ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মলয় বিকাশ দেবনাথ

মঞ্চ থেকে পর্দায়

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মঞ্চ থেকে পর্দায়

অভিনয় যার পেশা, অভিনয়ই যার নেশা। তরুণ অভিনেতা আফজাল কবির ইতোমধ্যে অভিনয় দক্ষতা দিয়ে যিনি নিজের অবস্থান সুনিশ্চিত করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভকারী আফজাল আজ একজন বলিষ্ঠ অভিনেতা। বিভাগীয় পড়াশোনার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে মঞ্চে তার অভিনয়ের হাতে খড়ি। ড. ইস্রাফিল শাহীনের নির্দেশনায় শেক্সপিয়ারের ম্যাকবেথ নাটকে ক্যাপ্টেন ওয়ার্ন চরিত্রে নিজেকে প্রথম আবিষ্কার করেন। নাটকের প্রথম দৃশ্য ছিল এটি এবং তার অভিনয় জীবনও শুরু হয় এই চরিত্র দিয়ে। অভিনয়ের প্রতি তার প্রেমের সঞ্চালন ঘটে এই নাটক দিয়ে। তারপর শুরু হয় পথচলা। বিভিন্ন দৃশ্যে অভিনয়, অভিনয়ের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা, ব্যবহারিক কর্মকা- ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশোনা এবং বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষা সবই যেন একজন অভিনেতা হয়ে ওঠার চলমান প্রক্রিয়া। নাট্যকলা বিভাগে পড়াশোনার ধরন অন্য বিভাগ থেকে একটু আলাদা। সমস্ত কাজই গ্রুপভিত্তিক বলে এর সঙ্গে যুক্ত থাকার বিকল্প নেই। তিনিও নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে যার ফল আজ বর্তমান। মঞ্চে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ২০০৮ সালে টিএসসি অডিটরিয়ামে শামীম হাসানের নির্দেশনায় তারা শঙ্করের ‘কবি’ উপন্যাস অবলম্বনে কবি নাটকটি অন্যতম। এ নাটকে নিতাই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন আফজাল কবির। বর্ণনাত্মক ভঙ্গিমায় উপস্থাপিত নাটকটি ছিল দেশজ নাট্যধারার এক চমৎকার উদাহরণ। নাটকের মঞ্চ সজ্জায় পরিবর্তন এনে মঞ্চকে দর্শকের মাঝখানে বসানো হয় এবং চারদিকে দর্শকের বসার স্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল। দর্শনীর বিনিময়ে এই নাটকের প্রায় ১৮০০ দর্শক হয়েছিল যা বলা চলে মঞ্চ নাটকের জন্য একটি বিশেষ প্রাপ্তি। ওই দিন অনেকের মাঝে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য নাট্যকার প্রয়াত সেলিম আলদীন। এ ছাড়া শেক্সপিয়ারের টেমিং অব দ্য শ্রুর বাংলায় অনূদিত মুখরা রমণী বশীকরণ, সাইদুর রহমান লিপনের নির্দেশনায় কমলা রানীর সাগরদীঘিতে অভিনয় করেছিলেন। দেশের বাইরে ২০০৯ সালে ত্রিপুরাতে বুনোহাঁস নামক নাটকে অভিনয় করেন যা তাকে বিশেষভাবে সুখ্যাতি এনে দিয়েছিল। এ ছাড়া এনএসডির তত্ত্বাবধানে কলকাতায় বাংলাদেশের নাটক মঞ্চায়িত হয় সেখানে তিনি ডিজাইনিংয়ের কাজ করেছেন। স্নাতকোত্তরে ২য় স্থান অধিকারী আফজাল কবির প্রথম অডিশনের মাধ্যমে এয়ারটেল নিবেদিত টেলিফিল্ম ‘অরুণোদয়ের তরুণ দলে’ নাফিস নামক মূল চরিত্রে অভিনয় করেন। গাঁও প্রডাকশনের সামির আহমেদের নির্দেশায় এটিই ছিল তার প্রথম ছোট পর্দায় অভিনয়। তার বিপরীতে স্পর্শিয়ারও হাতে খড়ি হয়েছিল এই কাজের মধ্য দিয়ে। এ ছাড়া কাজী নজরুল ইসলামের জিনের বাদশা অবলম্বনে নির্মিত ফেরদৌস হাসান রানা নির্মিত ধারাবাহিক নাটক ‘চান বানুতে’ অভিনয় করেন। চ্যানেল নাইন এর সম্প্রচার করে। একটি বিষয় উল্লেখ করা খুব জরুরী যে আমাদের যাত্রাশিল্প আজ নেই বললেই চলে। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পকে ধরে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগ ও শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ড. ইস্রাফিল শাহীনের নির্দেশনায় যাত্রাপালা শাজাহান পরিবেশিত হয়েছিল। সেখানে আফজালের অভিনয় করার সুযোগ হয়েছিল। প্রখ্যাত নির্মাতা গিয়াস উদ্দীন সেলিম সেই যাত্রায় আফজালের অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে প্রস্তাব করেন তার সঙ্গে কাজ করতে। চ্যানেল ২৪-এ ‘রোদ’ নামক ধারাবাহিককে তার কাজ করা এরই প্রতিফলন। এ ছাড়া জুয়েল মাহমুদের ধারাবাহিক টাট্টু-ঘোড়াতেও তিনি অভিনয় করেন যা এনটিভি ও ইটিভিতে প্রচারিত হয়। এরপর তাকে বলা হয় একটি ভিন্নধর্মী নাটকে অভিনয় করতে এবং গল্পের সারসংক্ষেপও জানানো হয় যার মূল চরিত্রে তাকে অভিনয় করতে হবে। তিনি প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানালে দীপ্ত টিভির একজন উর্ধতন কর্মকর্তা তাকে ডেকে নিয়ে বলেন, আমরা সমস্ত কাজটিকে ভিন্ন আঙ্গিকে করতে চাই এবং এর জন্য ২ বছরের জন্য কিছু শিল্পীর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবে তবে শর্ত এ দু’বছর অন্য কোথাও কাজ করা যাবে না। অভিনেতা আঁচ করতে পারে এখানে অভিনয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কেননা দু’বছর ধরে চরিত্রের মধ্যে থাকাটা জরুরী আর জাতশিল্পী হিসেবে সমস্ত পরিকল্পনার অবসান ঘটিয়ে রাজি হয়ে পড়েন। এরই বাস্তবরূপ বাংলাদেশের দর্শকপ্রিয়তার শীর্ষে ওঠে আসা দীপ্ত টিভির ধারাবাহিক অপরাজিতা। ভারতীয় লেখিকা আশাপূর্ণা দেবীর ‘বালুচরি’ উপন্যাস অবলম্বনে ফিরোজ কবির ডলারের নির্দেশনায় ডাঃ অভিজিত চরিত্রে অভিনয় আজ সত্যিকারের অভিনেতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। অভিনয়পিপাসু আফজাল আজ একজন ছোট পর্দার তারকা।
×