ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সাবিহা বিনতে সুফিয়ান

পূজার চিরন্তন ফ্যাশন শাড়ি

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পূজার চিরন্তন ফ্যাশন শাড়ি

বাঙালীর সার্বজনীন উৎসব দুর্গাপূজা। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালীর উৎসবের কেন্দ্র হয়ে ওঠে পূজা মণ্ডপগুলো। তাই এই উৎসব উদযাপনে সাজ পোশাকের প্রতি সবারই থাকে আলাদা নজর। পূজার পোশাক শাড়ি নিয়ে এবারের আয়োজন। মা দুর্গাকে রূপসীর সাজে সাজাতে চান কারিগররা। যেন দেবীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ভক্তরা তাকে প্রাণভরে ভক্তি করে। রূপে দুর্গার প্রতিনিধিত্ব করতে পারে এমন তুলনা খুঁজে পাওয়া মুশকিল। মোটা টানা টানা কাজল, লাল টুকটুকে ঠোঁট, আলতো ব্লকের ছোঁয়া, মাথায় আধখানা চাঁদ, মুখ পূর্ণচন্দ্রের মতো এরকম দুর্গা যেকোন নারীর কাছেই ঈর্ষণীয় বৈকি! এই সাজ যেন শাশ্বত ও চিরচেনা। সবসময়ের সাজের চেয়ে একটু যেন ভিন্ন হয় পূজার সাজ। পূজার আমেজ ধরা পড়ে সাজে। পূজার সাজ হতে পারে দুই রকম। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে সাজা হয় নিজের পছন্দমতো। অন্য সময়ে যেমন পোশাকে, যেভাবে সাজা হয় সে রকমই চলে এ কয়েক দিন। কিন্তু দশমীর দিনটার কথা আলাদা। এদিন সবাই চায় পূজার আমেজে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে। দশমীর দিন যে শাড়িটা পরা হয় তার পাড়টা হতে পারে বাহারি। জমিন সাদা বা লাল রঙের হতে পারে। শাড়িতে এবার পাড়ে লেইস, আলগা পাড়, ব্লক, চুমকি দিয়ে কাজ করা হয়েছে। পূজার শাড়িতে চুমকির কাজটা বেশ ভাল লাগে। লাল-সাদা ঢাকাই জামদানি পূজার দিনে পরলে চমৎকার দেখায়। এ ছাড়া লাল পেড়ে গরদের আবেদন চিরন্তন। মসলিন বা সিল্কের শাড়িও পরা যেতে পারে। শাড়িতে কম কাজ থাকলেও ব্লাউজটা হতে পারে বাহারি। লম্বা হাতার, কুঁচি দেয়া ব্লাউজ পরলে ভাল দেখাবে। ঘটিহাতাও চমৎকার লাগবে। এর সঙ্গে গহনাটাও হওয়া চাই মানানসই। সোনার গহনা এখন তেমন পরা হয় না। এর বদলে এ্যান্টিক ধাঁচের গহনা ভালই দেখাবে। দুই হাত ভরে পরা যায় কাচের চুড়ি। পূজার সাজের সঙ্গে চুলে তাজা ফুল থাকা চাই-ই। খোলা চুলে কানের পাশে গুঁজে দিতে পারেন যেকোন তাজা ফুল। আর খোঁপায়ও তাজা ফুলের মালা জড়িয়ে নিতে পারেন। মণ্ডপে মণ্ডপে লালপেড়ে গরদের শাড়ি আর সাদা ধুতি-পাঞ্জাবিই আবহমান বাংলার দুর্গাপূজার পোশাকের বৈশিষ্ট্য। তা সে জমিদার বাড়ির পূজাই হোক বা বারোয়ারি। অনেক সময় গরদের শাড়ির পাশাপাশি তসর, তাতে বোনা সুতি শাড়ি আর এ বাংলায় যেমন জামদানি, তেমনি ও বাংলায় বালুচরিও দেখা গেছে। তবে অবশ্যই অফ হোয়াইটের সঙ্গে লাল। পূজার চিরন্তন এ রঙে প্রতীয়মান হয় আশ্চর্য গাম্ভীর্য আর পরম পবিত্রতা। জমিদারদের সময়ে দুর্গার শৃঙ্গে ব্যবহার হতো আসল গহনা। তবে যারা যে রকম খুশি সে রকমই সাজিয়েছেন দেবীকে। তারা বিশ্বাস করতেন মা তাদের আরও দেবেন। এক শরতে দেবীকে যে গহনা পরানো হতো তা অনেকে পরাতেন পরের শরতেও, সেই সব দিন ফুরিয়ে গেছে আজ। শ্রদ্ধা ও ভক্তি সবই অটুট আছে কিন্তু নিরাপত্তার কথা ভেবে বদলে গেছে দুর্গার শৃঙ্গার ধরন। আসল গহনার জায়গায় স্থান পেয়েছে কারুকাজ করা শোলার গহনা। নখ, পায়েল, বিছা, চুড়ি, গলার হার সবই বানানো হয় শোলা দিয়ে; তবে আসল গহনা যে একেবারেই ব্যবহার হয় না, তা নয়। কিন্তু সময় তো আর বসে থাকে না। তাই অনেক কিছুর মতোই পূজার ফ্যাশনকেও প্রভাবিত করেছে সময়। ফলে মাত্র দশকতিনেক আগেও যে ধুতি ছিল ওৎপ্রোত, সেই ধুতির জায়গা নিয়েছে পাজামা বা আরও এগিয়ে বললে জিন্স। অন্যদিকে শাড়ির জায়গায় অনেকদিন আগেই প্রবেশাধিকার পেয়েছে সালোয়ার-কামিজ বা চুড়িদার কামিজ। এমনকি জিন্সও ব্রাত্য নেই। ফলে কোন মণ্ডপে জিন্স-পাঞ্জাবি বা জিন্স-ফতুয়া পরা তরুণ আর জিন্স-কুর্তিতে কোন তরুণীকে দেখলে আজ আর আমরা অবাক হই না। কারণ সমসময়ে থাকাই তো ফ্যাশন। তাই সংযোজন আর বিয়োজনকে নিয়েই এগিয়ে চলেছে পূজার ফ্যাশনও। আমাদের ফ্যাশন হাউসগুলো নান্দনিক ডিজাইনের পূজার পোশাক দিয়ে সাজিয়েছে তাদের আউটলেট। আপনি পূজার দিনের জন্য পছন্দের পোশাক কিনতে যেতে পারেন আড়ং, অঞ্জন’স, কে ক্র্যাফট, বিবিআনা, নগরদোলা, বাংলারমেলাসহ অন্য ফ্যাশন হাউসগুলোতে। পূজার পোশাক মানেই সাদা-লালপেড়ে শাড়ি। আর সাদা হলো পবিত্রতা ও শান্তির প্রতীক। এই দুুয়ের মিলে ফুটে ওঠে পূজার চিরন্তন রূপ। তাই উৎসবের রঙে নিজেকে সাজাতে পূজার বর্ণিল কালেকশন এনেছে এসব ফ্যাশন আউলেট। সিল্ক বা সুতি ফেব্রিকে থাকছে ব্লকপ্রিন্ট, এমব্রয়ডারির প্রাধান্য। পূজার প্রতিমাকে ডিজাইন মোটিফের অনুপ্রেরণা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্যাটার্ন বৈচিত্র্য থাকছে গতানুগতিক তারুণ্যনির্ভর। শাড়ির আঁচল, কামিজ বা কুর্তার নেক লাইন ও পাঞ্জাবির ক্যানভাসেও থাকছে স্বতন্ত্রতা। এবারের পূজোর কালেকশনে থাকছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, লং ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ ও শিশুদের পোশাক। উৎসবের ফ্যাশনে শুধু নতুনত্বই নয়, ঐতিহ্যের ছোঁয়া আছে বলেই উৎসবের সাজে সার্বজনীনতা খুঁজে পাওয়া যায়।
×