ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আইনী পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আইনী পরামর্শ

প্রশ্ন : আমার আব্বা-আমার বড় আপার বিয়েতে যে টাকা যৌতুক দেওয়ার কথা ছিল তা দিতে পারেনি বলে আমার আপার শাশুড়ী, ননদ, স্বামী সব সময় গালিগালাজ এবং মারধর করত। কিন্তু আমার আব্বার কথা চিন্তা করে, আপা সবই নীরবে সহ্য করত। একদিন সকালবেলা আমার আপার শ্বশুরবাড়ি থেকে খবর আসে আমার আপা গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সঙ্গে সঙ্গে আপার বাড়িতে আমরা ছুটে যাই। গিয়ে দেখি আমার আপা আর সত্যিই এই পৃথিবীতে নেই। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি না, আপা আত্মহত্যা করেছে। তার গলায় পিঠে থোকা থোকা রক্তের দাগ। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে খবর দেই। পুলিশ আসছে শুনে আমার দুলাভাই হঠাৎ করে উধাও হয়ে যায় তারপর থেকে দুলাভাইকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। আমার আব্বা আমার আপার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা দেন। কিন্তু সেই থেকে এখনও দুলাভাই পলাতক এবং আমার আপার শ্বশুর, শাশুড়ি জামিনে আছেন। আমরা কি আমার নিরীহ আপার হত্যার ন্যায় বিচার পাব? জিনাত রেহানা, ঢাকা উত্তর : আপনার বোনের মৃত্যু যদি হত্যা হয়ে থাকে, তাহলে ন্যায়বিচার পেতে হলে কতকগুলো বিষয়ের ওপর সর্বপ্রথম দৃষ্টি দিতে হবে, এজাহার ঠিকমতো লেখা হয়েছে কিনা? ময়নাতদন্ত যথাযথ হয়েছে কিনা এবং চাজর্শিট কি দিয়েছে এবং আপনারা যথাযথ সাক্ষী পেয়েছেন কিনা? এগুলো যদি সব কিছু ঠিক থাকে, আর আদালতের নিকট সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যদি প্রমাণিত হয় আপনার দুলাভাই আপনার বোনকে হত্যা করেছে তাহলে সে পালিয়ে থাকলেও বিচারে তার সাজা হয়ে যাবে এবং যে দিন সে ধরা পড়বে সেদিন থেকে তার সাজা কার্যকর হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ধারা ১১তে যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর শাস্তি যদি কোন নারীর স্বামী অথবা স্বামীর পিতা, মাতা, অভিভাবক, আত্মীয় বা স্বামীর পক্ষে অন্য কোন ব্যক্তি যৌতুকের জন্য উক্ত নারীর মৃত্যু ঘটান বা মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টা করেন, কিংবা উক্ত নারীকে মারাত্মক জখম করেন, বা সাধারণ জখম করেন, তা হলে উক্ত স্বামী, স্বামীর পিতা, মাতা অভিভাবক বা ব্যক্তি। ক) মৃত্যু ঘটানোর জন্য মৃত্যুদ- এবং মৃত্যু ঘটানোর চেষ্টার জন্য যাবজ্জীবন কারাদ-ে দ-নীয় হইবেন এবং উভয় ক্ষেত্রে উক্ত দ-ের অতিরিক্ত অর্থদ-ে দ-নীয় হইবেন। খ) মারাত্মক জখম করার জন্য যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ-ে অথবা অনধিক ১২ বছর অথবা অন্যুন পাঁচ বছর সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হইবেন এবং উক্ত দ-ের অতিরিক্ত অর্থদ-ে দ-নীয় হইবেন। গ) সাধারণ জখম- করার জন্য অনধিক তিন বছর কিন্তু অন্যুন এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন এবং উক্ত দ-ের অতিরিক্ত অর্থ দণ্ডে ও দণ্ডনীয় হইবেন। তাই আপনার বোনের মৃত্যু যদি যৌতুকের জন্য সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণিত হয়, তাহলে আপনার দুলাভাই যদি সত্যিই যৌতুকের জন্য তাকে হত্যা করে তাহলে বিচারে তার অবশ্য মৃত্যুদ- হবে এবং আপনার দুলাভাইয়ের পিতা-মাতা যদি জড়িত থাকে, তা যেভাবে প্রমাণিত হবে সেই অনুযায়ী তারা শাস্তি পাবেন। যৌতুকের জন্য মৃত্যু ঘটানোর একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
×