ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ মনোয়ারুল হক

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা বিষয় ॥ কৃষি শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৬:২২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা বিষয় ॥ কৃষি শিক্ষা

বি.এস.এস,বি-এড (১ম শ্রেণি) সিনিয়র শিক্ষক, কানকিরহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়, সেনবাগ, নোয়াখালী। পরীক্ষকঃ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা। সপ্তাহের সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা শিক্ষক বাতায়ন এটুআই, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। Email: [email protected] সুপ্রিয় শিক্ষার্থীরা, আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। তৃতীয় অধ্যায়ঃ কৃষি উপকরণ উদ্দীপকটি পড় এবং নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও। হালিম মিয়া তার জমিতে ধান লাগিয়েছে। সে জানে যে, অতিরিক্ত সেচ অর্থ ও পানির অপচয়। তাই সে কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে মাটিতে রসের অবস্থা বুঝে সেচ দেওয়ার কৌশল শিখে এসেছেন। তিনি ঠিক করেছেন পরবর্তী বছর থেকে তিনি পর্যায়ক্রমিক ভেজানো ও শুকানো পদ্ধতি ব্যবহার করবেন। ক. সেচ কাকে বলে? খ. চেক বেসিন ব্যবহার করা হয় কেন? গ. কৃষি কর্মকর্তার শিখিয়ে দেওয়া কৌশলটি ব্যাখ্যা কর। ঘ. পরবর্তী বছরে ধান চাষে হালিম মিয়ার সিদ্ধান্তটি মুল্যায়ন কর। ক. ফসল উৎপাদনের সময় মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দিলে বাহির থেকে কৃত্রিম উপায়ে পানি সরবরাহের পদ্ধতিকে সেচ বলে। খ. প্লাবন সেচ পদ্ধতিতে জমিতে পানি নিয়ন্ত্রনের কোন সুযোগ থাকে না। এতে পানির যথেষ্ট অপচয় হয়। জমিকে ঢাল অনুযায়ি কয়েকটি ভাগে উঁচু আইল দ্বারা ভাগ করে পানি নিয়ন্ত্রনের পদ্ধতিকে চেক বেসিন বলে। পানির অপচয় রোধ করার জন্য চেক বেসিন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। গ. জমিতে প্রয়োজনীয় সময় সেচ দেওয়ার জন্য হালিম মিয়াকে কৃষি কর্মকর্তা মাটিতে রসের অবস্থা বুঝে সেচ দেওয়ার কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন। মাটিতে রসের অবস্থা বুঝে জমিতে সেচ দিতে হবে। “জমিতে রসের পরিমাণ জানার বিভিন্ন পদ্ধতি আছে” সহজ একটি পদ্ধতি হলো- হাতের সাহায্যে অনুভব করে মাটির রসের অবস্থা বুঝে সেচ দেওয়া। যে জমিতে সেচ দিতে হবে ঐ জমির একটি স্থানে গর্ত তৈরি করতে হবে। গর্তের গভীরতা ফসলের শিকড়ের গভীরতার তিন ভাগের দুই ভাগের সম পরিমাণ হবে। এবার গর্তের তলা থেকে মাটি তুলে হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিয়ে গোলাকার বল তৈরি করতে হবে। যদি মাটি শুকনা ও ধুলা, বল তৈরির সময় আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে গুঁড়ো হয়ে বের হয়ে যায় বা বল তৈরি হলেও তা ফেলে দিলে ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়, তাহলে জমিতে অতি সত্ত্বর সেচ দিতে হবে। মাতি হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিলে দলা হবে কিন্তু ফেলে দিলে দলা ভাঙ্গবেনা, এমন অবস্থায় ১-২ দিন পর জমিতে সেচ দিতে হবে। মাটি হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিলে ভিজা দলা তৈরি হবে, হাতের তলা ভিজে যাবে দলা ফেলে দিলে দলা ভাঙ্গবেনা, এ অবস্থায় ৩-৪ দিন পর পুনরায় মাটির রস পরীক্ষা করতে হবে। আর যদি মাটি কাদাময় হয়, হাতে চাপ দিলে কাদা মাটি আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসে, তালু ভিজে যায় কিন্তু পানি বেরিয়ে আসে না, এমতাবস্থায় সেচ দিতে হবে না। ৭ দিন পর জমি আবার পরীক্ষা করতে হবে। ঘ. ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্যশস্য। দেশের মোট জমির প্রায় ৭৫ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করা হয়। বোরো মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদিত হয়। আর এ মৌসম বৃষ্টিবিহীন থাকায় সবচেয়ে বেশি পানি সেচের প্রয়োজন হয়। প্রচিলিত সেচ পদ্ধতিতে ধানের জমিতে ১০-১৫ সে.মি.দাঁড়ানো পানি রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে ৩০০০-৫০০০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। যা প্রকৃত প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। বর্তমানে ধান চাষে পানি সাশ্রয়ী প্রযুক্তি হিসেবে পর্যায়ক্রমিক ভেজানো ও শুকানো পদ্ধতি জনপ্রিয় করা হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে সব সময় জমিতে দাঁড়ানো পানির প্রয়োজন নেই। জমিতে একটি পর্যবেক্ষণ নল স্থাপন করে সেচের সময় নির্ধারণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে পানি, জ্বালানিও শ্রমিক খরচ সাশ্রয় হয়। ৩০-৩৭ ভাগ সেচের পানি কম লাগে,২৯ ভাগ ডিজেল কম লাগে এবং ধানের ফলন ১২ ভাগ বেশি হয়। সর্বোপরি এটি একটি পরিবেশ বান্ধব পদ্ধতি। সুতরাং হালিম মিয়া পরবর্তী বছরে ধান চাষে যে সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন তা যুগোপযোগী এবং যথার্থ।
×