মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সম্প্রতি সহিংসতায় আগুনে পুড়িয়ে দেয়া রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো দেশটির সরকার অধিগ্রহণ করতে চায় বলে বুধবার দেশটির একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন। নির্বিচার গণহত্যা ও সহিংতার শিকার রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ডেইলি সান ও আরব নিউজ।
রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় পুড়িয়ে দেয়া ভূমির দখল মিয়ানমার সরকার নেবে বলে জানিয়েছেন দেশটির একজন মন্ত্রী। রাখাইনের (সাবেক নাম আরাকান) রাজধানী সিটওয়েতে (্আকিয়াব) এক বৈঠকে সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আইয়ে বলেন, ‘আমাদের দেশের আইনানুযায়ী পুড়ে যাওয়া ভূমি সরকারের মালিকানায় যায়। সরকার সেসব জায়গা পুনর্গঠন করবে।’ দেশটিতে প্রচলিত একটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের বরাত দিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভূমি উন্নয়ন কাজ খুবই কার্যকর হবে।’ ওই আইন অনুযায়ী, যে কোন ধরনের দুর্যোগ এমনকি সংঘর্ষের কারণে কোন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার ওই এলাকার পুনঃউন্নয়ন কাজ তদারকি করবে। তবে তিনি মিয়ানমার সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা আসলে কী, সে বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেননি। সহিংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে দেশত্যাগ করা রোহিঙ্গা মুসলিমরা যদি দেশে ফিরে যায় তবে তাদের নিজ নিজ গ্রামে প্রবেশ এবং সম্পত্তির দখল নিতে দেয়া হবে কি-না, সে বিষয়েও কিছু জানাননি তিনি। ২৪ আগস্ট রাতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) রাখাইনে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনাঘাঁটিতে হামলা চালালে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন নিহত হওয়ার পর থেকে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দেয়া তথ্যানুযায়ী, রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে প্রায় ৪শ’টি রোহিঙ্গা গ্রামের অর্ধেকের বেশি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, যাদের অনেকের শরীরে গুলি বা পোড়া ক্ষত রয়েছে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মুখে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধদের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে। তারা জানায়, সেখানে তাদের হত্যা, ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হতে হচ্ছে। পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের বাড়িঘর। স্যাটেলাইট ইমেজেও রোহিঙ্গা গ্রামগুলো জ্বলতে দেখা গেছে। সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে যে সহিংস নির্যাতন ও নিপীড়ন চালাচ্ছে তাকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে মনে করে জাতিসংঘ। যদিও মিয়ানমার সরকারের দাবি, এআরএসএ সদস্যরা গ্রামগুলোতে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর আক্রমণ করছে এবং তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। যে কারণে রাখাইনে অর্ধেকের বেশি রোহিঙ্গা গ্রাম খালি হয়ে গেছে। ২৫ আগস্ট সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সহিংসতায় প্রায় ৫শ’ মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার, যাদের মধ্যে প্রায় ৪শ’ জনই এআরএসএ জঙ্গী বলে দাবি তাদের। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ সপ্তাহে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ তুলেছে। যদিও ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে আউং সান সুচি নেতৃত্বাধীন দেশটির সরকার। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো জানিয়েছে, শরণার্থীরা এখনও বাংলাদেশে প্রবেশ করছে, তবে আগের চেয়ে অনেক ধীরগতিতে। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফেলিপো গ্রান্ডি সম্প্রতি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে জেনেভায় বলেন, ‘ওদের (রোহিঙ্গাদের) আসলে কিছুই নেই।’ তিনি বলেন, ‘এ সঙ্কটের কারণ যে মিয়ানমার, এটি খুবই স্পষ্ট। তবে এর সমাধানও মিয়ানমারে।’ এ সমস্যার সমাধান না করা হলে ‘এ অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি’ বলেও তিনি সতর্ক করে দেন। গ্রান্ডি জানান, মিয়ানমার সরকারের পুনঃউন্নয়ন পরিকল্পনার বিষয়ে তার জানা নেই, তবে এ পরিকল্পনার ভেতর সব সম্প্রদায়কে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তিনি আরও বলেন, ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন না হলে সমস্যার মূল শনাক্ত ও সমাধান করা সম্ভব হবে না।’