ধেও নেতৃত্ব দেন, নিজে যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্বের সঙ্গে সৈন্য পরিচালনা করেন, পরিশেষে তিনি দেশকে স্বাধীন করে রণক্ষেত্র থেকে অবসর নেন। অস্পৃশ্য, অনাদৃত, অবহেলিত একজন সন্তানহীন নারীকে তার মনুষ্যত্বের সম্মানে উন্নীত করতেই রচিত হয়েছে এ নাটক বন্ধ্যা। এই সন্তানহীন নারীর সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের প্রকাশ ঘটেছে এতে। মানুষের ভেতরের উচ্চাকাক্সক্ষা কীভাবে রহস্যময়ী রূপে তাকে কুমন্ত্রণা দেয়, কীভাবে মানুষের ভেতরের গোপন বাসনাকে কালসাপের মতো উন্মাদ করে তুলে, স্বাভাবিক নীতিবোধকে অন্ধকারে ঢেকে দেয় এবং হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সমস্ত বিবেক বিসর্জন দিয়ে আপন মানুষকে, যে তার সবচেয়ে শুভাকাক্সক্ষী তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এ হত্যা হতে পারে আর্থিকভাবে অথবা দৈহিকভাবে। তারপর নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখার প্রয়াসে একের পর এক বিধ্বংসী, অমানুষিক ও পৈশাচিক কর্মকা- চালিয়ে যায়। অবশেষে নৃশংস হত্যা ও পাপকর্মের পরিণামস্বরূপ এই মানুষ নামের জীবটিরও মৃত্যু ঘটে শোচনীয়ভাবে। এই পাপাচার ও তার পরিণামের এক মর্মবিদারী বিষয়ই ‘যোদ্ধা’ নাট্যোপন্যাসের মূল উপজীব্য। একজন মানুষের নিষ্ঠুর কর্মকা-ের ওপর ভিত্তি করে যে জীবন স্থাপিত হয় তা অবশেষে তাকেই নিক্ষেপ করে অন্ধকার মৃত্যুকূপে। কর্ণ মহাভারতের একটি ক্ষুদ্র অংশ নন, বিশাল অংশ নিয়েই তার প্রভাব; তবে কর্ণ-আখ্যানের মর্মগাথার যে অন্তর্গত সত্য ও শক্তি তা মহাভারতের ব্যাপকতাকেও ছাড়িয়ে দেয়। মহাভারত পাঠকালে কর্ণকে মনে হয় তিনি যেন আমাদের মানুষ। তাই তাকে দেখানো হয়েছে অন্যভাবে, কৌরব ও পা-ব রাজপুত্রের চেয়েও কুশলী বীররূপে। নিরন্তন পরিশ্রমের আরাধ্য ফসল ড. মুকিদ চৌধুরীর নাট্যোপন্যাস সম্ভার-পঞ্চবেদ। নাটক রচনার পাশাপাশি নাটকের বিষয়বস্তুর প্রেক্ষাপট ও ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে নাট্যকারের প্রাককথন রচনা পাঠকের প্রতি নাট্যকারের নান্দনিক দায়বদ্ধতা। কাব্য কারিমের প্রচ্ছদ প্রবহমান কাল রূপ রথচক্রের প্রবাহমানতার ইঙ্গিতবাহী। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশমান নান্দনিক ও পাঠে চক্ষুবান্ধব।
×