ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হকি স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটের আলো

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হকি স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটের আলো

রুমেল খান ॥ এশিয়া কাপ হকি আসর শুরু হতে আর খুব বেশি বাকি নেই। ৩২ বছর পর ঢাকায় আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এই আসর। পাঠক প্রশ্ন করতে পারেন, এতদিন এই আসরটি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়নি কেন? উত্তর- মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে কোন ফ্লাডলাইট ছিল না বলে। ১৯৮৫ সালে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে আসরটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, কেননা ওই স্টেডিয়ামে ছিল ফ্লাডলাইট। আন্তর্জাতিক এ টুর্নামেন্টের আয়োজক হবার জন্য বহুবছর ধরেই চেষ্টা করে আসছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন (বাহফে)। এজন্য আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশন বাংলাদেশকে শর্ত বেঁধে দিয়েছিল হকি স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইট স্থাপন করার। হকিপ্রেমীদের জন্য সুখবর- দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে সম্পন্ন হয়েছে ফ্লাডলাইট স্থাপনের কাজ। ইতোমধ্যেই পরীক্ষামূলকভাবে বৃহস্পতিবার রাতে প্রজ্বলিত করা হয়েছে ফ্লাডলাইট। বাহফে জানিয়েছে- আপাতত ফ্লাডলাইটে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। স্টেডিয়ামের ভেতরে মাঠের চার কোণায় বসেছে চারটি টাওয়ার, যেখানে দুই হাজার ওয়াটের ১২০টি লাইট বসানো হবে। লাক্সের মাত্রা ন্যূনতম ১৩০০। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ফ্লাডলাইট বসানোর দায়িত্ব দেয় ট্রান্সকম ইলেকট্রনিক্সকে। এ কাজে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয় প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা। এশিয়া কাপ হকি উপলক্ষে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা। সাভারের বিকেএসপিতে বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল চালিয়ে যাচ্ছে কঠোর অনুশীলন। মাঠের বাইরে চরম কঠোর ব্যস্ততায় সময় পার করছেন আয়োজকরা। চূড়ান্ত হয়ে গেছে টুর্নামেন্ট চলাকালীন আট দলের ভ্রমণ ও আবাসন ব্যবস্থাও। ৬ অক্টোবর চলে আসবে খেলা সম্প্রচারকারী স্টার স্পোর্টসের দল। ৮ অক্টোবর প্রথম দল হিসেবে ঢাকায় আসবে ভারত। খেলা শুরু হবে ১১ অক্টোবর থেকে। হকি স্টেডিয়ামের নীল টার্ফ ধুয়ে পরিষ্কার করার কাজ চলছে। ভিআইপি গ্যালারি আর প্রেসবক্স সংস্কারের কাজও চলছে জোরেশোরেই। একই অবস্থা ইলেকট্রনিক স্কোর বোর্ডেরও। স্কোর বোর্ডের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ইতোমধ্যেই চলে এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। জাতীয় হকি দলের ম্যানেজার এবং সাবেক জাতীয় তারকা হকি খেলোয়াড় রফিকুল ইসলাম কামাল বলেন, ‘এদিকটা একটু গুছিয়ে নিতে পারলেই ঢাকাতে নিয়ে আসা হবে জাতীয় দলকে। সুযোগ করে দেয়া হবে ফ্লাডলাইটে অনুশীলনেরও। বিশ্ব হকির কর্তাদের বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই সম্পন্ন হয়ে যাবে আশাকরি।’ মালয়েশিয়ার সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে মূল লড়াইয়ে নামার আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ পাচ্ছেন জিমি-চয়নরা। টুর্নামেন্ট শুরু হবার আগেই ঢাকায় আসছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। তাদের সঙ্গেই ম্যাচ দুটি খেলবে বাংলাদেশ হকি দল। এদিকে ৩০ সেপ্টেম্বর বেলা ১২টায় বিওএ অডিটরিয়ামে এশিয়া কাপ হকি উপলক্ষে নির্মিত টিভি প্রমোশনাল ও থিম সং উন্মোচন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। ১৯৮৫’র এশিয়া কাপে শক্তিশালী পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের গোলে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল স্বাগতিকদের। এরপরের ৩২ বছরে অনেক এগিয়ে গেছে প্রতিপক্ষরা। কিন্তু সাবেকরা বলছেন কঠিন চ্যালেঞ্জ জয়ের সামর্থ্য আছে জিমিদের সেক্ষেত্রে মাঠে করতে হবে সাধারণের চেয়েও বেশি কিছু। ১৯৮৫ আসরে ঘরের মাঠে প্রথম আবির্ভাবেই জাপান-ইরানকে চমকে দিয়েছিল বাংলাদেশ। দাপুটে পারফর্মেন্স বিস্মৃত হতে বেশি সময় নেননি হকির হর্তাকর্তারা। এরপর হকি টার্ফের জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০ বছর আর এশিয়া কাপের জন্য অপেক্ষাটা ৩২ বছরের। ঘরের মাঠে স্বাগতিকদের চমকে দিতে পারে প্রতিপক্ষের বাড়তি গতি। কৌশল নির্বাচন করতে হবে প্রতিপক্ষ অনুযায়ী তবে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সামনে ৪-৪-২ ফরমেশনকে যথাযথ মনে করছেন সাবেকরা। ৩২ বছরের অনভ্যাস তিন মাসের প্রস্তুতিতে সামলানো কঠিন। তবে লাল-সবুজের অনপ্রেরণায় কঠিন চ্যালেঞ্জ বাগে আনা অসম্ভব নয়। সাবেকরা বলছেন ঘরের মাঠে জিমিদের জন্য সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা হতে পারে দেশাত্মবোধই। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন ছাড়াও ঘরোয়া হকিতে আকর্ষণীয় টুর্নামেন্ট আয়োজন করার ইচ্ছা আছে বাহফের। ঠিক সময়ে ফ্লাডলাইট স্থাপন সম্ভব হলে নিয়মিত এ ধরনের আয়োজন করে দেশের হকিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব। সেই সঙ্গে ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক লীগ আয়োজনের পরিকল্পনাও দেখবে আলোর মুখ। বিশ্ব হকিতে নীল টার্ফে ফ্লাডলাইটের ঝলকানি। আর তাতেই স্টিকের জাদুতে খেলোয়াড়দের দুর্দান্ত লড়াই উপভোগে মশগুল গ্যালারির দর্শকরা। জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বাণিজ্যিকভাবেও হকি আজ বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে। পাশের দেশ ভারতই সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত। বিদেশের মাটিতে হকির লড়াইটা বেশ উপভোগ্য হলেও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে তা একেবারেই ভিন্ন। বাইরের দেশগুলো নীল টার্ফ, ফ্লাডলাইটসহ সব আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও বাংলাদেশ এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে। তবে অনেক আক্ষেপ আর অপেক্ষার কাঠখড় পুড়িয়ে অবশেষে সেই অভাব পূরণ হতে চলেছে।
×