ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপন নাথ

নিসর্গেই মিশে আছেন

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নিসর্গেই মিশে আছেন

দ্বিজেন শর্মা (১৯২৯-২০১৭) অসামান্য, তুলনারহিত একজন প্রকৃতিসাধক। প্রকৃতির কোলে জীবনকে বিকশিত করেছেন এবং প্রকৃতি বন্দনায় নিরবচ্ছিন্ন থেকে মৃত্যুবরণ করেন গত ১৫ সেপ্টেম্বর। প্রকৃতির ভুবনে পরিব্রাজক ছিলেন দ্বিজেন শর্মা। ফলে, তাঁকে সহজেই চিহ্নিত করা যায় তিনি কে এবং কী কাজ করেছেন। তাঁকে বিভিন্ন অভিধায় বিশেষায়িত করা হয়েছে। যেমন : প্রকৃতিপুত্র, নিসর্গবান্ধব, নিসর্গসখা ইত্যাদি। প্রকৃতি-পরিবেশ আর শুভবোধ নিয়ে তিনি লেখালেখি করেছেন ও কথা বলেছেন সারাজীবন। নাগরিক পরিবেশে অধিবাস সত্ত্বেও মনে-মননে নিসর্গ ধারণ, তাঁর বেড়ে ওঠা ও কর্মপরিধির বিস্তার। দ্বিজেন শর্মা জন্মগ্রহণ করেছেন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামে। তিনি লেখাপড়া করেছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়লেখা পিসি হাইস্কুল ও করিমগঞ্জ (অসম) পাবলিক হাইস্কুল, আগরতলা মহারাজা বীরবিক্রম কলেজ, কলকাতা সিটি কলেজ এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে। এ থেকে বোঝা যায় তাঁর মানস গঠন ও পরিভ্রমণের ভিত্তি। শিক্ষকতা করেছেন বরিশাল বিএম কলেজ ও ঢাকার নটর ডেম কলেজে। ১৯৭৪ সালে মস্কোর প্রগতি প্রকাশনে অনুবাদক হিসেবে যোগদান করেন। এর বাইরে তাঁর লেখালেখির পরিধি উল্লেখযোগ্য ও বৈচিত্র্যময়। তাঁর রচনাপঞ্জি হলো : শ্যামলী নিসর্গ (১৯৮০), সপুষ্পক উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস (১৯৮০), ফুলগুলো যেন কথা (১৯৮৮), মমদুঃখের সাধন (১৯৯৪), গহন কোন বনের ধাওে (১৯৯৪), চার্লস ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি (১৯৯৭), সমাজতন্ত্রে বসবাস (১৯৯৯), গাছের কথা ফুলের কথা (১৯৯৯), সতীর্থ বলয়ে ডারউইন (১৯৯৯), ডারউইন : বিগলযাত্রীর ভ্রমণকথা (১৯৯৯), নিসর্গ, নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা (২০০০), জীবনের শেষ নেই (২০০০), বাংলার বৃক্ষ (২০০১), বিজ্ঞান ও শিক্ষা : দায়বদ্ধতার নিরিখ (২০০৩), হিমালয়ের উদ্ভিদরাজ্যে ডালটন হুকার (২০০৪), এমি নামের দুরন্ত মেয়েটি (২০০৫), কুরচি তোমার লাগি (২০০৭), আমার একাত্তর ও অন্যান্য (২০০৮), প্রকৃতিমঙ্গল (২০০৯), প্রকৃতিসমগ্র ১ (২০১৩), প্রকৃতিসমগ্র ২ (২০১৩), প্রকৃতিসমগ্র ৩ (২০১৫), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০১৪), চার্লস ডারউইন : দ্বিশতজন্মবার্ষিকী শ্রদ্ধার্ঘ্য (২০১৪), গাছ (২০১৫)। সম্পাদনা ও অনুবাদ করেছেন পঞ্চাশের অধিক গ্রন্থ ও পুস্তিকা। এ ছাড়াও এশিয়াটিক সোসাইটির বাংলাপিডিয়ার সম্পাদক এবং উদ্ভিদ ও প্রাণি জ্ঞানকোষ প্রকল্পের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, একুশে পদকসহ ১৩টি পদক। পারিবারিক ঐতিহ্যসূত্রেই তিনি গ্রন্থপাঠ ও প্রকৃতিপ্রেমে প্রভাবিত হয়েছিলেন। মা মগ্নময়ী ছিলেন একজন বোদ্ধা পাঠক। যিনি স্বল্পশিক্ষিত হয়েও রামায়ণ, মহাভারত এবং উপন্যাস পাঠ করতেন। তাঁর কবি পিতা চন্দ্রকান্ত শর্মার হাতে লেখা পা-ুলিপির অংশবিশেষ দেখার সুযোগ হয়েছিল। এর অধিকাংশই একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পুড়ে যায়। কবি চন্দ্রকান্ত শর্মার কয়েকটি কবিতা মীজানুর রহমান সম্পাদিত ‘মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। সেই সময় তাঁর বাবা কলকাতা থেকে বিখ্যাত পত্রিকা ও বই সংগ্রহ করতেন। বাবার ব্যক্তিগত পাঠাগারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য পাঠ করেছেন। তাঁর মনোজগত সাহিত্যের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। আমরা পরবর্তীতে তাঁর লেখায় এর স্বাক্ষর পেয়েছি। প্রসঙ্গত, তাঁর বড় ভাইও পিতার উত্তরাধিকারী হিসেবে কবিরাজি করেছেন আজীবন। কবিরাজির জন্য তাঁরা গ্রামের বাড়িতে ভেষজ উপাদানের উৎস হিসেবে বাগানবাড়ি তৈরি করেছিলেন। তাঁর বাড়ির কাছেই পাথারিয়া পাহাড় ও মাধবকু- জলপ্রপাত। এ জলপ্রপাত ও মাধবঠাকুরের আশ্রমকে কেন্দ্র করে চৈত্রমাসে ঐতিহ্যবাহী বারুণী ¯œান আর মেলা অনুষ্ঠিত হতো, যা এখনও চলমান রয়েছে। মাধবকু- সংলগ্ন পাহাড় ছিল বন-জঙ্গলে পরিপূর্ণ এলাকা। ব্রিটিশ আমলে মাধবকু-ের টিলাগুলোতে চা-বাগান গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে মনিপুরি, খাসিসহ কয়েকটি নৃ-জনগোষ্ঠী বসতি গড়ে তোলে। দ্বিজেন শর্মার সঙ্গে কথা বললে তিনি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে মাধবকু-ের স্মৃতিচারণ করতেন। ঘন জঙ্গলে ঢাকা পুরো পাহাড়ই ছিল ভয় জাগানিয়া। কৈশোরে দ্বিজেন শর্মা দল বেধে ওই এলাকায় ঘুরেছেন। স্বভাবতই এ প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। ভিষক বাবার সঙ্গে যে পাহাড়ে খুঁজেছেন নাগেশ^র, মাকড়িজাল, কুরচিসহ নানা প্রজাতির গাছ ও লতাগুল্ম। যে পরিবেশ তাঁর স্মৃতিসত্তায় বহমান ছিল আজীবন। ওই প্রকৃতি যেন নিজ হাতে নির্মাণ করেছে দ্বিজেন শর্মার মৌলসত্তা। বস্তুত, জন্মগতভাবেই তিনি এ প্রকৃতির অবিচ্ছিন্ন অংশ। বাল্য-কৈশোরে যে পাঠশালা ও বিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়া করেছেন, সেগুলো ছিল প্রাকৃতিক পরিবেশের আবহে নির্মিত। আজীবন মুগ্ধতা যে ভূগোলে এমন কথা স্মরণে শফিক হাসানের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেছেন, ‘অবশ্যই জন্মভূমির নিসর্গে। আমি পাথারিয়া পাহাড় ও হাকালুকি হাওড়ের কোলে মানুষ হয়েছি। এ বয়সেও নিরন্তর সেইসব দিনের কথা মনে পড়ে যখন আমাদের পাহাড় ছিল গাছপালা ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর, হাওর ছিল স্বচ্ছ, সমৃদ্ধ ও শ্রীময়। এখন এগুলোর বড়ই দৈন্যদশা। এসব নিয়ে অনেক লিখেছি।’ সম্প্রতি মাধবকু-ে যাতায়াতের রাস্তা, রেস্টহাউস, পার্কিং ইত্যাদি তৈরি করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, বন উজাড় করে উন্নয়নের নামে যা করা হচ্ছে তা কোনভাবেই ওই বনের আদি বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলে না। লক্ষণীয়, বনের অধিবাসীরা বন ধ্বংস করে না। তাঁর কথায়, ‘মাধবছড়া বন-বিট আমাদের গ্রাম থেকে খুব দূরে নয়, কিশোরকাল থেকেই যাতায়াত, উঠেছি দূরবিনটিলায়ও, দেখা যায় হাকালুকি হাওড় পর্যন্ত, সে এক অপূর্ব নিসর্গশোভা। [...] এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে বনের পুনর্জন্ম ঘটত এবং একটি প্রাকৃতিক বন সৃষ্টি হতো। সেই সম্ভাবনা নাকচ করে কৃত্রিম বনায়নের উদ্যোগের মধ্যে আমরা বনকর্মীদের পুরনো মাইন্ডসেটের পুনরাবর্তনই দেখি।’ (কুরচি তোমার লাগি : পৃ ১৩৮-১৩৯) মাধবকু-ে পর্যটনের তৎপরতা ও পরিস্থিতি এবং এমন উন্নয়নের বিরোধিতা করেছেন। যে বনের অধিবাসীরা প্রকৃতিপূজারী। এই প্রকৃতির পাঠশালায় শিক্ষার্থী বলেই দ্বিজেন শর্মা হয়েছেন নিসর্গী। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি ঘটনা তিনি স্মরণ করেছেন। তাঁর বাল্যজীবনে সাঁওতাল শোভাবুড়োর কাছে শিখেছিলেনÑ ‘জীবের ওপর বেহুদা জুলুম বহুৎ পাপ’। প্রকৃতি ও জীবনের পরস্পর সম্পর্ক ও তাঁর উপলব্ধি বোঝাতে জীবনের উপান্তে এসে তিনি এ শোভা বুড়োর কথাগুলো স্মরণ করেছেন, ‘মানুষ জঙ্গলের দেবতাকে মান্য করে না, তার রাজ্য তারা দখল করে নিচ্ছে। ফল ভালো হবে না।’ [...] সামনে এসে দাঁড়ায় প্রকৃতির সন্তান এই শোভা বুড়ো, মাথায় মস্ত টাক, গায়ে ফতুয়া, পরনে হাফপ্যান্ট, যার কাছ থেকে প্রকৃতিকে ভালবাসতে শিখেছিলাম, প্রকৃতিকে জানতে শিখেছিলাম, কেননা ভাল না বাসলে তো কাউকেই জানা যায় না, আর সেই জানাটুকু আজও আমার জীবনের একটা অবলম্বন হয়ে আছে।’ ( প্রকৃতিসমগ্র ৩ : পৃ. ১৮১-৮২) একবার নেত্রকোনা থেকে সুনামগঞ্জ গেছেন ভ্রমণ ও শৈবাল সংগ্রহে। হাওড়ে সাক্ষাত ঘটে এক স্বশিক্ষিত, অংশত অপ্রকৃতস্থ, কিন্তু পাখিপ্রেমী এমন ব্যক্তির সঙ্গে। যিনি স্বেচ্ছায় হাওরে পরিযায়ী পাখির জীবনরক্ষার কাজে নিয়োজিত। দ্বিজেন শর্মা বিস্মিত হয়েছেন ওই ব্যক্তির কথা শুনে- ‘বিলের এই পাখিগুলান কেমন সোন্দর, আমরার মেহমান, কত্ত দূর থাইকা আইছে, যাইব আরও দূরে, কত্ত রংবেরঙের পাখনা, কত রকমের ঢপ, দেখলে চোখ জুড়ায়।[...] আন্ধার রাইতে পাখি ধরার পাতা কাইটা রাখি, বন্দুকঅলা দেখলে বনে লুকাইয়া পটকা ফুটাইয়া হাঁসগুলোরে উড়াইয়া দেই।’ (প্রকৃতিসমগ্র ৩ : পৃ. ১৪২-৪৩) কত বিচিত্র উদাহরণ দিয়েছেন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে, যা কি না প্রকৃতির প্রতি ভালবাসায় প্রণোদিত করে। পৃথিবীর গভীরতর অসুখ-এ লিখেছেন, ‘প্রকৃতির ওপর বলাৎকাররত কারা এই লম্পট? করাতকল, ইটভাটার মালিকদের লোক? না, সরাসরি তারা কেউ নয়। এ হলো ঘনীভূত লোভের লোলজিহ্বা। আমি চিকো মেন্দিস নই। এই জিহ্বা টেনে ধরার মতো সাহস আমার নেই। অসহায় আমি ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি। খট খট আওয়াজ ক্রমে কফিনে পেরেক ঠোকার মতো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। এ কার কফিন? সম্ভবত আমাদের সকলের, গোটা মানবজাতির।’ (প্রকৃতিসমগ্র ২ : পৃ. ১০৬) তাঁর লিখনশৈলীর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য পাঠককে পাঠে নিবিষ্ট রাখে। বিজ্ঞানের বিষয়ও দুর্বোধ্য মনে হয় না। উল্লেখযোগ্য যে, দ্বিজেন শর্মা মস্কোতে অবস্থানকালে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বইয়ের অনুবাদ করেছেন। সেখানেই অনুবাদ করেছেন মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভারবর্ষের ইতিহাস (কোকা আন্তোনভা, গ্রিগোরি বোনগার্দ-লেভিন, গ্রিগোরি কতভ্স্কি) গ্রন্থ। বস্তুত, ভাষান্তরে তাঁকে যথার্থ পারিভাষিক শব্দ সৃষ্টি করতে হয়েছে। বিশেষত বিজ্ঞানবিষয়ক গ্রন্থ ও প্রবন্ধের ভাষান্তরে তিনি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। তিনি নিজেও মনে করতেন বিজ্ঞানবিষয়ক লেখা জনপ্রিয় করতে হলে বিষয়ানুগ ও সহজবোধ্য ভাষা তৈরি করতে হবে। এ সূত্রে তিনি নিজস্ব ভাষারীতি নির্মাণে সচেষ্ট ছিলেন। মস্কোতে যাবার পর তিনি প্রথমেই অনুবাদ করেছেন Ñ গরশযধরষ ঘবংঃঁৎশয -এর ঞযব জধপবং ড়ভ গধহশরহফ. গ্রন্থ। বাংলায় নাম দিয়েছিলেন মানব সমাজ : জাতি প্রজাতি প্রগতি। এ গ্রন্থের গদ্যরীতি পাঠ করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে জনৈক লেখক তাঁর কাছে চিঠি লিখেছিলেনÑ ‘প্রিয় মহাশয়, সুন্দর প্রচ্ছদ দেখে বইটি কিনলাম, ভেতরে গিয়ে দেখি এতো সুধীনদত্তীয় গদ্যে লেখা। মহাশয়কে জিজ্ঞাসা করি এটা কি সাধারণ পাঠকের জন্য লিখা না কি বিশেষ গবেষকদের জন্য।’ দ্বিজেন শর্মা এর উত্তরে লিখেছিলেন, ‘আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আমি আমার ছাত্রদের জন্য লিখেছি। এ রকম গদ্যভাষায় বিজ্ঞান, দর্শন ও নৃতত্ত্বের পাঠ্যবই লেখা উচিৎ বলে আমি মনে করি। বিজ্ঞান, দর্শনের বই করতে গেলে ওই ভাষা লাগবে। এখন বাজারে যেসব বই পাওয়া যায় এগুলো টেকস্ট নয়, নোট বই। আমরা কি এখন বই লিখছি? কোনও বই হলো না, শ্রেষ্ঠ বইগুলো অনুবাদ হওয়ার কথা ছিল, হলো না। শিক্ষক ও পাঠ্যবই জোর করে বানানো যায় না।’ (লেখক- গৃহীত সাক্ষাতকার) প্রকৃতি ও সাহিত্যে তিনি ছিলেন সমানুপাতিক নিষ্ঠাবান। বিশেষত, রবীন্দ্রসাহিত্যের নিষ্ঠাবান পাঠক ছিলেন দ্বিজেন শর্মা। ফলে, তাঁর বিভিন্ন লেখায় লক্ষ্য করি রবীন্দ্রসাহিত্যের অনিবার্য প্রয়োগ। যেন রবীন্দ্রবলয়ে নির্মিত এক সত্তা। বিজ্ঞান ও প্রকৃতিবিষয়ক যা-ই হোক, বক্তব্যের সমর্থনে ও প্রাসঙ্গিকভাবেই রবীন্দ্রসাহিত্য থেকে বিভিন্ন অংশ উদ্ধৃত করেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথের তপোবন-এ উল্লিখিত প্রকৃতিসংলগ্ন মানবিক সমাজ কামনা করেছেন। তা না হলে মানুষ কলুষিত, ব্যাধিগ্রস্ত ও আত্মহন্তারক হতে বাধ্য। একেবারে উদ্ভিদবিষয়ক লেখাগুলোতে বার বার উল্লেখ করেছেন জীবনানন্দ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা বা গানের অংশবিশেষ। এতে তাঁর লক্ষ্য ছিলÑ মূল প্রসঙ্গ সুখপাঠ্য ও পাঠককে আকৃষ্ট করা। ফলে, প্রকৃতির নিরস ব্যাখ্যা তাঁর লিখনশৈলীতে হয়ে উঠেছে পাঠযোগ্য ও আকর্ষণীয়। বলা বাহুল্য যে, তাঁর দৃষ্টিতে প্রকৃতি ও সাহিত্যের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। প্রকৃতি যেমন নির্মুখ, সাহিত্যও তেমনি। ফলত, তাঁর প্রকৃতি বন্দনায় অনুষঙ্গী হলো সাহিত্য। বৃক্ষসন্ধান ও শ্রেণীবিন্যাসতত্ত্বের আলোকে শ্যামলী নিসর্গে তিনি তুলে ধরেছেন আমাদের চেনা অথচ অজানা বিভিন্ন বৃক্ষ ও লতাগুল্মের পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য। এ গ্রন্থে দ্বিজেন শর্মার অনন্যতা হলো প্রতিটি বৃক্ষের বিবরণের শুরুতেই খ্যাতিমান কবিদের কবিতাংশ ও ধ্রুপদী সাহিত্যের প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি। যেক্ষেত্রে বেতাল পঞ্চবিংশতি, চর্যাগীতিকা, মৈমনসিংহ গীতিকা, পূর্বশ্রীহট্টের লোকগীতি, অবহট্টঠ কবিতা ও বাউল গানের চরণ উদ্ধৃত করেছেন। এ ছাড়াও এনেছেন কালিদাস, বিদ্যাপতি, ভারতচন্দ্র, কবিকঙ্কন চ-ী, মুহম্মদ কবীর, যদুনন্দন দাস, হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, বিহারীলাল, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রমথনাথ বিশী, ফজলল করিম, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, জীবনানন্দ দাশ, জসীমউদ্দীন, মুহম্মদ জীবন, মোহাম্মদ আলী রাজা প্রমুখের কাব্যিক গদ্য ও কবিতা। যেমন : অশ^ত্থ-এর পরিচিতিজ্ঞাপনে বুদ্ধদেব বসুর লেখা : ‘জানালার কাছে দাঁড়ালেই তাদের দেখতে পেতুম। আমার মনের সমস্ত ছবির সঙ্গে অজান্তে জড়িয়ে গেছে তারা। চৈত্র মাসে তাদের নিচে কত যে শুকনো পাতা ঝরে পড়তো, হাওয়ায় সেগুলো ঘুরে ঘুরে পাড়াময় যেত ছড়িয়ে। বর্ষায় তাদের নতুন রূপ : জটবাঁধা প্রচ- ঝুনো শরীরে কচি পাতা ঠিক যেন মানাতো না। হাওয়ার দিনে অশান্ত অশ্রান্ত মর্মর; রোদে, দুপুরে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকালে মনে হতো প্রতিটি পাতা অসহ্য প্রাণশক্তিতে থর থর করে কাঁপছে; সন্ধ্যার শেষ সোনালী আলো গাছ দুটোর মাথায় কতদিন আটকে যেতে দেখেছি!’ (প্রকৃতিসমগ্র ১ : পৃ. ১৪৬) বলা বাহুল্য যে, বাঙালী লেখকদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জসীমউদ্দীন, বিভূতিভূষণ ও জীবনানন্দ দাশকে সবচেয়ে বেশি প্রকৃতিঘনিষ্ঠ লেখক হিসেবে তিনি শনাক্ত করেছেন। এ আলোকে তাঁর অসামান্য গবেষণা হলোÑ বিভূতিভূষণের গাছগাছালি : আরণ্যক (প্রকৃতিসমগ্র ২ : পৃ. ৯১)। আরণ্যক উপন্যাসে উল্লিখিত বৃক্ষসমূহের বৈজ্ঞানিক পরিচিতিসহ তিনি একটি তালিকা ও বিবরণ দিয়েছেন। এর গুরুত্ব প্রসঙ্গে দ্বিজেন শর্মা বলেছেন, বিশ^সভ্যতায় দু-টি বিষয়Ñ প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম অখ- বাস্তবতা ও পরস্পর অবিচ্ছিন্ন। তাঁর এ লিখনরীতি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, ‘প্রকৃতি ও সাহিত্যের সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। আর কোন কারণে নয়, শুধু বিষয়কে পাঠকের কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এটা কৌশল মাত্র।’ কেননা, সাধারণ পাঠকের কাছে প্রকৃতি-পরিবেশের গুরুত্ব বোঝাতেই তাঁর এমন স্বতন্ত্র ভাষাশৈলী। বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রত্যয় ও ব্যাখ্যা নিছক বিজ্ঞানের ভাষায় বলে সাধারণের কাছে পৌঁছানো যাবে না। প্রসঙ্গত, বিবর্তনবাদের প্রধান বিজ্ঞানী ডারউইন সম্পর্কে আমি সাধারণ ধারণা লাভ করি তাঁর সতীর্থ বলয়ে ডারউইন এবং ডারউইন ও প্রজাতির উৎপত্তি গ্রন্থদ্বয় পড়ে। উল্লেখযোগ্য যে, ডারউইন প্রসঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছে এক ধরনের অপপ্রচার রয়েছে। দ্বিজেন শর্মা খুব গভীরভাবে ডারউইনের লেখা পাঠ ও উপলব্ধি করেছেন এবং ওই অপপ্রচার অপনোদনের চেষ্টা করেছেন। মোকাররম হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাতকারে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর রাশিয়া যাবার অনেক উদ্দেশের মধ্যে একটি স্বপ্ন ছিল ডারউইনের জন্মস্থান ও কর্মস্থল পর্যবেক্ষণ। তিনি কেবল ডারউইনকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করেননি, বিজ্ঞানদর্শনকে আত্মস্থ করেছিলেন। সেক্ষেত্রে বিবর্তন সম্পর্কে তাঁর নিজস্ব ব্যাখ্যাও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘পাশ্চাত্যে বিজ্ঞানের নান্দনিকতা, বিজ্ঞানের সমাজতত্ত্ব, বিজ্ঞানের ইতিহাস পড়ানো হয়। আমরা নান্দনিকতা কী, বিজ্ঞানের ইতিহাসই পড়াই না। আমাদের এখানে সমাজবিপ্লব হয়নি, সমাজসংস্কার হয়নি। ফলে, সাবেকি চিন্তায় আপ্লুত থাকি। যখন ডারউইনের ঙৎরমরহ ড়ভ ঝঢ়বপরং বই প্রকাশিত হলো, তখন চার্চসহ অনেকেই এর বিরোধিতা করে। ডারউইন বিরোধী বিজ্ঞানীরাও চার্চের বিরোধিতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। তারপর তারা দেখল যে, বিবর্তন বিরোধিতা বিজ্ঞান বিরোধিতায় রূপ নিয়েছে। তাই তারা এ বিরোধিতা থেকে সরে আসে। ডারউইন বাদ দিয়ে এখন আমাদের পড়ানো হচ্ছে জীবপ্রযুক্তি। এটা তো ডারউইনবাদের ফলিত রূপ। আরও উন্নত। তাহলে ডারউইনকে বাদ দিবে কেন? জি¦নপ্রযুক্তি ব্যবহার করছে, এটা আরও প্রগতিশীল। তাহলে বিরোধিতা কেন?’ তিনি এ বিবর্তনবাদকে সভ্যতার পরিবর্তনের নিরিখে, ধাপে ধাপে বিকশিত হওয়া ধারণাপুঞ্জের আলোকে বিশ্লেষণ করেন। ডারউইনের কথাগুলো নিছক তত্ত্ব হিসেবে গ্রহণ করেননি। সমাজবিকাশের অনিবার্য তার সঙ্গে মিলিয়ে বিবেচনা করেছেন। তিনি বিশ্লেষণ করেন ডারউইনের সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি। বিজ্ঞানের পঠন-পাঠন আলোচনায় আমাদের বিজ্ঞান শিক্ষার দুর্বলতা ও যোগ্যতার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বিবেচনায় বিজ্ঞান ও সমাজের কল্যাণসাধনা একসূত্রে গাঁথা। বিজ্ঞানশিক্ষায় মনোজগতে প্রচলিত ধারণাশ্রয়ী যান্ত্রিকচর্চাকে তিনি সমর্থন করেননি। দ্বিজেন শর্মা মনে করেন, সমাজের অগ্রসরতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানমনস্কতা পরস্পর সম্পর্কিত। ‘অনুন্নত দেশে বিজ্ঞানের প্রসার বস্তুত উৎপাদিকা শক্তির বিকাশ, একটি প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ও দেশ গঠনে সব শ্রেণীর আত্মনিয়োগের ওপরই নির্ভরশীল। যতদিন এ পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত না হবে ততোদিন আমাদের বিজ্ঞান ফুটপাত্রে জল ঢেলে তৃষ্ণা মেটাবার ব্যর্থ দুর্ভাগ্য থেকে মুক্তি হবে না।’ উল্লেখযোগ্য যে, তরুণ বয়স থেকেই তিনি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি ও সমাজ পরিবর্তনের রাজনীতিতে নিষ্ঠাবান ছিলেন। আজীবন সে ধারাই তিনি লালন করেছেন। ১৯৮৯-এর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের ভাঙনে দেশে দেশে সমাজতন্ত্রী রাজনীতিতে অস্থিরতা দেখা দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইউরোপের বাস্তবতাকে অনেকেই ‘সমাজতন্ত্রের পতন’ বলে চিহ্নিত করেন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে অনেকেই বামপন্থা ছেড়ে পুঁজিবাদী রাজনীতিতে আশ্রিত হন। সোভিয়েত রাষ্ট্র কাঠামোর ভাঙন ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তাঁর কাছে অনেকবারই জানেতে চেয়েছি। শেষকথায় তিনি কার্ল মার্কস ও লেনিনের ওপর আস্থা হারাননি। তাঁর বিবেচনায় পাশ্চাত্যের পুঁজির অবাধ প্রবেশ, ব্যক্তি মালিকানার প্রতিষ্ঠা সোভিয়েত সমাজব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে আন্দোলিত করে। ফলে, সেখানে সামাজিক নিরাপত্তাও ভেঙে পড়ে। এ নিয়ে তাঁর অভিজ্ঞতা লিখেছেন সমাজতন্ত্রে বসবাস গ্রন্থে। তিনি মনে করেন বিশ^-পুঁজিবাদের উত্থান রোধ করা যাবে না। বিশ^ায়ন ও বাজার অর্থনীতির কারণে বিশ^রাজনীতির পরিবর্তন হয়েছে। সেক্ষেত্রে সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বিচ্যুতি ও ভাঙন তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। ওই প্রেক্ষিতে মানুষের অধিকার, রাজনীতি ও সমাজরূপান্তরের প্রাসঙ্গিকতা বিষয়ে তাঁর অভিমতÑ কোন ব্যবস্থাই নির্দিষ্ট হতে পারে না। রাজনীতি ও সমাজ বিশ্লেষণে তিনি বিষয় হিসেবে প্রকৃতির বিপর্যয়কে যুক্ত করে নিয়েছেন। তাঁর আশঙ্কা হলো, যেক্ষেত্রে মানবজাতির অস্তিত্ব সংকটাপন্ন সেক্ষেত্রে পুঁজিবাদ আর সমাজতন্ত্র দিয়ে কী হবে। আপাত তিনি সমাধান দিয়েছেন যেভাবে, ‘এখন দুই ব্যবস্থার মধ্যে একটা ভঁংরড়হ দরকার। পুঁজিবাদের বাজার উৎপাদন ও ব্যবস্থা এবং সমাজবাদের বণ্টনব্যবস্থা। পুঁজির বাজার ব্যবস্থা, সঞ্চয়, আবার পুঁজি বেড়ে গেলে তো ব্যক্তির ক্ষমতা ও মালিকানার শক্তি বেড়ে যাবে। সুতরাং, দ্ইু ব্যবস্থার মধ্যে কীভাবে ভঁংরড়হ করা যায়, তা ভাবা হচ্ছে।’ প্রসঙ্গত, তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের উন্নয়ন ভাবনার একটি সমন্বয় চিন্তা করেছেন। তিনি পরিবেশ, রাজনীতি ও মানবকল্যাণের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বিবেচনা করেন। তিনি মনে করেন, প্রকৃতিকে জয় ও নিয়ন্ত্রণ করছে মানুষ। তবে প্রকৃতির উপাদানের মাধ্যমেই মানুষের বেঁচে থাকা। কিন্তু এ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষ ভালবাসার সম্পর্ক তৈরি করেনি। তা হয়ে উঠেছে সাংঘর্ষিক। টেকসই উন্নয়নের প্রচার করা হচ্ছে। আমরা সকলেই জানি যে, জনসংখ্যার বৃদ্ধি, শিল্পায়ন ও পুঁজির অবাধ প্রবাহে পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। শিল্পায়ন ও মানব অস্তিত্বের কল্যাণ কিভাবে হতে পারেÑ এ সম্পর্কে দ্বিজেন শর্মার কথার সারার্থ হলো : শিল্পায়নে মানুষের অস্থিরতা থামানো যাবে না। শিল্পায়ন বন্ধ হলে দুনিয়া অচল হয়ে যাবে। উন্নয়নের পূর্বশর্তই হলো শিল্পায়ন। এক্ষেত্রে অপরিকল্পিত এ উন্নয়ন বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের ব্যবধান তৈরি হয়েছে। সভ্যতা মানুষকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে খাঁচায় বন্দী করে রেখেছে এবং তিনটি বিষয়Ñ ঝঢ়ধপব, খরমযঃ, ডরহফড়ি থেকে বঞ্চিত করেছে।’ এবং ‘বন মানুষ সৃষ্টি করে না। বন মহাকালের সৃষ্টি। মানুষের যে কোনো হস্তক্ষেপ তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’ আমাদের দেশে প্রতিদিন কৃষিজমি কমছে আর প্রকৃতির ওপর নিয়ন্ত্রণহীন চাপ বাড়ছে। সমানতালে শিল্প নির্মাণ ও উন্নয়নের নামে বেড়েই চলেছে পরিবেশদূষণ। এক্ষেত্রে তাঁর প্রশ্ন হলো Ñ‘এর বপড়ষড়মরপধষ ঢ়ৎরপব টা কে দেবে? তিনি মনে করেন, প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এখন সাংঘর্ষিক, যেখানে সমঝোতা হওয়ার কথা ছিল। তাঁর উদ্ভিদ উদ্যান ঐতিহ্য প্রবন্ধে হারিয়ে যাওয়া ঢাকার স্মৃতি উল্লেখ করে দুঃখের সঙ্গে বলেন, ‘শহরের আকাশচুম্বী প্রাসাদ, উজ্জ্বল রং ও কর্কশ শব্দপুঞ্জ, মানুষের ভিড়, দ্রুতগতি, কৃত্রিম আলো, নিয়ন্ত্রিত উত্তাপ ইত্যাদি অজস্র ভালমন্দের ভিড়ে স্বাচ্ছন্দ্য ও হতাশায় দোদুল্যমান আজ মানুষের ত্রিশঙ্কু অস্তিত্ব। প্রকৃতির ওপর বিজয় অর্জনের গৌরব সর্বস্তরের মানুষকে কতদূর স্পর্শ করেছে বলা কঠিন। কিন্তু স্বাভাবিক পরিবেশ থেকে আত্যন্তিক কৃত্রিমতার ভিড়ে এসে অতীত অপেক্ষা সে কম অসহায় নয়। আলোক্সি ক্যারলের ভাষায় বর্তমান সভ্যতা আমাদের স্বভাবের স্বীকৃতি নয়, এ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের খেয়াল, মানুষের ক্ষুধা ও অভ্যাস, তার মতবাদ ও আকাক্সক্ষার সৃষ্টি। আমাদের আকৃতি ও আয়তনের সঙ্গে এ একান্তই বেখাপ।’ (নিসর্গ, নির্মাণ ও নান্দনিক ভাবনা : পৃ. ২১) নিসর্গের মতোই সরল ও নির্জন জীবন যাপন করেছেন তিনি। মফিদুল হক মূল্যায়ন করেছেন যেভাবে, ‘তাঁর অবলম্বন হৃদয় ও মনন, মননের চর্চায় তার পরিবর্তনময়তার বিরাম নেই, আর হৃদয়বৃত্তিতে তিনি সর্বত্র সতত অপরিবর্তনীয়, একইভাবে উদার ও ভালবাসায় আপ্লুত। তাই তো দ্বিজেন শর্মা থাকতে পারেন বৃক্ষসম চিরসবুজ।’ আমরা মনে করি তিনি আপন বৈশিষ্ট্যে তাঁর তুলনার উপমান ও উপমেয়। জয়তু দ্বিজেন শর্মা!
×