ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চোর সন্দেহে কিশোর হত্যা

প্রকাশিত: ০৩:৪৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চোর সন্দেহে কিশোর হত্যা

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার চরশ্রীরামপুর গ্রামে ১৭ বছরের কিশোর সাগরকে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। ঘাতক আক্কাস আলী ও তার সহযোগীদের আটক করতে এখনও সক্ষম হয়নি পুলিশ। নিহত সাগরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে স্থানীয় মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের একটি পানির পাম্প চুরির। সাগরকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে আক্কাস আলী ও তার সহযোগীরা নির্মমভাবে মারধর করতে থাকে। অমানুষিক শারীরিক নির্যাতনে সাগর বার বার জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে সে পানি খেতে চাইলে তা দেয়া হয়নি। এক পর্যায় মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাটি এলাকাজুড়ে ভীষণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে সাগরের লাশ উদ্ধার করে। শোকে মূহ্যমান বাবা সিহাবউদ্দিন এমন নৃশংস হত্যার বিচার প্রার্থনা করেন। তিনি বলেন, ছেলে যদি সত্যিই কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে তাকে কেন আইনের হাতে তুলে দেয়া হলো না। প্রচলিত আইনেই তার ছেলের বিচার হলে এমন নিষ্ঠুর পরিণতি ঘটতে পারত না। এই হত্যাকা-ের পরপরই ঘাতক ও তার সহযোগীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নিহত সাগরের বাবা অভিযুক্তদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন। নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার অপসংস্কৃতি থেকে যে কবে বেরিয়ে আসতে পারবে সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ তা বোঝা মুশকিল। অপরাধের জন্য আইনী ব্যবস্থা আছে। তাকে তোয়াক্কা না করে কিংবা অপরাধের যথার্থতা যাচাই না করে কেউ কেউ যেভাবে নিজেরাই বিচারের ভার নিয়ে নেয় তা কোনভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। ২০১৫ সালের ৮ জুলাই সিলেটে ভ্যান চুরির অভিযোগে রাজন নামে এক কিশোরকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। বিচারিক আদালতে হত্যাকারীদের বিচারও সম্পন্ন হয়। এই ধরনের বর্বর হত্যাকা- কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অপরাধের সত্যতা কতখানি যাচাই করা হয়েছিল সেটা বড় কথা নয়, অপরাধী হলেও তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়াই ছিল সঙ্গত। আর কোন কিছু চুরির অপরাধে একেবারে মেরে ফেলে দেয়াটাও আইন বিরুদ্ধ তো বটেই, একই সঙ্গে পাশবিক ও নৃশংস ঘটনা। ক্রোধ আর হিংসায় উন্মত্ত হয়ে কেউ কেউ যেভাবে নারকীয় তা-বে নিজেকে সম্পৃক্ত করে সেটা সভ্যতা বিবর্জিত। তথ্য-প্রযুক্তির অগ্রগতির সুবর্ণ এই সময়ে কারও কারও এভাবে বর্বর যুগে ফিরে যাওয়া সত্যিই এক বেদনার। এ ধরনের অপরাধের আইনগত ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করা জরুরী। সাধারণ মানুষও তা প্রত্যাশা করে।
×