ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আশিক বিন রহিম

বই ॥ পাঠ পর্যালোচনা অনপেক্ষ

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বই ॥ পাঠ পর্যালোচনা অনপেক্ষ

লিটলম্যাগ কিংবা ছোট কাগজ-আদুরে যে নামেই ডাকি না কেন; সময়ের সাহিত্য পাড়ায় এর প্রধান ভূমিকা লেখক সৃষ্টির আঁতুরঘর হিসেবে। পূর্বসূরিদের উত্তরাধিকার বহন করে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়মিতভাবে অসংখ্য ছোট কাগজ প্রকাশিত হচ্ছে। ইলিশের শহর চাঁদপুর জেলা থেকে প্রকাশিত হচ্ছে মৃত্তিকা, চাষারু, ত্রিনদী, বাঁক, তরীসহ নানা ধরনের ছোট কাগজ। এ জেলা থেকেই প্রবীণ লেখক তছলিম হোসেন হাওলাদারের সম্পাদনায় সম্প্রতি প্রকাশিত হলো ‘অনপেক্ষ’র ৩য় সংখ্যা। ন্যায়না কর্মকারের দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছেদে অনপেক্ষর চলতি সংখ্যাটি সাজানো হয়েছে বর্ণিলভাবে। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধের পাশাপাশি এ সংখ্যার পৃষ্ঠাজুড়ে স্থান পেয়েছে সমসাময়িক বিষয়ের ওপর বেশ কিছু নিবন্ধ, এক নারী মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার, ছোট কাগজ ও বই আলোচনা। অনপেক্ষর আলোচ্য সংখ্যায় সাযযাদ কাদিরের কবিতা ও অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন সায়মন স্বপন। এছাড়াও ‘পর্বতের মুষিক প্রসব’ শিরোনামে ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া এবং ‘প্রথমা বৈশাখ’ নামে জাহাঙ্গীর হোসেনের দুটি প্রবন্ধ রয়েছে। উল্লেখ্য, ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া ও জাহাঙ্গীর হোসেনের প্রবন্ধ দু’টি ভিন্ন শিরোনামে হলেও উভয় প্রবন্ধের বিষয় ও বক্তব্য অনেকটা একই রকম। প্রবন্ধ দু’টিতে লেখকদ্বয় বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সম্মুখে আঙ্গুল তোলা রাষ্ট্রীয় মীরজাফর, ধর্মান্ধতা এবং সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের চিত্র দারুণভাবে এঁকেছেন। লেখক পীযূষ কান্তি বড়–য়া তার প্রবন্ধের একস্থানে লিখেছেন : ‘বাঙালী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বেতার আবিষ্কার করেও প্রচারণার ঘাটতিতে তার কৃতিত্ব লাভ করতে পারেননি অথচ রোহিঙ্গাদের জন্য মায়াকান্না কেঁদে বাঙালী আজ তার দেশের শান্তিকেই বন্ধক রেখেছে অশান্তি ও জঙ্গীবাদের কাছে।’ উল্লেখিত উপস্থাপনে ‘মায়াকান্না’ শব্দটি পাঠে কিছুটা ব্যথিত হয়েছি। কারণ আমরা জানি ১৯৭১ সালে ভারতবাসী আমাদের এককোটি বাঙালীকে অন্ন-বস্ত্র ও বাসস্থান দিয়ে সহযোগিতা করেছিল। বাঙালী জন্মগতভাবেই প্রতিবাদী ও বন্ধুপরায়ণ এবং এটাই বাঙালীর স্টাইল। আর রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে কথা বলা মায়াকান্না নয়, সেটি মানবিক দায়িত্ব ছিল। এ সংখ্যায় বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক শান্তনু কায়সারকে নিয়ে পাটওয়ারী লিটন এবং ‘আলোকিত মানুষ’ শিরোনামে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেনকে নিয়ে লেখা তছলিম হোসেন হাওলাদারের চমৎকার দুটি স্মৃতিকথা পাঠে পাঠক একটু ভিন্ন স্বাদ নিতে পারবেন। ‘ইসলামের শিক্ষা ও শান্তি’ , ‘শিক্ষা বনাম বাণিজ্য ’ এবং ‘ফিরে দেখা ৭১- গণহত্যা দিবস ও ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ’ শিরোনামে তিনটি নিবন্ধ লিখেছেন যথাক্রমে মাহমুদ আহমদ, এইচ টি ইমাম ও মোখলেছুর রহমান ভূইয়া। এ সংখ্যায় গল্প লিখেছেন কাদের পলাশ ও আশিক বিন রহিম। স্বল্প পরিসরে বিশ্ব সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র রবার্ট ব্রাউনিং এবং তার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে চমৎকার আলোকপাত করেছেন মাইনুল ইসলাম মানিক। অনপেক্ষর এ সংখ্যায় দুই বাংলার ১৯ কবির কবিতা স্থান পেয়েছে। এ সংখ্যার কবিরা হলেন যথাক্রমে আনোয়ার কামাল, গিরীশ গৈরিক, সিকতা কাজল, ইকবাল পারভেজ, সৌম্য সালেক, রোমেনা আফরোজ, শাহ্ বুলবুল, সুমন কুমার দত্ত, আলিজা হোসেন, রফিকুজ্জামান রনি, দেলোয়ার হোসেন, মোকলেসুর রহমান মুকুল, দুখাই মুহাম্মদ, ফয়সাল মৃধা, কাজী সাইফ, নুরুন্নাহার মুন্নী, হাবিবুর রহমান মোল্লা, মৃন্ময় চক্রবর্তী, সৌতিক হাতি ও রিয়া চক্রবর্তী। অনপেক্ষতে সদ্যসমাপ্ত ‘চাঁদপুর সাহিত্য সম্মেলন’ নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। আলোচ্য সংখ্যায় কিছু ছোট কাগজের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি প্রকাশিত হয়েছে। জায়গা থাকা সত্ত্বেও ছোট কাগজ পরিচিতিগুলোর সঙ্গে প্রচ্ছদ না থাকায় তা কিছুটা বেমানান ঠেকেছে। অল্পকিছু ভুল বানান আর অপেক্ষাকৃত দু’একটিু দুর্বল লেখা বাদে আলোচ্য সংখ্যাটি সুখপাঠ্য হয়েছে। অনপেক্ষর এ সংখ্যার প্রকাশকাল মে ২০১৭। মূল্য ধরা হয়েছে ৩০ টাকা।
×